চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চায়ের দোকানে খালি থাকা চেয়ারে বসতে ছাত্রলীগ নেতার ‘অনুমতি’ না নেয়ায় এক সাংবাদিকের মুখে গরম চা ছুড়ে মারাসহ বেধড়ক পিটিয়েছে ছাত্রলীগের কর্মীরা। গত সোমবার দিবাগত রাতে ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক খালেদ মাসুদ নিজেই ওই গরম চা ছুড়ে মারেন এবং তার অনুসারীরা সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদকে পেটে অনবরত লাথি মারতে থাকেন। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় তাকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে এবং পরে চমেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।
ক্যাম্পাস সূত্র জানিয়েছে, ভুক্তভোগী সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ চবির যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী এবং ঢাকা স্টেট নামে একটি পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি। অন্য দিকে হামলাকারীরা হলেন- চবি ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ, শাখা ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক ও সমাজতত্ত্ব বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আরাফাত রায়হানসহ আরো ১০-১২ জন, যাদের নাম পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদ জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যায় স্টেশনে তিনি চা পান করতে গিয়েছিলেন। ছাত্রলীগের খালেদসহ বেশ কয়েকজন বসে ছিলেন সেখানে। একটি চেয়ার খালি থাকায় তিনি সেটি নিয়ে আসার সময় খালেদ তাকে বলেন- ‘তুমি এটি কার অনুমতি নিয়ে নিচ্ছ?’ তিনি জানান, খালেদকে আগে থেকে চিনতাম, ও আমাদের জুনিয়র। তাই বললাম ‘তুমি করে বলছ কেন? আমাকে চিনো?’ এরপর সে আমার সেশন জিজ্ঞেস করে। সেশন বলার সাথে সাথে তার হাতে থাকা গরম চাসহ চায়ের কাপ আমার মাথায় মেরে দেয়।
তিনি আরো বলেন, ‘এ সময় আমি সাংবাদিক পরিচয় দিলে সে বলে ‘তুই সাংবাদিক হইছোস তো কি হইছে?’ এ কথা বলেই তার সাথে থাকা ১০-১২ জন আমাকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। একপর্যায়ে তারা চায়ের কাপ দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করতে থাকে এবং পেটে লাথি মারতে শুরু করে। এর মধ্যে আরাফাত রায়হান বেশি মারধর করেছে। বাকিদেরও চিনি। তবে সবার নাম এখন মনে করতে পারছি না। আমার কিডনিতে আগে থেকেই সমস্যা আছে। পেটে আঘাত পাওয়ায় পেট ফুলে যাচ্ছে, খুব অসুস্থ বোধ করছি। আমি চাই এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার হোক।’
সূত্র জানায়, আহতাবস্থায় সাংবাদিক দোস্ত মোহাম্মদকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টারে নেয়া হয়। কিন্তু তারা অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন।
মেডিক্যালের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি বমি করে, তা হলে সিটিস্ক্যান করতে হবে। এ ছাড়া রোগীর কিডনিতে সমস্যা থাকায় ধারণা করা হচ্ছে পেটে গুরুতর আঘাত পেয়েছে। ভেতরে রক্তরণ হয়েছে কি না পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেকে পাঠানো হয়েছে।
সাংবাদিক সমিতির মানববন্ধন : এ দিকে এই ন্যক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১টা থেকে চবি ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করে চবি সাংবাদিক সমিতি। সংগঠনের প্রচার, প্রকাশনা ও দফতর সম্পাদক মোহাম্মদ আজহারের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন চবিসাসের সাবেক সভাপতি সৈয়দ বাইজিদ ইমন, ইমরান হোসাইন, বর্তমান সভাপতি মাহবুব এ রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইমাম ইমু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম, নবাব আবদুর রহমান, সমিতির সদস্য মারজান আক্তার প্রমুখ।
মানববন্ধন থেকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে চবিসাস সভাপতি মাহবুব এ রহমান বলেন, চবিতে সাংবাদিকদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা নতুন নয়। বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি হওয়ায় ছাত্রলীগ দিনে দিনে আরো বর্বর হয়ে উঠছে। একজন কিডনি রোগীর ওপর এমন বর্বরোচিত হামলার বিচার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিশ্চিত না করলে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে।
মানববন্ধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি বরাবর স্মারকলিপি ও প্রক্টরের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি।
এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দোস্ত মোহাম্মদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা ও স্থায়ী বহিষ্কারে সমিতির নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
অভিযুক্ত চবি ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ ইতোপূর্বে ২০২১ সালেও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার হয়েছিলেন বলে ক্যাম্পাস সূত্র জানিয়েছে।