প্রকল্পের শুরুতে সঠিক পরিকল্পনা ছিল না। সেই সঙ্গে কৌশলগত ভুলের কারণে বাস্তবায়ন পর্যায়ে বিরাজ করছে জটিলতা। এছাড়া নানা কারণে সাড়ে ৩ বছরের প্রকল্পটি যাচ্ছে সাড়ে ৭ বছরে। তবুও বাস্তবায়ন শেষ হবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা আছে। এরই মধ্যে ব্যয় বেড়েছে ২৫৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। যা মূল অনুমোদিত ব্যয়ের ৬৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আছে ঠিকাদারের গাফিলতিও। ‘পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের এমন চিত্র উঠে এসেছে নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষার খসড়ায়। এটি তৈরি করছে বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। শিগগিরি প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন রোববার যুগান্তরকে বলেন, এ বছর আমরা শুধু প্রতিবেদন পাঠিয়েই কাজ শেষ করবো না। প্রকল্পের মধ্যে যেসব ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়েছে সেগুলোসহ যেসব সংশোধন প্রয়োজন তার জন্য আলাদা চিঠি তৈরি করব। সেই চিঠি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেতু তৈরির ক্ষেত্রে আমরা মনে করি সারা দেশের জন্য একই ডিজাইন কার্যকর হয় না। জেলাভিত্তিক আলাদা আলাদা ডিজাইন প্রয়োজন। যেমন-যেসব এলাকায় জোয়ারের পানি আসে সেগুলোতে সেতু উচ্চতা বেশি প্রয়োজন হয়। যাতে নিচ দিয়ে নৌযান চলাচল করতে পারে। আবার সমতল এলাকায় অত উঁচু করার প্রয়োজন হয় না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কোনো প্রকল্পের শুরুতেই ত্রুটি থাকলে বাস্তবায়ন পর্যায়ে অবশ্যই সমস্যা হয়। একই সঙ্গে ব্যয় ও মেয়াদ বৃদ্ধির শঙ্কা থাকে।
সূত্র জানায়, আইএমইডি প্রকল্পটি পরিবীক্ষণের জন্য তৃতীয় পক্ষ হিসাবে নিয়োগ দিয়েছে ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট ডিজাইন অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডকে। সংস্থাটির দেওয়া দ্বিতীয় খসড়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, প্রকল্পটি তৈরিতেই বেশ কিছু ত্রুটি পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে প্রধানত যেসব কৌশলগত ভুল ছিল সেগুলো হলো, একই প্রকল্পে ২য়, ৩য় ও ৪র্থ এবং অন্যান্য শ্রেণির নদীর উপর সেতু নির্মাণ কাজ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে বিআইডব্লিউটিএ’র হরাইজন্টাল ও ভার্টিক্যাল (দৈর্ঘ্য ও উচ্চতা) ক্লিয়ারেন্সে বিভিন্ন সীমার সেতু একই প্রকল্পে বাস্তবায়ন করা জটিল ও সময়সাপেক্ষ। এছাড়া প্রকল্পের মেয়াদের সঙ্গে সেতুর সংখ্যা ও দৈর্ঘ্য বাস্তবসম্মত হয়নি। প্রকল্পে বরাদ্দ সময় অনুপাতে বাস্তবসম্মত হয়নি। প্রকল্পটির বেজলাইন কোনো জরিপ করা হয়নি। তবে প্রকল্পের ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে নিচে থাকা সেতুগুলোর সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা অফিস থেকে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পটির প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়ে প্রশাসনিক অনুমোদন ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ধাপ অতিক্রম করা সময়সাপেক্ষ ছিল। এর ফলে অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ করে ব্রিজের অ্যাপ্রোচ বা সংযোগ সড়ক বাস্তবায়নে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) অনুযায়ী প্রকল্পের মেয়াদের তুলনায় কাজের গতি কম ও মন্থর। আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। এক্ষেত্রে আরও যেসব কারণ দেখানো হয়েছে সেগুলোর মধ্যে, করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের মার্চ থেকে কাজের গতি বারবার ব্যাহত হওয়া অন্যতম। এছাড়া সংশোধিত ডিপিপি অনুযায়ী অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে ভূমি অধিগ্রহণের জটিলতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে কাক্সিক্ষত ভৌত অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। এখনো প্রকল্পের মেয়াদ আছে ১৫ মাস। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা দরকার। তবে প্রকল্পের বাকি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আরও তিন বছর সময় প্রয়োজন হতে পারে।
সূত্র জানায়, ‘পল্লি সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ৩৯২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। পরে প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে ২৫৩০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বাড়িয়ে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৪৫৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এদিকে প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। পরে তিন বছর বাড়িয়ে করা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এক্ষেত্রে মেয়াদ বেড়েছে ৬৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ।