পানি বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন তীব্র হচ্ছে। ঘরবাড়ি, জমিজমা হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ। স্কুল, মাদরাসা, মসজিদসহ নানা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফরিদপুরে তিনশত বিঘা ফসলি জমি পদ্মায় বিলীন। ৪ কোটি টাকার ব্রিজ ৮০ বাড়ি ভাঙনের মুখে। কুড়িগ্রামে চিলমারীর ব্রহ্মপুত্র নদে আগ্রাসী রূপ ধারণ করছে। নদীপাড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে ঝিনাই নদীতে অর্ধশতাধিক বাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে। মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে পদ্মার ভাঙনে দিশেহারা মানুষ। বিভিন্ন স্থানে নদীভাঙন নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।
ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে পদ্মায় ধেয়ে আসছে বানের পানি। তীব্র নদীভাঙনে শতাধিক বিঘা জমি সম্পদসহ তিনশত বাড়ি পদ্মায় ৭০ বাড়ি ভাঙনের মুখে। ৪ কোটি টাকার ব্রিজ, সরকারি রাস্তা, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ, মক্তব ও শতাধিক বাড়ি এবং ৪০ বিঘা নতুন ফসলি জমিও তীব্র ভাঙনের মুখে।
পদ্মায় হু হু করে পানি বাড়ছে। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নদী ভাঙনও। গত ২৪ ঘণ্টায় সদর থানার নর্থচানেল ইউনিয়নের ইউসুফ মাতুবৃবরের ডাঙ্গী, উস্থাডাঙী, সরকার ডাঙ্গী, মোহন খার ডাঙী, রহম মিয়ার ডাঙ্গী, আয়নালের ডাঙ্গী, সহ ৫ নং ওয়ার্ডের কয়েক শত বিঘা তিন ফসলি জমি পদ্মা বিলীন হয়ে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে ঐ এলাকার কমপক্ষে ৪ থেকে ৫টি ভাঙনের তীব্র ঘুর্নায়ন গোনা মুখে বিশেষ প্রটেকটিভ ওয়ার্ক করা খুবই জরুরি হয়ে পড়ছে। অন্যথায় আগামী ৪৮ ঘণ্টা পার হলে, নতুন করে আরো ৬০ থেকে ৭০ বাড়ী নদীতে ভাঙনের মুখে পড়ে বিলীন হয়ে যাবে। যদিও ঐ এলাকায় ফরিদপুর পাউবো কর্তৃপক্ষ সামান্য কিছু অংশ মাত্র ৬ থেকে ৭ হাজার জিও ব্যাগ ঠিকাদারের মাধ্যমে ভাঙন ঠেকাতে চেষ্টা করছেন। এই সামান্য কাজে ৪ কোটি টাকার এলজিইডির ব্রিজটি, সরকারি হাসপাতাল, সরকারি পাকা সড়কসহ শতাধিক বাড়ী কিছু রক্ষা করা যাবে না। এই অবস্থার মধ্যে গ্রামবাসীর ভিটে মাটি রক্ষা করতে গতকাল বৃহস্পতিবার নর্থচানেল ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের ৪টি গ্রামের শতাধিক নারী পুরুষ, চেয়ারম্যন, ইউপি সদস্য, মহিলা সংরক্ষিত মেম্বার একত্র হয়ে ভাঙনের তীব্রতার বর্ণনা দিতে ও ভাঙনের বিষয় জরুর ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে উক্ত এলাকায় বিশেষ বরাদ্দের আবেদন করেন ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের নিকট।
এ সময় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. ইয়াছিন কবীর সকলের উদ্দেশ্য বলেন, আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রæত ব্যবস্থা নিছি। আপনার কেউ হতাশ হবেন না।
অপরদিকে, ভাঙনকবলিত এলাকাবাসী ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হকের সাথেও শতাধিক নারী-পুরুষ দেখা করেন এবং ভাঙন ঠেকানোর জোর দাবি জানান। তিনি জরুরি ভিত্তিতে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে ভাঙনের বিষয় দ্রæত ব্যবস্থার নেওয়ার বিষয় কথা বলেন।
ফরিদপুর পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা গনমাধ্যমকে জানান, তারাও জনতার ব্যাথায় ব্যাথিত হয়ে আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। কাজ চলমান আছে। অপরদিকে, অরক্ষিত শহর রক্ষা বাঁধের পাশে থাকা মানুষের মধ্যে বাড়ছে উদ্যোগ উৎকণ্ঠা। পানি বাড়ছে পদ্মায়। নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্কের শেষ নাই। প্রতিদিন পদ্মায় ১/২ হাত করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে ফরিদপুরবাসী আগাম বন্যার আশঙ্কা করছেন।
চিলমারী (কুড়িগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, কয়েকদিন ধরে উজান থেকে নেমে আসা ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করছে। পানি বাড়ার সাথে বেড়েছে ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙনের তিব্রতা। দুই এক সপ্তাহের ব্যবধানে কুড়িগ্রামের চিলমারীর এক চরের আরো দুই শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। ভাঙন ঝুঁকিতে আরো তিন শতাধিক পরিবার রয়েছে বলেও জানা গেছে। ইতোমধ্যে ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করেছেন প্রশাসন।
জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের একটি চরে উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরবড়ভিটা ও নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ার খাতা ও চিলমারী, থানাহাট ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার মানুষ রয়েছেন। গতবছর থেকে এ চরে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। একবছর ধরে ভাঙনে প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের বাড়িঘর নদীতে বিলীন হয়েছে।
সরেজমিনে ভাঙনকবলিত চরে গিয়ে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্রের পানি বাড়ার সাথে সাথে নদীর তীব্র স্রোত চরটিতে সরাসরি আঘাত হানছে। এতে দ্রæত সময়ে ভেঙে যাচ্ছে চরটি। এসময় দেখা গেছে অনেকেই সরিয়ে নিচ্ছেন তাদের বাড়ির জিনিসপত্র। তবে এসময় স্থানীয়রা অভিযোগ করেন চরটির সামনে থেকে বাল্কহেড দিয়ে নদ থেকে বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসময় কথা হয় স¤প্রতি ভাঙনের কবলে পড়া আশাদুল ইসলামের সাথে। তিনি ইতোমধ্যে আরো দুইবার ভাঙনের কবলে পড়েছেন। তিনি জানান, গেলে দুইসপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়ে ভিটে মাটি হারিয়েছেন। এই ভাঙনেও তার ভিটেবাড়ি নদীগর্ভে গেছে। বর্তমানে তিনি সামনের চরবড়ভিটার আরেকটি অংশে অস্থায়ীভাবে আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি পেশায় দিনমজুর বলে জানান।
নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যেহারে ভাঙন শুরু হয়েছে এতে ২৫০ থেকে তিন শতাধিক পরিবার ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। ভাঙনের স্বীকার হয়ে অনেকেই এখন স্থান্তরিত হয়ে কাজল ডাঙার চরে আশ্রয় নিয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান বলছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকাটি পরিদর্শন করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে। আর ভাঙন রোধে যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ভ‚ঞাপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে টাঙ্গাইলেন ভ‚ঞাপুরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলের তিল ও পাটসহ নানা ধরনের ফসল পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। যমুনার ভ‚ঞাপুর অংশে তীর রক্ষা গাইড বাঁধ না থাকায় ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ফেলা জিও ব্যাগও কোনো কাজে আসছে না।
ইতোমধ্যে উপজেলায় প্রায় অর্ধশতাধিক বসত-ভিটা, আবাদি জমি, রাস্তাঘাটসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। ফলে চরম আতঙ্কে দিন পার করছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার গোবিন্দাসী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, খানুরবাড়ী, কোনাবাড়ী, মাটিকাটা, সিরাজকান্দি ও সারপলশিয়া গ্রামসহ অর্ধশত গ্রামে যমুনা নদীর তীরবর্তী গাইড বাঁধের কাছে শতশত ড্রেজার বসানো হয়েছে। এ কারণে প্রতি বছরই ভাঙনের কবলে পড়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় বসত-ভিটা।
গোবিন্দাসী ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল হোসেন চকদার জানান, যমুনায় পানি বৃদ্ধির কারণে গত বুধবার রাতে চিতুলিয়াপাড়ায় নিমিশেই ১৫-২০টি বসত-ভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তরা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। দ্রæত ভাঙনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়া হলে আরো অর্ধশত ঘরবাড়ি ও বসত-ভিটা ভাঙনের শিকার হতে পারে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. বেলাল হোসেন বলেন, যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে গত কয়েকদিন ধরে উপজেলার গোবিন্দাসী, চিতুলিয়াপাড়া, কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ী ও পাটিতাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে।
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, সুরমা নদীর ভয়াবহ ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে শত বছরের পুরাতন মসজিদ। ইতোমধ্যেই শত পরিবার হারিয়েছেন বসতভিটা, এখন ভাঙন এসে ঠেকেছে মসজিদে। সহায় সম্বল হারিয়ে অনেকেই চরম সঙ্কটের মধ্যে পড়েছেন। নদীর এমন ভয়াল রুপ ধারণ করায় কেউ-কেউ ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। নদী তীরের মানুষগুলো আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। কেউ আবার নির্ঘুম কাটাচ্ছেন রাত।
সরেজমিনে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার মান্নারগাঁও ইউনিয়নের প্রচীনতম গ্রাম জালালপুরে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় শত বছরের পুরাতন একটি মসজিদ সুরমার ভাঙনের দারপ্রান্তে পৌঁছেছে। শতশত কবর চলে গেছে নদীর তলদেশে। নদীর স্রোতে শুধু পশ্চিম পাড় ভাঙতেছে! আর পূর্বপার গড়তেছে। নতুন করে নদী ভাঙতেছে এই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে বসবাস করছে খেটে-খাওয়া তীরবর্তী মানুষ। মসজিদের এক সাইড নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। কিছু অংশে ফাটল দেখা দিয়েছে। যেকোনো মুহ‚র্তে মসজিদ নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
স্থানীয়রা ইনকিলাবকে জানান, মসজিদের সামনে এক সময় ছিল পুকুর, ইদগাহ, স্কুল, গত কয়েক বছরে গ্রামের শতশত পরিবার ভিটামাটি হারিয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে কয়েকশত একর কৃষি জমি। অনকেই নিজেদের জায়গা জমি নদীতে হারিয়ে অন্যের জমিতে বসবাস করছেন। আবার অনেকেই হয়েছেন নিস্ব। এভাবে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা না করা হলে। এসব এলাকা একসময় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ছায়েম ইনকিলাবকে বলেন, জালালপুর মসজিদের সামনে নদী ভাঙনের কাজ স্থানীয় এমপি মহোদয়ের সুপারিশে শুধু হয়েছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী ইনকিলাবকে জানান, জালালপুর মসজিদসহ নদীর ভাঙন এ এলাকা আমি ঘুরে দেখেছি। ভরাটের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। কয়েক দিনের ভেতরে কাজ শুরু হবে।
হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, হাটহাজারী উপজেলার গুমানমর্দন ইউনিয়নের পূর্ব গুমানমর্দন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হালদার ভাঙনের ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পাঠদান কার্যক্রম চলছে। বিদ্যালয়টি হালদা পাড়ে হওয়ায় একটি কক্ষ ইতোমধ্যে হালদা নদীর পেটে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। যা পরবর্তীতে উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাধ্যমে বøগ ও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করা হয়েছে। আগামী বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়টি ভেঙ্গে গেলে উত্ত এলাকার কমলমতি শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হতে পারলে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হালদার পাড়ের এই বিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণভাবে। যদিও ভাঙনরোধে ইতোমধ্যে ঐ বিদ্যালয়ের আশপাশে প্রায় ৭০০-৮০০ ফিট জুড়ে বøগ দিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তবে, বর্ষা মৌসুম আসলেই এই বিদ্যালয়ের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। বর্ষায় হালদার পানি বাড়লে আতঙ্ক কাজ করে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে। যদিও বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে তারপরও আসা যাওয়াতে ঝুঁকি থেকেই যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (প্রাথমিক) আশরাফুল আলম সিরাজী বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছি। বেশ কয়েকবার আমরা বিভিন্নভাবে এলাকার মানুষদের এই বিষয়ে বুঝিয়েছি। তবে, জায়গার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি বা কেউ দিতে রাজি হননি। তাই বিদ্যালয়টি এখনো সরানো সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়টি নিয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শাহিদুল আলম বলেন, আমি বিদ্যালয়টি দেখে আসব এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব।
মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে ঝিনাই নদীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক বাড়ি ভাঙনের কবলে পড়েছে। এছাড়াও কুর্নি-ফতেপুর পাকা সড়কটি ভেঙে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এলাকাবাসী জানান, গত কয়েকদিন ধরে নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ফতেপুর এলাকার ঝিনাই নদীর তীরবর্তী ফতেপুর, পালপাড়া, এক টাকার বাজার, বানকাটা, থলপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। এরমধ্যে ভাঙনের তীব্রতা সবচেয়ে বেশি পালপাড়া এলাকায়। ইতিমধ্যে ওই এলাকার ৫/৬ টি বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া অর্ধশতাধিক বাড়িঘর ভাঙনের হুমকির মুখে পড়ায় ওইসব ঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে বলে ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ জানিয়েছেন।
ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বলেন, নদী ভাঙনের খবর পেয়ে আমি আমাদের এমপি খান আহমেদ শুভ, ইউএনও মহোদয়কে অবগত করেছি। তারা ভাঙনরোধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন বলে তিনি জানিয়েছেন।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকোৗশলী সাজ্জাত হোসেনের সাথে মুঠোফেনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ভাঙনের বিষয়টি জেনেছেন জানিয়ে বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকা চিহ্নিত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে লৌহজংয়ের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে বিনোদনকেন্দ্র পদ্মা রিসোর্টসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় নদী ভাঙনে প্রতি বছর ভিটেমাটি হারা হচ্ছে ২ শতাধিকের বেশি পরিবার। নদীতে উত্তাল ঢেউ আর প্রবল স্রোতের কারণে এই ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে পদ্মা নদী ঘেঁষা উপজেলার আশপাশের গ্রাম আবাদি জমি ও বসতভিটা। গত পাঁচ বছরে পদ্মা ভাঙনের শিকার হয়েছে লৌহজংয়ে জেগে ওঠা পদ্মার চরের আটটি গ্রাম, ফসলি জমি, খেলার মাঠ, গরুর খামার, কয়েকটি কাঠ বাগান, একটি বৃদ্ধাশ্রম, একটি আবাসন প্রকল্প, কয়েকশ বাড়িঘর ও একটি জাপানি স্কুল।
তেউটিয়া ইউনিয়নের তিন চতুর্থাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দিঘলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিলীন হয়েছে। গত বছর উপজেলা ভ‚মি অফিসের বিপরীতে গড়ে উঠা পদ্মা বিলাস রিসোর্ট পুরোপুরি বিলীন হয়ে যা। পদ্মা নদীর গ্রাসে আংশিক বিলীন হয়ে গেছে ব্রাহ্মণগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের আংশিক একাডেমিক ভবন। নদীভাঙনে ডহরির ৫৭ নং ডহুরী চটকিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ও খেলার মাঠ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে বিদ্যালয়ের মূল ভবন। গত ৫ বছরে উপজেলার প্রায় ২ হাজার একর ফসলি জমি ও বসতভিটা পদ্মায় বিলীন হয়েছে। অনেকে সরে গেছেন নিরাপদ স্থানে।
পদ্মার ভাঙনে উপজেলার নদী পাড়ের ইউনিয়নগুলোর বেশির ভাগ ওয়ার্ড পদ্মার ভাঙনের কবলে বিলীন হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুম ছাড়াও সারা বছর ধরে প্রতিনিয়তই ভাঙছে পদ্মায়। কুমারভোগ ইউনিয়নের খড়িয়া গ্রাম বিলীনের পর এবার ভাঙন শুরু হয়েছে উপজেলার পদ্মা নদী ঘেঁষা বেজগাঁও গাঁওদিয়া কলমা ডহরি হাড়িদিয়া গ্রাম। এসব গ্রামের অধিকাংশ জমি পদ্মায় বিলীন হয়েছে। এসব গ্রামের বাকি অংশ জমি রাক্ষুসী পদ্মা গিলতে বসেছে। বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও বাঁধ নির্মাণ কাজ ধীরগতির কারণে বর্ষার মৌসুমে নদীভাঙন আতঙ্ক রয়েছে তীরবর্তী বাসিন্দারা। এই তীরবর্তী ভাঙনের কারণে বিলীন হচ্ছে প্রতিনিয়ত বসতি বাড়ি, ফসলি জমি, খেলার মাঠ, মসজিদ, মাদরাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা স্থাপনা ও বাগান বাড়ি।
ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৪৪৬ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নিলেও তাতে কাজে আসছে না বলে জানান স্থানীয়রা। অনেক জায়গায় জিও বেগ ফেলার পরেও নতুন করে সে সব এলাকা ভাঙনের কবলে পড়েছে।
মুন্সীগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী জানান, ৪শ’ ৪৬ কোটি টাকা বাজেটের রক্ষাবাঁধ প্রকল্পের কাজ চলছে। তবে নতুন ৪ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দেওয়ায় আরো ৩২ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে বলে জানান। এই প্রকৌশলী আরো জানান, গত বছরের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া রক্ষা বাঁধ নির্মাণ শেষ হবে আগামী বছরের সেপ্টেম্বরে। তবে কাজের অগ্রগতি মাত্র ২০ শতাংশ।