বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রায় ১ শতাংশের কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। বলা যায়, এঁরা রোগমুক্ত। বাকি প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণায় দেশব্যাপী স্বাস্থ্যঝুঁকির এই বিষয়টি জানা গেছে। গতকাল রোববার রাজধানীর একটি পাঁচতারা হোটেলে এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই গবেষণায় সহায়তা করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পাঁচটি বিষয়কে স্বাস্থ্যঝুঁকির তালিকায় রেখেছে—উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, ধূমপান, পর্যাপ্ত ফল না খাওয়া এবং শারীরিকভাবে সক্রিয় না থাকা। কেউ একটি ঝুঁকির মধ্যে আছেন, কেউ একাধিক ঝুঁকির মধ্যে আছেন। বয়স যাঁদের বেশি, তাঁদের ঝুঁকিও বেশি।
অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনসের (বিসিপিএস) গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও পর্যবেক্ষণ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রেদুয়ানুর রহমান। তিনি বলেন, ১৮ থেকে ৬৯ বছর বয়সী মানুষের ৯৬ শতাংশ প্রয়োজনমতো ফলমূল বা শাকসবজি খান না। একই বয়সী ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ পর্যাপ্ত কায়িক পরিশ্রম করেন না বা তাঁরা শারীরিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয় নন। এই বয়সী মানুষের ২০ শতাংশ ধূমপান করেন। ২৫ শতাংশ পান–জর্দা ব্যবহার করেন। এই বয়সী শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মদ্যপান করেন। পাশাপাশি ২৪ শতাংশ মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। অন্যদিকে দেশের ১০ শতাংশ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত পদ্ধতিতে গবেষণাটি করা হয়েছে। দেশের আটটি বিভাগের শহর ও গ্রামে ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারির মধ্যে গবেষণার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। গবেষণায় মোট ৭ হাজার ৬৮০ জনের তথ্য নেওয়া হয়েছে। এঁদের বয়স ১৮ থেকে ৬৯ বছরের মধ্যে।
অনুষ্ঠানে বলা হয়, দিনে মোট পাঁচবার ফলমূল বা শাকসবজি খাওয়া দরকার। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিরা দিনে শূন্য দশমিক ৪ বার এবং ১ দশমিক ৯ বার শাকসবজি খান। ৩৭ শতাংশ মানুষ খাওয়ার সময় খাবারে কাঁচা লবণ নেন এবং ১৩ শতাংশ মানুষ প্রচুর লবণযুক্ত ফাস্ট ফুড খান।
গতকাল মোট ১৭টি গবেষণার ফলাফল চারটি পৃথক অধিবেশনে প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে ছিল পাঠ্যক্রমে অসংক্রামক রোগ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, অডিও–ভিজ্যুয়াল মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দান, মহামারির সময় স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, উপকূল এলাকার মানুষের অসংক্রামক রোগ পরিস্থিতি ইত্যাদি। অনুষ্ঠানে একাধিক আলোচক বলেন, দেশে ৭০ শতাংশ মৃত্যুর কারণ অসংক্রামক রোগ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সরকারের অসংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির বিষয়ভিত্তিক পরিচালক অধ্যাপক মো. রোবেদ আমিন বলেন, কর্মপরিকল্পনার (অপারেশন প্ল্যান) বরাদ্দ অর্থের ৫ শতাংশ গবেষণার জন্য রাখা হয়েছে। চলতি বছর আরও ২৩টি নতুন গবেষণা করা হচ্ছে।
সকালের অধিবেশনে জাতীয় অধ্যাপক এ কে আজাদ খান বলেন, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধযোগ্য। এ কথা বহুদিন ধরে বলা হচ্ছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, ‘মানুষ কথা শুনছে না কেন? আমরা সঠিক ভাষায় সঠিক কথা বলতে পারছি কি না, তা নিয়ে আরও গভীরভাবে ভাবতে হবে।’
উদ্বোধনী অধিবেশনের প্রধান অতিথি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, দেশের সাড়ে চার কোটি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, দেড় কোটির বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, প্রায় এক কোটি মানুষ স্থূল। গবেষণার ফলাফল নতুন নীতি ও পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করবে।
একই অধিবেশনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘অসংক্রামক রোগ বেড়ে যাওয়ায় আমরা উদ্বিগ্ন।’