ঈদুল আজহা সামনে রেখে সড়কের বাড়তি চাপ সামাল দিতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। এর পরও ঈদ যাত্রা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সড়কে চলমান নির্মাণকাজ, পশুবাহী গাড়ির চাপ, বড় সড়কগুলোর দুই পাশে পশুর হাট দুর্ভোগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ ছাড়া মৌসুমি বৃষ্টিও দুর্ভোগ বাড়াতে পারে।
এরই মধ্যে একাধিক বৈঠকে চিহ্নিত করা হয়েছে অধিকতর যানজটের এলাকা। ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে ২১টি অধিকতর যানজট ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বলা হয়েছে। আঞ্চলিক ও জাতীয় সড়কে চলতে পারবে না তিন চাকার যান।
তবে মোটরসাইকেল চলাচলে কোথাও বাধা থাকছে না।
সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে দেশের ২০ জেলার ১৪৩টি অধিকতর যানজটের জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। সড়কের যেসব জায়গায় নির্মাণকাজ চলমান, সেগুলো পাঁচ দিন আগেই বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে সিটিতে চলাচল করা বাস যেন মহাসড়কে উঠতে না পারে, সে বিষয়েও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদ যাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করা হয়েছে। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমাদের দিক থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সড়কে যেন হাট না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনায় সড়কে যান চলাচল থেমে গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতিও রয়েছে।
’
ময়মনসিংহসহ উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দারা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ব্যবহার করে যাতায়াত করে। এই মহাসড়কে নিয়মিত ভোগান্তির কারণ গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মীয়মাণ বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পটি। এই পুরো প্রকল্প পথে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার উড়ালপথ রয়েছে। ঈদের আগেই খুলতে পারে বিআরটির সব উড়ালপথ।
সম্প্রতি বিআরটিএর প্রধান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ঈদ যাত্রা সংক্রান্ত এক বৈঠকে সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন এমন তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘উড়াল অংশের সব ধরনের কাজ প্রায় শেষ। আমরা চেষ্টা করছি যেন ঈদের আগে এই পথ খুলে দেওয়া সম্ভব হয়। তাহলে যাতায়াত অনেকটা সহজ হবে।’
ঈদ যাত্রায় অন্যতম বাধা হতে পারে বৃষ্টি। এ ব্যাপারে আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ঈদের আগের তিন দিন সারা দেশেই বৃষ্টি হতে পারে। তুলনামূলকভাবে বৃষ্টি একটু বেশিই থাকবে। শুধু ঈদ নিয়ে আলাদা একটা আবহাওয়ার পূর্বাভাস পরে দেওয়া হবে।
রাজধানীতে ২১ জায়গায় বাধা : রাজধানী থেকে বের হওয়ার বড় পথ মূলত তিনটি। গাবতলী থেকে আমিনবাজার হয়ে, উত্তরা থেকে টঙ্গী-আবদুল্লাপুর হয়ে এবং যাত্রাবাড়ী থেকে দুই দিকে পোস্তগোলা ও শনির আখড়ার পথ ব্যবহার করেই ঢাকা থেকে বের হতে হয়। ঢাকা থেকে বের হওয়ার পথে ২১টি অধিকতর যানজট ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করেছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ।
জায়গাগুলো হচ্ছে মহাখালী বাস টার্মিনাল, কাকলী-বনানী এলাকা, খিলক্ষেত বাসস্ট্যান্ড, বিমানবন্দর, গাবতলী বাস টার্মিনাল, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, পোস্তগোলা সেতু, বাবুবাজার সেতু, বসিলা সেতু, ফকিরাপুল, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, কল্যাণপুর, মানিক মিয়া এভিনিউ ও ফার্মগেট এলাকা, সায়েন্স ল্যাব, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া বাস টার্মিনাল, রামপুরা সেতু, সাইনবোর্ড এলাকা, আবদুল্লাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা, এশিয়ান হাইওয়ের ৩০০ ফুট এলাকা ও হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ড।
এসব এলাকায় যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ঈদের আগে-পরে মোট ১৫ দিন সকাল ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিআরটিএ। এসব এলাকায় পুলিশি টহলও জোরদার থাকবে।
পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকার এসব এলাকায় স্বাভাবিক সময়েই তীব্র যানজট থাকে। তাই ঢাকা থেকে বের হওয়ার ঝামেলা থেকেই যায়। বড় এলাকার সড়কের পাশে পশুর হাটও থাকবে। তাই ট্রাফিকব্যবস্থা শক্ত না হলে ভোগান্তি বাড়তে পারে।
২০ জেলায় অধিকতর যানজটের ১৪৩ স্থান চিহ্নিত : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং ব্যবস্থা জোরদার করতে অধিকতর যানজটের জায়গা চিহ্নিত করেছে সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ। গত ১৫ জুন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর সভাপত্বিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকের কার্যপত্রে দেশের মোট ১৪৩টি স্থানকে অধিকতর যানজটের জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এই জেলাগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুর।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বড় বাধা কুমিল্লা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকা কুমিল্লা জেলায়। প্রতিবছরের মতো এবারও মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ঈদ যাত্রায় যানজট হতে পারে। এর পেছনে রয়েছে চলমান সংস্কারকাজ, মহাসড়কের পাশে বাজার এবং অবাধে চলা তিন চাকার যান।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দুর্ভোগ ৩০ কিলোমিটার : ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের মৌচাকের তেলিরচালা থেকে সূত্রাপুর বোর্ডঘর পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কে কয়েকটি পয়েন্টে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ভাসমান দোকানপাট, মহাসড়কে অবাধে চলা ব্যাটারিচালিত তিন চাকার যান এবারের ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগের কারণ হতে পারে।
উত্তরের প্রথম বাধা টঙ্গী : টঙ্গীতে ট্রাক টার্মিনালের পর্যাপ্ত জায়গার অভাবে হতে পারে অসহনীয় যানজট। ট্রাক টার্মিনালের জায়গা না পেয়ে টঙ্গী শহরের অলিগলিতে বিক্ষিপ্তভাবে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় সন্ধ্যা হলেই পুরো শহর যানজটের নগরীতে পরিণত হয়।
ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে যানজটের স্থান ভালুকা : ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মূল যানজটটি লাগে ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের মাস্টারবাড়ি, সিডস্টোর বাসস্ট্যান্ড ও ভালুকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।
ঢাকা-সিলেটে নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভোগাবে ভাঙ্গা : ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে নরসিংদী জেলার কিছু অংশে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। ঈদ যাত্রা ছাড়াও এসব এলাকায় প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসড়কের নরসিংদী অংশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যানজট হয় মাধবদী বাসস্ট্যান্ড, বাবুরহাট, পাঁচদোনা, ভেলানগর, ইটাখোলা ও নারায়ণপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায়।
https://www.kalerkantho.com/print-edition/first-page/2023/06/23/1292613