সংবিধানের দোহায় না দিয়ে নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকার গঠন এবং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধনের আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের।
তিনি আজ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ আয়োজিত দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিরোধ, আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমানসহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ ও আলেম-উলামার মুক্তি এবং নির্বাচনকালীন কেয়ারকেটার সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. মুহা. শফিকুল ইসলাম মাসুদের পরিচালায় এবং আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্বারী মাওলানা বেলাল হোসাইনের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি এএইচএম হামিদুর রহমান আযান, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগীয় সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসাইন।
সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্দুর রহমান মূসা, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমীর এ্যাডভোকেট ড. হেলাল উদ্দীন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. মুহা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মাদ রেজাউল করিম, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জরুল ইসলাম, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান ও নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি কামাল হোসাইন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারি সেক্রেটারি ড. ফখরুদ্দীন মানিক ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারি সেক্রেটারি ড. আব্দুল মান্নান প্রমূখ।
সমাবেশে ভারপ্রাপ্ত আমীরের লিখিত বক্তব্য পাঠ করে শোনান কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ।
ডা. আব্দুল্লাহ মোঃ তাহের বলেন, সরকার নিজেদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য সংবিধানের দোহাই দিলেও আমাদের সংবিধানে অবাধ গণতন্ত্র, বাকস্বাধীনতা ও জনগণের জানামালের নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন থেকে জনগণকে সেসব অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। অজানা কারণে সরকার এখন নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বললেও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দলনিরপেক্ষ সরকারের কোন বিকল্প নেই। একই দরকার সকলের জন্য লেভেল প্লেইং ফিল্ড। আওয়ামী লীগ নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন ও দিনের ভোট রাতে করার মাধ্যমে সংবিধানের মারাত্মক লঙ্ঘন করেছে। তিনি সরকারকে টালবাহানা পরিহার করে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনের আহবান জানান। অন্যথায় সরকারকে জনগণ ক্ষমা করবে না।
তিনি বলেন, আমরা সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ের কথা প্রায়ই শুনে থাকি। কিন্তু বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করতে হলে সোনার মানুষ দরকার। জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী চাত্রশিবিরের সেই সোনার মানুষ তৈরি করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের লোকেরা কোন প্রকার অপরাধের সাথে যুক্ত নন। শিবিরের কোন ছেলের বিরুদ্ধে কখনো ধর্ষণ, চাঁদাবাজী বা ইভটিজিং-এর অভিযোগ পাওয়া যায় না। মূলত, দেশকে কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করতে হলে সৎ, যোগ্য ও চরিত্রবান নেতৃত্বের কোন বিকল্প নেই। তিনি ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় জামায়াতের হাতকে শক্তিশালী করার আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, সরকার জামায়াতকে রাজনৈতিক ও আদর্শিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হয়েছে চরম দলন ও পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। সে ধারাবাহিকতায় বিশ্ববরেণ্য মোফাসসিরে কুরআন, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক ও বর্ষীয়ান আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রমহান, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী সহ শত শত আলেম-উলামাকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তিনি অবিলম্বে আমীরে জামায়াত ডা. শফিকুর রহমান সহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন। অন্যথায় জনগণই তাদেরকে মুক্ত করে ছাড়বে-ইনশাআল্লাহ।
লিখিত বক্তব্যে ভারপ্রাপ্ত আমীরে জামায়াত অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আল্লাহর আইন মানলেই ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন সম্ভব। আর না মানলে উভয়কালে লাঞ্চনার শিকার হতে হবে। আর জামায়াতে ইসলামী দেশে আল্লাহর আইন ও সৎলোকের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আর একাজকে সফল ও স্বার্থক করার জন্য কুরআনের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে। তিনি কেয়াটেকার সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন, আল্লামা সাঈদী ও আমীরে জামায়াতসহ সকল জাতীয় নেতার মুক্তি, কেন্দ্রীয় কার্যালয় সহ জামায়াতের সকল কার্যালয় খুলে দেয়া, নির্বিঘেœ সভা-সমাবেশের নিশ্চয়তা, সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল এবং বন্ধ সকল গণমাধ্যম খুলে দেয়ার জন্য সরকারের প্ররি জোর দাবি জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ.এইচ.এম. হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, জাতির ঘাড়ে এক স্বৈরাচারের জগদ্দল পাথর চেপে বসেছে। তাই দেশ ও জাতিকে এই অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হলে দুর্বার গণআন্দোলনের কোন বিকল্প নেই। তিনি সংসদ বাতিল করে নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানান। অন্যথায় রাজপথের আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে।
মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, জামায়াত একটি আদর্শভিত্তিক প্রাচীন রাজনৈতিক দল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও জামায়াত অংশগ্রহণ করেছিল। স্বাধীনতার পর ১১ টি সংসদ নির্বাচনে ৪টি বাদে জামায়াত সকল র্নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে এবং সকল নির্বাচনেই সম্মানজনক আসন লাভ করে। তাই এদের রাজনীতিতে জামায়াতকে উপেক্ষা করার কোন সুযোগ নেই। তিনি সরকার ও প্রশাসনকে জাময়াতের সাথে বিমাতাসূলভ আচরণ বন্ধ করার আহবান জানান।
মোঃ মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, আমাদের দাবির মধ্যে সরকার পতনের কোন কথা নেই। তারপরও আমাদের নিয়ে সরকারের এতো ভয় কোন? জামায়াতের নিবন্ধন নেই বলে দাবি করা হলেও বিষয়টি এখনো দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। তাই যারা এই দাবি করেন তারা সম্পূর্ণ বেআইনী কথা বলেন। নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে নিবন্ধন তালিকা থেকে জামায়াতের নাম বাদ দিয়েছে।
মোবারক হোসাইন বলেন, সরকার জুলুম-নির্যাতনের অতীতের সকল সীমা অতিক্রম করেছে। সাড়ে ১৪ বছরে ১৪ হাজার মানুষকে করারুদ্ধ করা হয়েছে। শহীদ করা হয়েছে প্রায় ৩ শ মানুষকে। পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন প্রায় ৫শ মানুষ। তাই এই জুলুমবাজ সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই।
সভাপতির বক্তব্যে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে মূল্যস্ফীতির সকল সীমা অতিক্রম করেছে। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্যই আমীরে জামায়াত সহ জামায়াতের শীর্ষনেতাদের কারারুদ্ধ করে রেখেছে। তারা অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করে দিয়েছে। তাই এই ব্যর্থ ও জুলুমবাজ সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে জাতীয় ঐক্যমত গড়ে তুলতে হবে।