স্টাফ রিপোর্টার: ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং এবার রাজধানীতে পানি সরবরাহে বিঘœ ঘটাচ্ছে।
অন্যদিকে তীব্র গরমের কারণে চাহিদাও বেড়েছে। পাইপের গরম পানি ব্যবহার করতে না পারার কারণে
বেড়েছে অপচয়ও। এ পরিস্থিতিতে বৃষ্টির অপেক্ষায় ঢাকা ওয়াসা। বিদ্যুৎসঙ্কট দূর বা বর্ষা না এলে
পরিস্থিতির উন্নতির আশা দেখছে না তারা।
পানি সরবরাহের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসা জানিয়েছে, বিদ্যুতের যাওয়া আসার কারণে দিনে
৪৫ থেকে ৫৫ কোটি লিটার পানি কম উৎপাদন হচ্ছে। এর ফলে নগরীর নানা এলাকায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
লাইনে পানি না পেয়ে তীব্র গরমে ভোগান্তি চরমে উঠেছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এই দুর্ভোগের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন ঢাকা ওয়াসার
ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান। তিনি নগরীতে পানি সরবরাহ ঠিক রাখতে ওয়াসার পানির
পাম্পগুলোয় বিদ্যুতের একাধিক লাইন বা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তিনি
জানান, ঢাকায় দৈনিক ২৮৫ থেকে ২৯৫ কোটি লিটার পানির চাহিদা আছে। কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ২৪০
কোটি লিটারের মত।
এই ঘাটতির কারণ হিসেবে তাকসিম বলেন, “অনেক সময় বিদ্যুতের জন্য পাম্প চালানো যাচ্ছে না। এতে
ঢাকার কিছু এলাকার মানুষ পানি পাচ্ছেন না। “আমরা বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে
যাচ্ছি। আমরা বলেছি ওয়াসার পাম্পে ডুয়েল লাইন যেন করে দেওয়া হয়।"
গরম বাড়ায় পানির চাহিদা বেড়েছে আবার পানির অপচয়ও হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দুই ধরনের
সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। একদিকে পানি কম উৎপাদন হচ্ছে। পাইপের পানি গরম থাকায় অনেকে
দীর্ঘ সময় পানি ছেড়ে ঠা-া পানি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করেন। ”
এই পরিস্থিতিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে ওয়াসার এমডি। বললেন, “আবহাওয়া পরিবর্তন হলে পানি সংকট
কিছুটা কমবে। “আজও ঢাকায় কিছুটা বৃষ্টি হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে ১৫ জুনের পর বৃষ্টিপাত
আরও বাড়বে। তখন সমস্যা কমে আসবে।"
ওয়াসা পানি সরবরাহ করতে না পারায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নগরবাসী। কিন্তু ঢাকা ওয়াসার এমডি
বলছেন, এখানে তাদের কোনো দোষ নেই। তিনি বলেন, আমাদের প্রোডাকশনের ইকুইপমেন্টে বা
যন্ত্রপাতিতে কোনো সমস্যা নেই। পানি না পাওয়ার একমাত্র কারণ লোডশেডিং। আমাদের দিক থেকে
কোনো সমস্যা নেই।
তাকসিম এ খান বলেন, আমাদের পানি প্রোডাকশন আমরা করতে পারছি, কিন্তু এটা সাপ্লাই দেওয়ার জন্য
বিদ্যুতের প্রয়োজন। কিছুদিন ধরে আমরা ঠিকমতো বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। ফলে আমাদের পাম্পগুলো বন্ধ
থাকছে। লোডশেডিংয়ের কারণে পানিতে প্রেসার দিয়ে সরবরাহ করা যাচ্ছে না। পাম্পের ডিপ
টিউবওয়েলগুলো বন্ধ থাকছে। ফলে পানি পৌঁছানো যাচ্ছে না। তিনি বলেন, ঢাকা ওয়াসার ১০টি জোনের মধ্যে
৪টি জোনে বেশি সমস্যা হচ্ছে। গাড়িতে করে পানি সরবরাহ করতেও সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কারণ গাড়িতে
অনেক সময় পানি ভর্তি করা যাচ্ছে না। পানি সরবরাহ করতে আমাদের ৪৮টি গাড়ি দিয়ে সার্বক্ষণিক
চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জেনারেটর দিয়ে পাম্পগুলোকে সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু জেনারেটরে
বিদ্যুতের মতো প্রেসার পাওয়া যাচ্ছে না।
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, চাহিদার তুলনায় বেশি পানি উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে ওয়াসার। অন্যান্য
সময় বা শীতকালে রাজধানীতে দৈনিক পানির চাহিদা থাকে ২১০ কোটি লিটার। কিন্তু গরমকাল এলে চাহিদার
পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ২৬০ কোটি লিটারে। বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার প্রতিদিন প্রায় ২৯০ কোটি লিটার পানি
উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও তারা তা উৎপাদন করতে পারছে না।
বর্তমানে ঢাকা ওয়াসার ৫টি পানি শোধনাগার রয়েছে। তবে ৪টি শোধনাগার থেকে পানি পাচ্ছে সংস্থাটি।
চলতি বছরে উপরি তলের পানির উৎপাদন ৭০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও সেই লক্ষ্য পূরণ
এখনও করতে পারেনি ঢাকা ওয়াসা। বর্তমানে উপরি তলের পানি পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩৫ শতাংশ। আর বাকি
৬৫ শতাংশ পানি তারা পাচ্ছে ভূগর্ভ থেকে।
https://dailysangram.info/post/526914-