দীর্ঘ ১০ বছর পর অনুষ্ঠিত ঐতিহাসিক সমাবেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেছেন, তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, আমরাও চাই। কিন্তু ক্ষমতায় থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না। ক্ষমতা থেকে নামুন। মাঝখানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করুন। নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রধান শর্তই হচ্ছে, সবার সমান সুযোগ পাওয়া। তিনি বলেন, ২০১৪ গেছে, ২০১৮ও গেছে। কিন্তু ২০২৩ এভাবে যাবে না। এটাই শেষ। এবার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। ক্ষমতা ছেড়ে আসুন, কীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করি। আমার বিশ্বাস এতে সমস্যার সমাধান হবে। দাবি আদায়ে যেভাবে আন্দোলন করা দরকার সেভাবেই আন্দোলন করবো। তিনি দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
গতকাল শনিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত ঐতিহাসিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ এবং ওলামায়ে কেরামের মুক্তি এবং কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবিতে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিনের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য এএইচএম হামিদুর রহমান আযাদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার সম্পাদক এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন বক্তব্য প্রদান করেন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মূসা, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম, সহ: সেক্রেটারী মাওলানা মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দিন মানিক, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি দেলওয়ার হোসাইন, কামাল হোসাইন, ড. আব্দুল মান্নান, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল আতিকুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম। সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের শুভেচ্ছা বক্তব্য পড়ে শুনান কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও প্রচার সম্পাদক এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মইনুদ্দিন আহমেদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর আমীর আবদুল জাব্বার, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরীর উত্তরের নায়েবে আমীর ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোস্তফা, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ইয়াসির আরাফাত, ড. মোবারক হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার সিরাজুল ইসলাম, হাফেজ রাশেদুল ইসলাম, মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য আতাউর রহমান সরকারসহ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। সমাবেশে সিনিয়র আইনজীবী, ডাক্তার, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, প্রকৌশলী, প্রফেসরসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
ইনস্টিটিউশনের মিলনায়তন ও ইনস্টিটিউশনের চত্বরে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় বাইরের মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ পর্যন্ত রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় এবং বৃষ্টিতে ভিজে নেতাকর্মী রাস্তায় অবস্থান নেন। দীর্ঘ ১০ বছর পর রাজধানীতে সমাবেশের সুযোগ পাওয়ার নেতাকর্মীরা ছিল উচ্ছ্বসিত। আনন্দে উদ্বেলিত।
দুপুর ২টায় সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ১২ টার আগেই মিলনায়তন ভরে আশেপাশের এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। সময় গড়ার সাথে সাথে মানুষের ঢল নামে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের এলাকা ঘিরে। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা। বিভিন্ন দাবি সম্বলিত ব্যানার, ফেস্টুন ছিল চোখে পড়ার মতো। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সর্বশেষ রাজধানীর মতিঝিলে জামায়াত সমাবেশ করেছিল।
ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জামায়াতে ইসলামী সন্ত্রাস, নাশকতা, বিশৃংখলায় বিশ্বাস করে না। সকল সমস্যার সমাধান কেবলমাত্র ইসলামেই আছে। এখানে কোন ধরনের নাশকতার স্থান নেই। তিনি বলেন, দেশের প্রধান প্রধান দল সম্পর্কে সঠিক ও সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। পত্রিকা পড়ে, কোন কোন লেখকের লেখা পড়ে জামায়াতে ইসলামীকে মূল্যায়ন করলে চলবে না। জামায়াতে ইসলামী দেশের তৃতীয় বৃহত্তম সুশৃংখল আদর্শবাদী ইসলামী সংগঠন। তিনি বলেন, সোনারবাংলা গড়ার পর, সোনার মানুষ, সৎ মানুষের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু যারা সোনারবাংলা গড়তে চেয়েছেন, তারা সোনার মানুষ বানাতে পারেননি। তাদের ব্যর্থতা পূরণে কাজ করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। তিনি প্রশ্ন তুলে করেন, দেশে কী চরিত্রবান ছাত্রের প্রয়োজন নেই? সৎ নেতৃত্বের প্রয়োজন নেই? জামায়াতে ইসলামী এটাই চাচ্ছে। জামায়াতে ইসলামী সোনার মানুষ তৈরি করছি। তিনি এক অর্থনীতিবিদের কথা উল্লেখ করে বলেন, এদেশের মানুষ যদি সৎ হয়, শাসক যদি সৎ হয়, তাহলে বাংলাদেশ গ্রহীতা নয়, দাতা দেশে পরিণত হতো। আমরা সেই মানুষই তৈরি করছি।
ডা. তাহের বলেন, তারা বলে তারা সংবিধান মানেন। কিন্তু সংবিধানেতো মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা আছে, অবাধ নির্বাচনের কথা বলা আছে। সেটা কেন মানেন না? তিনি উল্লেখ করেন, সংবিধান প্রয়োজনে সংশোধন করতে হবে। সেই আলোকে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, তারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়, আমরাও চাই। কিন্তু ক্ষমতায় থেকে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না। ক্ষমতা থেকে নামুন। মাঝখানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করুন। নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রধান শর্তই হচ্ছে, সবার সমান সুযোগ পাওয়া। তিনি বলেন, ২০১৪ গেছে, ২০১৮ ও গেছে। কিন্তু ২০২৩ এভাবে যাবে না। এটাই শেষ। এবার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। ক্ষমতা ছেড়ে আসুন, কীভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করি। আমার বিশ্বাস এতে সমস্যার সমাধান হবে। দাবি আদায়ে যেভাবে আন্দোলন করা দরকার সেভাবেই আন্দোলন করবো।
তিনি কারাগারে আটক নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে মুক্ত করে দেয়ার আহ্বান জানান। তিনি দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ে বলেন, পরিস্থিতি এমন অবস্থায় যাচ্ছে, এখন বস্তা ভরে টাকা নিয়ে বাজারে গেলে পকেট ভরে বাজার নিয়ে আসতে হয়।
ডা. তাহের বলেন, জাতির জন্য এখন একটাই প্রয়োজন, সেটা হলো জাতীয় ঐক্য। দলমত নির্বিশেষ জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি থেকে উন্নত বাসযোগ্য বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সকলকে ভূমিকা পালন করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আল্লাহর আইন মানলেই ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন সম্ভব। আর না মানলে উভয়কালে লাঞ্চনার শিকার হতে হবে। আর জামায়াতে ইসলামী দেশে আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর একাজকে সফল ও স্বার্থক করার জন্য কুরআনের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে। তিনি কেয়াটেকার সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন, আল্লামা সাঈদী ও আমীরে জামায়াতসহ সকল জাতীয় নেতার মুক্তি, কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জামায়াতের সকল কার্যালয় খুলে দেয়া, নির্বিঘেœ সভা-সমাবেশের নিশ্চয়তা, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং বন্ধ সকল গণমাধ্যম খুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্ররি জোর দাবি জানান।
হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ২০১৩ সালের পর আজ রাজধানীতে সমাবেশ হচ্ছে। এতো দিন সমাবেশ করা গেলো না কেন? অন্যান্য রাজনৈতিক দল সমাবেশ করতে পারলে আমরা কেন পারলাম না? এর নাম কী আইনের শাসন? এটা সুস্পষ্ট জুলুমতন্ত্র। যারা এই অবিচার করেছে, তারাই জাতির কাছে কলংকিত হয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর কোন ক্ষতি হয়নি। তিনি বলেন, আমাদের মুখে তালা মেরে দেয়া হয়েছিল। এখন সে তালা খুলেছে। সেই তালা আর বন্ধ হবে না। তিনি নেতৃবৃন্দের মুক্তি দাবি করে বলেন, মামলা দিয়ে, হামলা করে, জুলুম নির্যাতন করে কখন ইসলামী আন্দোলনকে স্তব্ধ করা যাবে না।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার প্রথম সাড়ে ৩ বছরে গনতন্ত্রের হত্যার যাত্রা শুরু হয়, বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে। ইসলাম নিমূলের ধারা তৈরি হয় ঢাকা বিশ্ববিধ্যালয়ের লগো থেকে কুরআনের আয়াত মুছে ফেলার মাধ্যমে। মূলত: তাদের হাতে দেশের স্বাধীনতা, ইসলাম ও গণতন্ত্র নিরাপদ নয়। তাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে গণতন্ত্র আশা করে লাভ নেই।
তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। আমরা রাজপথে আছি। জগদ্দল পাথর সরাতে আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে কী নির্বাচন হয়েছে, জনগণ জানে, ২০১৮ সালে কোন ধরনের নির্বাচন হয়েছে জনগন তাও জানে। এবার সেই নির্বাচন হতে পারে না। তারা কৌশলে বিরোধীদলকে ফাঁদে ফেলে নির্বাচনে যেতে চায়। বাইরের কথায় নয়, রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমেই জনগনের বিজয় আনতে হবে।
মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, জামায়াতে ইসলামী শান্তিপূর্ন আন্দোলনে বিশ্বাসী। ১৯৯৩ সালে আওয়ামী লীগের সাথে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ১৭৩ দিন হরতাল করা হয়েছিল। সেই আন্দোলনে জামায়াতের বিরুদ্ধে বিশৃংখলার কোন অভিযোগ নেই। সেটা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই ছিল। তিনি উল্লেখ করেন, প্রায় প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। সেই দলকে সন্ত্রাসী কেন বলা হবে? তিনি প্রশাসনের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা প্রতিপক্ষ হবে না। নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সহযোগিতা করুন। না হলে গণদুশমন হিসেবে চিহ্নিত হবেন।
এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াতের সমাবেশ নিয়ে কেন নাটক করা হলো? আমরা বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বদ্ধ মিলনায়তনে অনুমতি দেয়া হলো। কেউ কেউ বলে জামায়াতে ইসলামী অনিবন্ধিত দল। এটা ডাহা মিথ্যা কথা। জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন সংক্রান্ত একটি রিট সুপ্রীম কোর্টে বিবেচনাধীন রয়েছে। এই অবস্থায় জামায়াতকে নিবন্ধনহীন দল বলা বেআইনী। তিনি বলেন, কোন আইন বলে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের তালিকা থেকে জামায়াতের নাম বাদ দিয়েছে? তিনি অবিলম্বে ওয়েব সাইটে তালিকা সংশোধন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের উপর জুলুম নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, এই অপরাধের সাথে যারা জড়িত ছিল বাংলার মাটিতে তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে। তিনি বলেন, আদালত থেকে জামিন দেয়ার পরও বারবার জেলগেট থেকে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এর চেয়ে বড় আদালত অবমাননা আর কী হতে পারে? তিনি আরো বলেন, ভিসা নীতি নয়, জামায়াতে ইসলামী চলে কুরআনের নীতিতে। ভিসানীতি তো সরকারের জন্য প্রযোজ্য। বাংলার মানুষ প্রতিটি ঘটনার নিয়মতান্ত্রিকভাবে হিসাব আদায় করবে।
মোবারক হোসাইন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে বলেন, আন্দোলন ছাড়া সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানো যাবে না। বিদেশের চাপে নয়। রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করতে ভূমিকা পালনের জন্য তিনি সকলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি নৈতিক শিক্ষা প্রবর্তনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
আব্দুর রহমান মূসা রাজনৈতিক আন্দোলনে জামায়াতের ভূমিকা তুলে ধরে বলেন, ১৯৮৬ সালে আন্দোলনের অংশ হিসেবে তৎকালীন জামায়াতের সংসদীয় দলের প্রধান, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমীর অধ্যাপক মুজিবুর রহমান জামায়াতের এমপিদের নিয়ে পদত্যাগ করলেও আওয়ামী লীগ করেনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ, টাকা পাচার ও জুলুম নির্যাতন বন্ধ করতে সকলকে আন্দোলনে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এডভোকেট ড. হেলাল উদ্দিন বলেন, তারা ক্ষমতায় আসার সময় বলেছিল ১০ টাকা কেজি চাল খাওয়াবে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিবে। আজ এগুলো কোথায়? ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কথা বলে তারা ডিফিকাল্ট বাংলাদেশ করে ফেলেছে।
ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেন, আটক নেতৃবৃন্দকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিতে হবে। জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দিতে হবে। তিনি ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কেয়ারটেকার সরকার ছাড়া দেশে কোন নির্বাচন হবে না।
ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, আজকে আমাদের মিছিল করার কথা ছিল। কিন্তু প্রশাসন করতে দেয়নি। আসলে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। পথহারা হয়ে পড়েেেছ। তারা গোলামীর চুক্তিতে আবদ্ধ। তাদের মাথা ঠিক নেই বলে দিনের ভোট রাতে করে।
মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, এই সরকার দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির। তিনি শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে দেয়ার আহ্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে নূরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে বদ্ধপরিকর। জামায়াতে ইসলামী ন্যায়নিষ্ট, সুশৃংখল, আদর্শবাদী সংগঠন। আজকের সমাবেশের মাধ্যমে তা আবারো প্রমাণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ৫ জুন রাজধানীতে সমাবেশ করার জন্য ২৮ মে আবেদন করা হয়। ২৯ মে আইনজীবী প্রতিনিধিদল গেলে তাদের আটক করা হয়। পরবর্তীতে ৫ জুনে পরিবর্তে ১০ জুনের সমাবেশ করার আবেদন করা হয়। তিনি উল্লেখ করেন, আমরা রাজপথে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছি। আগামী দিনেই শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করবো। তিনি বলেন বর্তমান সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতির সকল সীমা অতিক্রম করেছে। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই আমীরে জামায়াতসহ জামায়াতের শীর্ষনেতাদের কারারুদ্ধ করে রেখেছে। তারা অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই এই ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে।