ভারতীয় ঢল ও কয়েকদিনের বৃষ্টিতে হু হু করে বাড়ছে তিস্তা নদীর পানি। পানি নিয়ন্ত্রণে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে দেখা দিয়েছে ভাঙন। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ও উজানের ঢলে ধু ধু বালুচর এলাকা এখন পানিতে টইটম্বুর। তিস্তার চর ও নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে বাদাম, পাট ও মৌসুমি ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছে।
গতকাল বিকেলে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের পয়েন্টে তিস্তার পানিপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫১ দশমিক ৮৭ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার দশমিক ২৮ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার)। ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে ভাটি এলাকায় বাড়ছে পানির চাপ। প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল। তবে ভারতীয় পানির ঢল যে ভাবে আসছে তাতে আগামী কয়েক ঘন্টায় তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করবে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউদ্দৌলা বলেন, উজানে কয়েকদিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তায় পানি বেড়েছে। ৪৪টি গেট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিকেল ৩টায় বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে দেখা গেছে। রাতে বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে।
পাউবো ডালিয়া পয়েন্ট সূত্রমতে, গত ১৭ জুন বিকেলে থেকে পানি বাড়তে শুরু করে। সন্ধ্যা ৬টায় ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। সন্ধ্যার পর কিছুটা কমতে শুরু করলে গতকাল ভোর থেকে আবারও বাড়তে শুরু করে পানি। তবে ডালিয়ার ভাটি এলাকায় ধীরে ধীরে পানি প্রবেশ করছে।
নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন তিস্তাপাড়ের মানুষ। চর এলাকায় চাষাবাদের জন্য বসবাসরত লোকজন গ্রাম এলাকায় চলে আসছেন। নৌকায় করে চরের ফসল নিয়ে আসছেন উঁচু এলাকায়। চর সিন্দুর্নার কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, কয়দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। কালকেও (১৭ জুন) পানি বাড়ছিল। আজ আবারও বাড়ছে। আমাদের বাদাম, পাটক্ষেত ডুবে গেছে।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম সারোয়ার বলেন, তিস্তায় পানি বেড়েছে। নিচু এলাকায় পানি ঢুকছে। ইউপি চেয়ারম্যানদের তাদের এলাকার খোঁজখবর রাখতে বলা হয়েছে। তবে জরুরি যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা সজাগ রয়েছি।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, গ্রীষ্ম মৌসুমে তিস্তার বিভিন্ন এলাকায় প্রকল্পের কাজ করা হয়েছে। মহিষখোঁচা এলাকায় ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। ভাঙনপ্রবণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত রয়েছি।
এদিকে ভারতীয় ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেট সুনামগঞ্জসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার অনেক স্থানে রাস্তা ঘাট ডুবে গেছে। নৌকা এখন ওই অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাহন।
যে ভাবে পানি বাড়ছে এতে এ অঞ্চলের নদ-নদীর পানিও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। যে সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে সেগুলো হলো, সুরমা, কুশিয়ারা, মনু, ধনু, খোয়াই, সারিগোয়াইন, ঝালুখালি, ভোগাই-কংশ, সোমেশ্বরী, যদুকাটা, মগড়া ইত্যাদি। এসব নদীর পানি দ্রুত বেড়ে বিপদসীমা পার হয়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ এসব জেলার হাওর ও নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
দোয়ারাবাজারে হু-হু করে বাড়ছে পানি : বন্যার আশঙ্কা
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলায় গত তিনদিনের টানা বর্ষণে-ভারতের মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা, চেলা, মরা চেলা, চিলাই, চলতি, কালিউরি, খাসিয়ামারা ও ধুমখালীসহ উপজেলার সকল নদী-নালা, হাওড়, খাল-বিলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাহাড়ি ঢলে খাসিয়ামারা নদীর উপচেপড়া স্রোতে উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের রসরাই-ক্যাপ্টেন হেলাল-খসরু উচ্চ বিদ্যালয় রাস্তায় হু হু করে পানি ঢুকতে থাকলে স্থানীয়দের প্রাণপণ চেষ্টায় তা রোধ করা সক্ষম হয়। নিচু এলাকা ও হাওড়পাড়ের লোকজন রয়েছেন সারাক্ষণ শঙ্কিত।
কেননা গত বছরের এ সময়ে স্মরণকালের সেই ভয়াবহ সর্বগ্রাসী বন্যার ক্ষতচিহ্ন আর দুর্দশার কথ এখনো ভুলতে পারেননি ভুক্তভোগী মানুষজন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে।
সুনামগঞ্জের পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার ইনকিলাবকে জানান, গত ৪৮ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জসহ ভারতের চেরাপুঞ্জি ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় দুই শতাধিক মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আরো কয়েকদিন ভারি বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা রয়েছে বলে তিনি জানান।