২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে আগামী দিনগুলোতে কি হতে যাচ্ছে তা নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। গত সাড়ে চৌদ্দ বছরের আওয়ামী লীগ শাসনে দেশব্যাপী হত্যা, চাঁদাবাজি, গুম, খুন, গ্রেফতার বাণিজ্য, পুঁজি পাচার, ভোটাধিকারসহ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার লংঘনের ন্যায় মানবতাবিরোধী অপরাধসমূহের আলোকে জনগণের ভোটে জনগণের পছন্দ অনুযায়ী সরকার গঠনের ব্যাপারে ক্ষমতাসীনদের উপর জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের তরফ থেকে চাপ সৃষ্টির প্রসঙ্গটিও উঠে এসেছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে যাতে কেউ বাধার সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন ভিসানীতিও ঘোষণা করেছে। এর ফলে মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, আমলা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ যারা যুক্তরাষ্ট্র ও জানাডায় অর্থ পাচার এবং বাড়ি ও অন্যান্য সম্পদ গড়ে তুলেছেন তাদের অনেকেই মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসেছেন। দীর্ঘ দশ বছর পর জামায়াতকে প্রকাশ্যে সমাবেশ অনুষ্ঠানের অনুমতি দেয়ার পর রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মধ্যে কেউ কেউ সরকারের তথাকথিত নমনীয়তাকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতির ফল বলেও অভিহিত করছেন। জামায়াতের এই সফল ও সুশৃঙ্খল সমাবেশ অনুষ্ঠান দেশ-বিদেশে জামায়াতের অনুকূলে ব্যাপক প্রচারণার দুয়ারও খুলে দিয়েছে বলে মনে হয়। অনেকেই মনে করেছিলেন যে, এর ধারাবাহিকতায় সরকার তার প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আরো নমনীয় হবেন এবং আগামী সাধারণ নির্বাচন যাতে আরো সুষ্ঠু সাবলীল, নিরপেক্ষ এবং সামগ্রীকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক হয় সেজন্য মাঠকে মসৃণ করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকারের দাবি মেনে নিয়ে নির্ধারিত সময়ে নির্র্বাচন অনুষ্ঠানের সময় রেখে পদত্যাগ করবেন। কিন্তু কার্যতঃ তা হচ্ছে বলে মনে হয় না। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন যে, তিনি বিদেশী কোনো চাপের মুখে মাথানত করবেন না। তার মন্ত্রীরাও তাকে অনুসরণ করছেন। তার দলের একজন সিনিয়র নেতা ও মন্ত্রী জনাব আমীর হোসেন আমু জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির সাথে সংলাপ অনুষ্ঠানের ইঙ্গিত দিয়ে একদিন পরেই তা প্রত্যাহার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীরাও সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। সংলাপ করতে হলে বৃহত্তম বিরোধী দল বিএনপির সাথে করতে হবে এবং এজন্য বেগম জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। এটা কি সম্ভব? এ ব্যাপারে একটি ব্যক্তিগত ঘটনা বলি, ঘটনাটি বলার আগে বলে রাখি যে, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সামরিক, বেসামরিক প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিজেদের ইচ্ছা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী সাজানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতা, সরকার সমর্থক ব্যবসায়ী, আমলা সকলেই এখন পূর্ণোদ্যমে অর্থ পাচার ও সরকারি অর্থ আত্মসাতের কাজে লিপ্ত হয়ে গেছেন। নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে অভিজ্ঞ মহল জানাচ্ছে যে, রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী-আমলারা এখন কেউ বাংলাদেশী