দীর্ঘ ১৩ বছর পর আজ শনিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীা সমাবেশ। ৩ দফা দাবিতে ৫ জুন সমাবেশ করার কথা থাকলেও পুলিশের সহযোগিতা না পাওয়ায় আজ এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গত কয়েক দিনে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ও উত্তর শাখা দফায় দফায় বৈঠক করে সমাবেশের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল ঘোষণা করেন, আমরা বিশৃংখলা চাই না, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বাস্তবায়নে সকলের সহযোগিতা চাই।
৩ দফা দাবিতে গত ৫ জুন রাজধানীতে সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল। আমরা যথাযথভাবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ প্রশাসনকে সমাবেশ বাস্তবায়নে আবেদনও দেয়া হয়েছিল। ৫ জুন সোমবার কর্ম দিবস হওয়ার কারনে ডিএমপির পক্ষ থেকে সমাবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। পরে সরকারী ছুটির দিন আজ ১০ জুন শনিবার জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম উত্তর গেইটে সমাবেশের ঘোষণা দেয় জামায়াত।
গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৮ টায় এ রিপোর্ট ডিএমপির পক্ষ থেকে অনুমতি সংক্রান্ত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, আজকের প্রোগ্রাম এর ব্যাপারে ডিএমপি থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক অনুমতি প্রদান করেনি। তবে তারা বিষয়টি পজেটিভভাবে দেখছে। কিছু বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে সেই গুলো নিয়ে আলোচনা চলছে।
এ দিকে শুক্রবার দুপুরে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ‘শনিবার দুপুর দুইটায় বায়তুল মোকাররমের সামনে জামায়াত সমাবেশ করতে চায়। বিষয়টি ডিএমপি কমিশনারের বিবেচনাধীন রয়েছে। সকল গোয়েন্দা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তিনি সিদ্ধান্ত জানাবেন। এখন পর্যন্ত (দুপুর) কোনো সিদ্ধান্ত দেননি। ডিএমপি কমিশনার যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলেও মন্তব্য করেন যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।
জানা যায়, আজ ১০ জুন সমাবেশ বাস্তবায়নের জন্য ৫ জুন বিকেলে পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে ডিএমপিতে ই মেইলে আবেদন জানায় জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ। পরদিন অর্থ্যাৎ ৬ জুন বিকেলে এডভোকেট সাইফুর রহমানের নেতৃত্বে জামায়াতের ৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল ডিএমপি কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে আবেদন দিয়ে আসেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা আবেদনটি গ্রহন করেন। ওই দিনই ডিএমপি সদরদপ্তরের যুগ্ম-কমিশনার (অপারেশনস্) বিপ্লব কুমার সরকার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, রাজধানী ঢাকায় বিক্ষোভ সমাবেশের অনুমতি চেয়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের করা আবেদন গ্রহণ করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তবে দলটিকে এ কর্মসূচি পালনের অনুমতি দেওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি দুই দফা সমাবেশ করার জন্য সহযোগিতা চেয়ে ডিএমপিতে আবেদন করা হয়। প্রশাসন কোনটার ক্ষেত্রেই সহযোগিতা করেনি। বরং প্রতিবাদ জানাতে বিক্ষোভ করলে পুলিশ সেখানে চড়াও হয় এবং অসংখ্য নেতাকর্মিকে হামলা করে আহত ও গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন চালায়। ৫ জুন সমাবেশের জন্য ২৮ মে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিকট অনলাইনে আবেদন করে। ২৯ মে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ৪ জন আইনজীবীর একটি প্রতিনিধি দল কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ৫ জুন সমাবেশ করার আবেদন নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের নিকট গেলে কমিশনার কার্যালয়ের গেট থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
রাজধানীতে সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ধরপাকড় শুরু করে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীর খিলগাঁও, ডেমরা, রামপুরা, তুরাগসহ আশেপাশের জেলাগুলোতে জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীদের অফিস, কর্মক্ষেত্র ও বাসা-বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে জামায়াতের শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারপরও শান্তিপূর্ন সমাবেশ করার জন্য সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জামায়াতের সূত্র জানিয়েছে।