কয়েকদিন ধরে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুর বিস্তার। এ বছর এইডিস মশাবাহিত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩ হাজার। এই রোগীদের এক-তৃতীয়াংশই ভর্তি হয়েছেন জুনের প্রথম ১০ দিনে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের ৯ জনই মারা গেছেন এ সময়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গতকাল শনিবার সকাল আটটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১৫৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর আগে গত বুধবার ১৪৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এ নিয়ে এ বছর সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৩ হাজার ২১ জনে। তাদের ৯৯৯ জনই জুন মাসের রোগী।
গত একদিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে এ বছর ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে যে ১৫৬ জন ভর্তি হয়েছেন, তাদের মধ্যে ঢাকায় ১৪৮ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৮ জন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫৪৯ জন রোগী। এদের মধ্যে ঢাকায় ৪৭৩ জন এবং ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৬ জন।
বর্ষার আগেই বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার বেশি হওয়ায় এর ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সতর্ক হওয়ার পরামর্শও এসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। মাসের হিসাবে জানুয়ারিতে ৫৬৬ জন, ফেব্রুয়ারিতে ১৬৬ জন, মার্চে ১১১ জন, এপ্রিলে ১৪৩ জন এবং মে মাসে ১০৩৬ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে জানুয়ারিতে ছয়জন, ফেব্রুয়ারিতে তিনজন, এপ্রিলে দুজন এব মে মাসে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
অধিকাংশ মৃত্যু শক সিনড্রোমে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত যত জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের প্রায় সবাই ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন এবং শক সিনড্রোমে মারা গেছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গতকাল শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
এ বছর এ পর্যন্ত যে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার কারণ অনুসন্ধানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাজ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা ক্লিনিক্যালি তাদের মৃত্যুর কারণ জানার চেষ্টা করেছি। “আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে এখন পর্যন্ত মৃতদের প্রায় প্রত্যেকে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভারে ভুগছিলেন, তাদের মৃত্যু হয়েছে শক সিনড্রোমে। অন্য কারণও থাকতে পারে। সেটা জানতে অটোপসি করা দরকার। কিন্তু মৃতদের পরিবার এ বিষয়ে অনুমোদন দেবে না। আর এটা সাধারণ প্র্যাকটিসও নয়।”
খুরশীদ আলম বলেন, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় প্রতিটি বিভাগে প্রস্তুতি রয়েছে। তবে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশা নিধন করাটা সবচেয়ে জরুরি। “সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আশা করছি মশক নিধনে সফল হওয়া যাবে। আমরা প্রতিটি হাসপাতালে মশারি সরবরাহ করছি। রোগীরা যেন মশারির ভেতরে থাকেন। কিন্তু তারা মশারির ভেতর থাকছেন না।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, এ বছর ঢাকার বাইরে তেমন রোগী ভর্তি হয়নি। তারপরও সবাইকে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে। “ঢাকার হাসপাতালগুলোর মধ্যে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ১৪৭ জন (১৫০ জন)মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কিন্তু ঢাকার বাইরেও এ বিষয়ে সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রত্যেক হাসপাতালে সংশোধিত গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালগুলোর চাহিদা অনুযায়ী চিকিৎসক, ওষুধসহ সবকিছু সরবরাহ করা হচ্ছে।”