টাকায় ঘুস রেসওয়াত নেন না, তাদেরকে তা ডলারে পরিশোধ করতে হয়। দুবাই এখন তাদের অবৈধ লেনদেন ও সম্পদ আহরণের কেন্দ্রস্থল। এদিকে সরকারি কোষাগারে ডলারের মজুত এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যে, আমদানি ব্যয় মিটানোর মতো ডলার তাদের হাতে নেই। বাংলাদেশী টাকায় তা পরিশোধের সম্ভাব্যতা খুঁজে দেখা হচ্ছে। টাকার অবস্থাও প্রায় একই রকম। নতুন নোট না ছাপিয়ে আগামী দিনগুলোতে সরকারি কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধও কঠিন হয়ে যেতে পারে। এই সংকট নিরসন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করার জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। ঐক্যের জন্য সংলাপ প্রয়োজন। এই সংলাপের জন্য দুই নেত্রীর একটি টেবিলে বসা অপরিহার্য। তা না করে সরকার নতুনভাবে গায়েবী মামলা দেয়া শুরু করেছেন। সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছেন। সকল মামলায় জামিনপ্রাপ্ত নেতাদেরও মুক্তি দিচ্ছেন না এবং নতুন করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা না দেয়ার ব্যাপারে উচ্চ আদালতের নির্দেশও অমান্য করছেন। প্রতিটি মানুষের স্বতন্ত্র একটি বৈশিষ্ট্য আছে। পাবলিক জীবনে অনেকেই এই বৈশিষ্ট্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু আমাদের প্রধানমন্ত্রী তা পারেন না। আমি যে ঘটনাটি উল্লেখ করছি তা ঐ ধরনেরই একটি ঘটনা এবং সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টির সম্পূর্ণ পরিপন্থি।
পাঠকরা নিশ্চয়ই জানেন যে, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারি আমলা ড. কামাল সিদ্দিকী ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার প্রধানমন্ত্রীত্বের আমলে তার সচিব হিসেবে কাজ করেছিলেন। এই একটিমাত্র কারণে এই মুক্তিযোদ্ধা ও মেধাবী কর্মকর্তা শেখ হাসিনার বিরাগভাজন হয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালের দিকে তিনি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের সদর দফতর ম্যানিলাতে পোস্টিং পেয়েছিলেন এবং আমিও ঐ সময় লসভেনাসে ইউপিএলবিতে উচ্চ শিক্ষার্থে অবস্থান করছিলাম। আমরা প্রায়ই এডিবি সদর দফতরের রেস্তোরাঁয় খেতাম এবং গল্পগুজব করতাম। ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে একদিন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে সারা বাংলাদেশে বিরতিহীন হরতাল-অবরোধ, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও চলছিল তখন একদিন আমরা এডিবি’র সাউথ ও সাউথ ইস্ট ব্লকের রেস্তোরাঁর লাঞ্চ টেবিলে দেশের আইনশৃঙ্খলার অব্যাহত অবনতি এবং আওয়ামী লীগের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে আলাপ-আলোচনা করছিলাম। আমাদের সাথে ফিলিপাইনের তৎকালীন চার্জ দ্য এফেয়ার্স মেজর (অব.) খায়রুজ্জামানও ছিলেন। কথা প্রসঙ্গে ড. কামাল সিদ্দিকী শেখ হাসিনার আচরণ ও রাজনীতির উদ্দেশ্য নিয়ে দুইটি অবিশ্বাস্য তথ্য দিয়েছিলেন। এর একটি হচ্ছে শেখ হাসিনা নিজেকে ছাড়া আর কাউকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য মনে করেন না। তার রক্তের প্রতিটি কণিকা জিয়া পরিবারের প্রতি বিদ্বেষে পরিপূর্ণ। তিনি তার মেয়ের বিয়েতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দাওয়াত দিয়েছিলেন এবং বেগম খালেদা জিয়া সেই দাওয়াত কবুল করে অনুষ্ঠানে যোগদানও করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তার এই বিশিষ্ট মেহমানের সঙ্গে সামান্য সৌজন্য বিনিময়ও করেননি। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, শেখ হাসিনার রাজনীতির প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে সামগ্রিকভাবে এই দেশের মানুষের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রতিশোধ গ্রহণ। কেননা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজন নৃশংসভাবে নিহত হবার পর বাংলাদেশের কোন মানুষ কাঁদেনি। শেষোক্ত তথ্যটি বিবিসি’র খ্যাতনামা সাংবাদিক সিরাজুর রহমানের লেখায় আমরা পড়েছিলাম। কিন্তু প্রথমোক্ত তথ্যটি ছিল সম্পূর্ণ নতুন। অবশ্য বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানে দুই নেত্রীর চোখাচোখি অনেকেই লক্ষ্য করেছেন। কিন্তু তাদের কথাবার্তা ও কুশল বিনিময়ের ঘটনা ছিল বিরল। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনের লক্ষ্যে বেগম জিয়ার সাথে সংলাপে বসেছিলেন এবং তাকে কি ফল বয়ে এনেছিল তা দেশবাসীর মনে থাকার কথা। এখন তো শেখ হাসিনা রাজ আসনে রয়েছেন তার কৃপায় জিয়ার জেলখানার পরিবর্তে নিজ বাসভবনে অন্তরীণ আছেন। তার সংগে সংলাপ তো হতেই পারে না। জামায়াত তো এর অংশই না। এখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার প্রশ্নে আমি জনগণের দাবি হচ্ছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান। এই ব্যাপারে একটি সাংবিধানিক ভিত্তি দাঁড় করানো হয়েছিল। এবং তা ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। দেশে নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তরের একটি সিস্টেম গড়ে উঠেছিল। এর কারণ ছিল, যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসেন দেখা গেছে যে, তারা দ্বিতীয়বার কিভাবে বিজয়ী হবেন, তৃতীয় বার কিভাবে বিজয়ী হবেন এবং চতুর্থবার কিভাবে ক্ষমতায় থাকবেন সেই লক্ষ্যকে সামনে নিয়ে প্রশাসনকে দলীয়করণ করেন এবং সাজান। এই অবস্থায় ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগেরই নেতৃত্বে জামায়াতের সহযোগিতায় বহু রক্ত, জীবন ও সম্পদের বিনিময়ে এই দেশে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা বিদেশী শক্তির সহযোগিতা, অর্থানুকূল্য ও কুবুদ্ধি নিয়ে ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে আঁতাত ও পেশীশক্তির নির্বাচন করে ক্ষমতায় এসে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করেন এবং এ জন্যে আদালতকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। আবার আদালতের ঢাল হিসেবে ব্যবহৃত হবার পেছনে অনেক কেলেঙ্কারিও ছিল। অভিযোগ রয়েছে যে, একজন বিচারপতিকে প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে লাখ লাখ টাকার রিসওয়াত দিয়ে বশীভূত করে কেয়ারটেকার সরকারের বিরুদ্ধে রায় আদায় করা হয়েছে এবং এই রায়ের মধ্যেও শুভঙ্করের ফাঁক ছিল। আদালতে ঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায়ে আরো দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু অত্যন্ত নোংরামির সাথে এই রায়টির অংশবিশেষ পরে বদলিয়ে ফেলা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় বের হবার আগেই শেখ হাসিনা সংবিধান সংশোধন করে কেয়ারটেকার পদ্ধতি বিলুপ্ত করেন। কেলেঙ্কারির এখানেই শেষ নয়। সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট বিচারপতি অবসরে চলে যান। অবসরে যাবার ১৬ মাস পর তিনি পূর্ণাঙ্গ ও পরিবর্তিত রায়ে স্বাক্ষর করেন। একজন বিচারপতি যখন অবসরে যান তখন তার শপথের আর কার্যকারিতা থাকে না এবং তিনি বিচারপতি হিসেবে কোন রায়ে স্বাক্ষরও করতে পারেন না। কিন্তু তবুও তিনি করেছেন। কারণ তিনি পয়সা খেয়েছেন এবং সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। দুনিয়ার ইতিহাসে এই ধরনের ঘটনার কোন নজির নেই। অনেক বিশ্লেষক একজন বিচারকের এই আচরণকে মারাত্মক ফৌজদারী অপরাধ বলেছেন এবং এই অপরাধের শাস্তি দাবি করেছেন।
