টানা বর্ষণ আর ঢলে নদনদীর পানি বেড়ে রংপুর বিভাগের কয়েকটি জেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তবে বৃষ্টি কমায় বন্যা উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোয় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। সুরমার পানি ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে সুনামগঞ্জ পয়েন্টে এখনও বিপৎসীমার নিচে আছে।
কুড়িগ্রাম ও নাগেশ্বরী প্রতিনিধি জানান, গত কয়েক দিন ধরে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নামা ঢলে জেলার প্রধান প্রধান নদনদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। আজ সকালে কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরী পয়েন্টে দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদনদীর পানি বাড়ায় নিম্নাঞ্চলে অনেকের ভিটেবাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
পানি বাড়ায় নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের তেলানীপাড়া, বড়মানিপাড়া, ধনিটারী, অন্তাইপাড়, সেনপাড়া, পাটেশ্বরী গ্রাম, বোয়ালেরডারা, পৌরসভার পূর্ব সাঞ্জুয়ারভিটাসহ ১৫টি গ্রামের প্রায় তিন হাজার, কালীগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর, ঢেবঢেবী, কুমেদপুর, কাঠগিরি, নুনখাওয়া ইউনিয়নের গরুভাসা, বারোবিশ গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এ ছাড়া কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তার পানি বাড়ায় ৯ উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নের আরও প্রায় ১০ হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। বন্যার পানিতে অনেক চর প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া জেলার ৩২ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপৎসীমার কাছ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানকার যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্রায় ৮০০ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। মানুষ উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছেন। তলিয়ে গেছে সব ফসলি জমি। পানি বেড়ে এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভেঙে পড়েছে। খুব প্রয়োজনে মানুষ কলা গাছের ভেলা ও ছোট নৌকায় চলাচল করছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের বাসিন্দা নাদু শেখ বলেন, ‘দুই দিন থাকি পানি বাড়ির মধ্যে উঠছে। পরিবার নিয়ে খুব কষ্টে আছি। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাইনি।’ চিড়া খাওয়া চরের শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সামনে ঈদ, কীভাবে কী করব বুঝতে পারছি না। পানির স্রোত সব ভাসিয়ে নিয়েছে।’
নাগেশ্বরীতে অনেকের বাড়িঘরে পানি না উঠলেও বাড়ির চারপাশ ডুবে গেছে। এতে গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রনি বলেন, চরের ফলিমারী, চর লুছনী ও কুটি বামনডাঙ্গায় শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
জেলার রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের কর্মকর্তা তুহিন মিয়া জানান, কুড়িগ্রামে বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় ১৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরও কয়েক দিন টানা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরিফ জানান, ‘আমাদের ৫৪১ টন চাল, নগদ ১০ লাখ ২১ হাজার টাকা ও শুকনো খাবার মজুত রয়েছে। পাশাপাশি মানুষকে উদ্ধারের জন্য চারটি নৌকা ও আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত আছে।’
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, যাদুকাটা, পুরাতন সুরমাসহ অন্যান্য নদ নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার নিচে আছে। সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী-১ মামুন হাওলাদার জানান, উজানে এ সময় বৃষ্টিপাত হলে নদনদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করে। এবারও নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
পাউবো বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের সহকারী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম বড়ুয়া বলেন, ভারী বৃষ্টিপাতে উত্তরাঞ্চলের ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। তিস্তা নদীর পানি স্বল্প সময়ের জন্য ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে উত্তরাঞ্চলে মাঝারি বা তীব্র বন্যার আশঙ্কা নেই।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টিপাত কমায় উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির পথে। এ অঞ্চলের নদনদীগুলোর পানি গত বুধবার বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছিল। পানি দ্রুত বৃদ্ধির প্রবণতা এখন আর নেই।