ঈদুল ফিতরের মতো স্বস্তির হবে না ঈদুল আজহায় ঘরে ফেরা। গত ঈদে মহাসড়কে গাড়ির চাপ একমুখী থাকায় ঈদযাত্রা ছিল নির্বিঘ্ন। শহরমুখী পশুবাহী গাড়ি, মহাসড়কের পাশে হাট এবং বৃষ্টির কারণে কোরবানির ঈদে দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তি হতে পারে।
রাজধানীর বনানীতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কার্যালয়ে ঈদ প্রস্তুতি সভায় এসব তথ্য জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। সভায় সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেছেন, গত ঈদে স্মরণকালের নির্বিঘ্ন ঈদযাত্রা হয়েছে। কোরবানির ঈদে ভোগান্তি হতে পারে আশঙ্কা করে মন্ত্রী বলেছেন, এবারের ঈদযাত্রা হবে চ্যালেঞ্জের। বর্ষা মৌসুম চলছে। বৃষ্টি হলেই গাড়ির গতি কমে যায়। গতি কমলে যানজট হবে। ধীরগতির পশুবাহি গাড়ি সস্যা সৃষ্টি করবে।
২০১৮ সাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিমানবন্দর থেকে জয়দেবপুর অংশে চলছে বাস র্যাপিড ট্রানজিটের (বিআরটি) কাজ। এ কারণে প্রতি ঈদে যানজট হয়। নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ সম্পন্ন না হওয়া এই প্রকল্পের কারণে এবারও ভোগান্তি হতে পারে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, গলার কাঁটা গাজীপুরের বিআরটি প্রকল্প। সেখানে একটু নজর দিতে হবে যেন যানজট না হয়। ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা রোধে ফিটনেসবিহীন গাড়ির চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে সেগুলো মানতে হবে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মহাসড়কের পাশে পশুর হাট সুশৃঙ্খল করতে হবে। যেখানে সেখানে পশুবাহি গাড়ি থামানো এবং পশু ওঠানামা করা যাবে না। পশুর গাড়ির সামনে-পেছনে ব্যানার লাগিয়ে হাটের নাম লিখতে হবে। সব সড়ক-মহাসড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ঈদের সাত দিন আগে সম্পন্ন করতে হবে। সড়কে যাত্রীর ঢল কমাতে গার্মেন্ট-কারখানা ধাপে ধাপে ছুটি দিতে হবে। মহাসড়কের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে রেকার রাখতে হবে। যান সংকট নিরসনে ঈদযাত্রায় বিআরটিসির ৫০০ বাস থাকবে।
ঢাকার প্রবেশমুখে বসে কোরবানির পশুর হাট। গাবতলী বাস টার্মিনালের পাশেই হাট বসে। টঙ্গী, সায়েদাবাদেও হাট রয়েছে। সভায় হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. শাহাবুদ্দিন খান বলেন, রোজার ঈদে যাত্রীরা শুধু গ্রামের দিকে যান। কোরবানির ঈদে মানুষ যেমন রাজধানী ছাড়বে, তেমনি পশুবাহি গাড়ি ঢাকার দিকে আসবে। তাই সড়কে গাড়ির চাপ দ্বিগুণ হবে।
জরিপে দেখা গেছে, মহাসড়কের পাশে পশুর হাট বসে ২১৩টি। এর মধ্যে ৫৫টি হাট বসে সড়কের খুবই কাছে। সেখানে যানজট তৈরি হয়।
ঢাকায় ২১টিসহ সারাদেশের মহাসড়কে ৭৭টি যানজটপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। ঢাকার ২১টি স্পটে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা এবং টহল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয় সভায়। ঈদের আগে-পরে তিন দিন করে সাত দিন জরুরি ব্যতীত অন্য পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে মহাসড়কে।
বাড়তি আদায় বন্ধের বিষয়ে সভায় বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেছেন, ঈদ ছাড়া অন্য সময়ে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম টাকা নেন মালিকরা। ঈদের সময় নির্ধারিত ভাড়া নেন। তার পরও ভোক্তা অধিদপ্তর জরিমানা করে।
ঈদে ঢাকার লক্কড়ঝক্কড় বাস যাত্রী মহাসড়কে গিয়ে বিকল হয়ে যানজট সৃষ্টি করে। সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী সভায় বলেন, গত কোরবানির ঈদে এসব গাড়ির কারণে ভোগান্তি হয়েছিল। এক রাতে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৪৩টি গাড়ি বিকল হয়ে ব্যাপক যানজট হয়। পরিবহন মালিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের ফিটনেসবিহীন বাস মহাসড়কে চালাতে দেবেন না।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে আপত্তি নেই। সমিতি চায় না সড়কে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলুক।
কোরবানির ঈদে পশুর গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজির কারণে যানজট হয় বলে অভিযোগ করেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা। যাত্রীবাহী গাড়ি থেকে চাঁদা তোলা হয়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঈদের সময় মহাসড়কে গাড়ি থামানো হবে না। সভায় বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অংশ নেন।