আজকে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা এর পেছনে শুধু এই রায় নয় প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতালিপ্সা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি উপেক্ষা এবং অত্যাচার-নিপীড়ন ও স্বৈরাচারী আচরণও দায়ী। তিনি তার একটি সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং নাগরিকদের শান্তি ও নিরাপত্তাকে রাজপথের নৈরাজ্যের মধ্যে ঠেলে দিয়েছেন। পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরস্ত্র মানুষের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছেন। এখন মিছিল-মিটিং এ এর উচ্ছৃঙ্খল জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হয় না সরাসরি গুলী করা হয়। যে অস্ত্র, একে ৪৭ রাইফেল যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার কথা সেই অস্ত্র এখন নিরস্ত্র গণতন্ত্রকামী প্রতিবাদী নাগরিকদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হচ্ছে। অস্ত্রসহ দলীয় কর্মী এবং দাগী সন্ত্রাসীদের মাঠে নামানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এখন যেভাবে মানুষের বুকের ওপর সরাসরি গুলী চালাচ্ছেন তাতে মনে হয় না যে তিনি বা তার সরকারের মন্ত্রীরা এই দেশে ভবিষ্যতে রাজনীতি করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। তারা ক্ষমতায় আসতে পারলেই সম্ভবত দেশে থাকবেন নতুবা বিদেশে চলে যাবার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রেখেছেন। এটা অনেকেরই ধারণা। এই ধারণা অমূলক বলে মনে হয় না। দেশের রাজনীতি ও ক্ষমতা তারা তাদের একচেটিয়া সম্পত্তি বলে মনে করেন। যা মনে হচ্ছে, সরকার চতুর্থ বার ক্ষমতায় আসার জন্য নির্বাচনের নামে আরেকটি প্রহসন করতে চাচ্ছেন এবং দেশকে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। জাতিসংঘ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মানবধিকার সংস্থা সমূহের সুপারিশকে উপেক্ষা করে তারা চীন ভারত রাশিয়ার আনুকূল্যে এসে ব্রাজিল-রাশিয়া ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত আরেকটি আর্ন্তজাতিক জোটে যোগ দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন। এর ফলে ভূরাজনীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় এবং পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা কোন পথে অগ্রসর হয় তা দেখার বিষয়। আগামী জুলাই থেকে রাজনৈতিক দলগুলো সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে। উভয় পক্ষের অনড় অবস্থানের ফলে বিশেষ করে সরকারের গোয়ার্তুমিতে দেশ নৈরাজ্যের পথে অংগ্রসর হতে পারে। পনের বছরের নির্যাতন নিপীড়ন ও দুঃশাসন থেকে মুক্তির জন্য বিরোধীদলের সামনে দ্বিতীয় কোনও পথ আছে বলে মনে হয় না। এর জন্য একজনের একটি ইচ্ছাই দায়ী। সেই ইচ্ছাটি হচ্ছে কেয়ারটেকার সরকারের বিলুপ্তি সাধন। এখন যদি দেশকে নৈরাজ্যের পথ থেকে স্বস্তির পথে ফিরিয়ে আনতে হয় তাহলে দিল্লী মস্কো বা বিদেশী কোন ফর্মুলা কাজ করবে বলে মনে হয়না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবার আগে পুনরায় সংবিধান সংশোধন করে কেয়ারটেকার সরকার পুনঃস্থাপন করা অপরিহার্য। তা না হলে নিরাপদ পলায়নের রাস্তা ও বন্ধ হয়ে যেতে পারে, স্বৈরশাসকরা যা কোন দিন বুঝতে পারে না।