উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বর্ষণে তিস্তা নদীতে পানি প্রবাহ বেড়ে গেছে। এজন্য দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের সব জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতংকিত হয়ে পড়েছে তিস্তা পাড়ের মানুষ।
তিস্তার পানি বাড়ার কারণে পানি বন্দী হয়েছে লালমনিরহাটের কয়েক হাজার পরিবার। পানি বন্দীর পাশাপাশি তিস্তা নদীর বুক জুড়ে থাকা ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে মরিচ, পেঁয়াজ, তামাক, ভুট্টা, বাদাম, বীজতলা, ধানসহ বিভিন্ন ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে।
জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকা পাড়া, সিংগিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা, পলাশী, সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, ইউনিয়নের কয়েকশত পরিবার পানিবন্দী রয়েছে।
গত মঙ্গলবার বিকাল ৩ টায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে জানা যায়, ডালিয়া পয়েন্ট-পানির সমতল ৫১.৬০ মিটার
(বিপদসীমা = ৫২.১৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৪৫ সে.মি নিচে। কাউনিয়া পয়েন্ট-পানির সমতল ২৮.০১ মিটার,
(বিপদসীমা =২৮.৭৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৭৪ সেঃমিঃ নিচে। শিমুলবাড়ি পয়েন্ট-পানি সমতল ৩০.০৯ মিটার,
(বিপদসীমা = ৩১.০৯ মিটার) যা বিপদসীমার ১০০ সেঃমিঃ নিচে। পাটগ্রাম পয়েন্ট-পানি সমতল ৫৭.৩৪ মিটার (বিপদসীমা = ৬০.৩৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৩০১ সেঃমি নিচে। লালমনিরহাটে সোমবার সকাল ০৮ টা হতে মঙ্গলবার সকাল ০৮ টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতঃ হচ্ছে ৫৪ মিলিমিটার।
ব্যারেজ ও নদী তীরবর্তী মানুষ জানান, গত কয়েক দিন থেমে থেমে ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বেড়ে যায়। গত শনিবার ভোর থেকে আরও বৃদ্ধি হতে থাকে নদীর পানি প্রবাহ। পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে তিস্তা ব্যারেজের জলকপাটগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে।
নদীপাড়ের লোকজন জানান, পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে চরাঞ্চলের ফসলের ক্ষেতগুলো ডুবে গেছে। নিম্নাঞ্চলের ফসলের ক্ষেত ডুবে গেছে। কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারীর শৌলমারী চরের খোরশেদ আলম জানান, নদীতে পানি বাড়লেই চরাঞ্চলের মানুষ বন্দী হয়ে পড়ে। বর্ষাকালে বন্যা নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। এভাবে বাড়লে কিছুদিন পরেই বন্যা হবে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা এলাকার কৃষক জয়নাল জানান, হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা পানি বন্দী হয়েছি এবং আমাদের ফসলের বেশ কিছু ক্ষতি হয়েছে। লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার সহিদ আলী জানান, তিস্তার পানি বাড়ায় আমরা পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছি এবং আমার কয়েক একর জমির ভুট্টা পানির নিচে রয়েছে।
পাউবো তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া শাখার নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা জানান, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ কিছুটা বেড়েছে। সবগুলো জলকপাট খুলে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তবে আপাতত আর বিপদসীমা অতিক্রম করার কোনো শঙ্কা নেই। এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, বৃষ্টি আর উজানের ঢলে তিস্তার পানি প্রবাহ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং কিছু পরিবার পানি বন্দী হয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে পানি বন্দী পরিবার গুলোর খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে।
ছাতকে থইথই পানি ॥ বন্যার আশষ্কা
ছাতক (সুনামগঞ্জ) সংবাদদাতা: ছাতকে ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত। গত ১০ দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পুরো উপজেলাজুড়ে পানি থইথই করছে। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার সুরমা,পিয়াইন,চেলা নদীসহ সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ও নদ-নদীর পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ধারণা ছাতকে গত বছরের মতো ভয়াবহ বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে উপজেলার নি¤œাঞ্চল নোয়ারাই-বালিউরা, নরসিংপুর, ছাতক-আমবাড়ী দোয়ারা সড়ক, কৈতক-হায়দরপুর, জালালপুর-লামারসুলগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ-লাকেশ^র বাজারসহ গ্রামীণ সব কটি সড়কে পানি থইথই করছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যে কোনো সময় উপজেলা সদরের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে নি¤œাঞ্চলের।
উজানের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এখানে সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীতে ব্যাপক হারে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ শহরের চুনশিল্প কারখানা, ক্রাশার মিল বন্ধ রয়েছে। ফলে শত-শত শ্রমিক এখানে বেকার। একাধারে ভারী বর্ষণের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ছাতক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ নূরের জামান চৌধুরী জানান উপজেলার নি¤œাঞ্চল পরিদর্শনে আসছি। নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হলেও উপজেলা সদর এখনো প্লাবিত হয়নি, উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তার ব্যবস্থা রয়েছে, ইতিমধ্যে উপজেলার বেশ কটি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। কোনো এলাকা প্লাবিত হলে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। উপজেলার পক্ষ থেকে ত্রাণ সামগ্রীর ব্যবস্থা আছে কি না জানতে জাইলে তিনি জানান এখনো এইরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মামুন হাওলাদার জানান মঙ্গলবার (২০ জুন) সকাল ৯ টা পর্যন্ত ছাতক পয়েন্টে বিপদ সীমার ০.৮০ মিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। ছাতকে সোমবার (১৯ জুন) ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে বন্যার সম্ভাবনা নেই।