ঈদ সামনে রেখে গাজীপুরের খামারগুলোতে চলছে কোরবানির পশুর শেষ মুহূর্তের পরিচর্যা। খামার মালিকরা জানিয়েছেন, খাদ্য, ওষুধ ও বিদ্যুতের দামের পাশাপাশি শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির কারণে গত বছরের তুলনায় এবার পশুর দাম চড়া যাবে। তবে ভারতীয় গরু আমদানি না করা হলে খামারি ও কৃষকরা লাভের মুখ দেখবেন।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. উকিল উদ্দিন কালের কণ্ঠকে জানান, গাজীপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে গরুর খামার রয়েছে এক হাজার ৪৮টি।
খামার ও কৃষক মিলিয়ে এবার জেলায় কোরবানির পশু রয়েছে ৮৫ হাজারের বেশি। কিন্তু চাহিদা দেড় লাখের বেশি। চাহিদার বাকি অংশ উদ্বৃত্ত জেলার পশু থেকে সমন্বয় হবে।
গাজীপুরে মানসম্পন্ন খামার হিসেবে পরিচিত শ্রীপুরের গাড়ারন গ্রামের ময়না ডেইরি ফার্মের মালিক আবদুল কাইয়ুম জানান, গত বছর ২৫ কেজির খাবারের দাম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা ছিল।
এখন দাম বেড়ে হয়েছে এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৩৫০ টাকা। শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে ২০ শতাংশ। তা-ও দক্ষ শ্রমিক পাওয়া যায় না। ওষুধের দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।
পাঁচ কেজি ক্যালসিয়ামের দাম গত বছর ছিল ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, এ বছর এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা।
খামারি ও কৃষকদের কাছ থেকে জানা গেছে, পছন্দের ওপর ভিত্তি করেও দাম ওঠে। গত বছর কোরবানির পশুর প্রতি কেজির দাম ৪৫০ টাকা ছিল, এবার ৫৫০ টাকায় উঠবে। এ মূল্য মাঝারি জাতের। বড় গরুর দাম পছন্দের ওপর কেজিপ্রতি আরো বেশিও উঠতে পারে।
মহানগরীর হায়দরাবাদ এলাকার মোহাম্মদ অ্যাগ্রো ফার্মের কর্মচারী বাবুল হোসেন জানান, কোরবানির জন্য তাঁদের খামারে এ বছর ১৮০টি গরু রয়েছে। গত বছর ছিল ২২০টি। এখানে আমেরিকান ব্রাহমা জাতের সবচেয়ে বড় গরুটির ওজন এক হাজার ২০০ কেজি। গত বছর কোরবানি ঈদের তিন সপ্তাহ আগে তাঁদের ৬০ শতাংশ গরু বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। এবার এখনো বিক্রি শুরু হয়নি। তবে ২০টির মতো বুকিং হয়েছে। ক্রেতারা গরু দেখতে প্রতিদিন খামারে আসছেন।
গাজীপুর শহরসংলগ্ন সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়নের কালনী গ্রামের নিউ অ্যাগ্র্রো ফার্মের মালিক রুহুল আমিন বলেন, ঈদ উপলক্ষে ভারতীয় গরু আমদানি না করা হলে খামারি ও কৃষক লাভের মুখ দেখবেন।
কালনী গ্রাম ছাড়াও বাড়িয়া ইউনিয়নের আড়গড়িয়া, পাকুরিয়া ও আতুরী গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ঈদ টার্গেট করে পাঁচ থেকে দশটি গরু পালন করা হয়। পাকুরিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল আউয়াল জানান, প্রতিবছর নিজ গোয়ালের গরুর সঙ্গে বাজার থেকে কয়েকটি কিনে ঈদে বিক্রির জন্য তৈরি করেন। এবার বিক্রির জন্য তাঁর ৯টি গরু আছে। নিজস্ব খড়, কুঁড়া ও ঘাস থাকায় তাঁদের খরচ একটু কম পড়েছে। এর পরও এবার পশুর বাজার চড়া যাওয়ার বিষয়ে ধারণা করছেন তিনি।
একাধিক খামার মালিক বলেন, গত বছর গরুর মাংসের কেজি ছিল সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়। খাদ্য, ওষুধ ও চিকিৎসা খরচ বেড়ে যাওয়াতেই কেজিপ্রতি ১০০ টাকা দাম বেড়েছে। তাই কোরবানির পশুর দামও বেশি পড়বে। তাঁরও দুশ্চিন্তা ভারতীয় গরু নিয়ে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে মহানগরীতে ১৫টি পশুর হাটের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১০টি হাটের ইজারা সম্পন্ন হয়েছে।
হাট ইজারার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা নমিতা দে জানান, নগরীর বাকি পাঁচটি পশুর হাটের ইজারা দ্রুত সম্পন্ন হবে। ঈদুল আজহার ১০ দিন আগে থেকে পশুর হাটগুলোতে বিক্রি শুরু হবে।
https://www.kalerkantho.com/print-edition/last-page/2023/06/15/1290036