আমদানি পেঁয়াজ নিয়েও চলছে মধ্যস্বত্বভোগীদের ‘রাজত্ব’। সরকার নির্ধারিত শুল্ক কর যোগ করেও আমদানি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দাম পড়ছে মাত্র ২০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। সিন্ডিকেট করে এখনও পেঁয়াজে তিন গুণ মুনাফা লুটছে মধ্যস্বত্বভোগীরা।
গত তিন দিনে প্রায় ৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। এসব পেঁয়াজের কিছু অংশ বাজারে আসতে শুরু করেছে। তবে আমদানি পেঁয়াজের বড় অংশ ১৫ দিনের মধ্যে বাজারে ঢুকবে। এদিকে কোরবানি ঈদ ঘনিয়ে আসায় পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ছে। পাইকারি মোকাম চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ ও ঢাকার মৌলভীবাজারে বাড়ছে পেঁয়াজের বেচাকেনা। পাইকারি এসব মোকাম ও তিন স্থলবন্দরে ‘কমিশন এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করা মধ্যস্বত্বভোগীরা এখনও নিয়ন্ত্রণ করছেন পেঁয়াজের বাজার।
জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ছৈয়দ ছগির আহমদ বলেন, ‘পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। এটি বেশি দিন ধরে রাখার সুযোগ নেই। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলে পেঁয়াজের দাম আরও কমে আসবে। খাতুনগঞ্জে যাঁরা পেঁয়াজ বিক্রি করেন, তাঁরা সবাই কমিশন এজেন্ট। এখানে বড় আমদানিকারক নেই। তবে মধ্যস্বত্বভোগী আছেন।’
চট্টগ্রামে পেঁয়াজের বড় আড়ত খাতুনগঞ্জের হামিদ উল্লাহ মিয়ার বাজার। এখানকার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিচ আলী বলেন, ‘আমদানি শুরু হওয়ার পর পেঁয়াজের দাম পাইকারি বাজারে অনেক কমেছে। কেজিতে কমেছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে এখনও সেভাবে দাম কমেনি। আমদানি ঢালাওভাবে করলে এ খাতের ব্যবসায়ী ও কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দাম নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি সেদিকটাও নজরে রাখা উচিত।’
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পেঁয়াজ আমদানির জন্য পর্যাপ্ত এলসি খোলা হচ্ছে। সোমবার বন্দর দিয়ে তিন ট্রাক পেঁয়াজ আমদানি হয়। মঙ্গলবার এসেছে আরও বেশি। শিগগির বাজারে এটির আরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।’
৬ লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র ইস্যু
দেশীয় উৎপাদনকে সুরক্ষা দিতে গত ১৬ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। তবে হঠাৎ দাম নাগালের বাইরে যেতে থাকায় গত সোমবার থেকে ফের ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। গত তিন দিনে মন্ত্রণালয় থেকে আমদানির অনুমতি পাওয়া পেঁয়াজের পরিমাণ প্রায় ৬ লাখ টন। এর মধ্যে প্রায় দেড় হাজার টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে। দিনাজপুরের হিলি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ঢুকছে পেঁয়াজ।
নষ্ট হয়ে যাচ্ছে পেঁয়াজ
দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের এক-তৃতীয়াংশই সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা গেলে আমদানির প্রয়োজন হতো না । মধ্যস্বত্বভোগীরাও সুযোগ নিতে পারতেন না। কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ২৮-৩০ লাখ টন। এই অর্থবছরে ২ লাখ ৪১ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এতে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টনের বেশি। তবে উৎপাদিত এসব পেঁয়াজের প্রায় ৩০ শতাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্য দেখা দিয়েছে সংকট।
এখনও তিন গুণ মুনাফা
আমদানির প্রভাবে পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে দাম। খাতুনগঞ্জে গত তিন দিনে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম কমেছে ৪০-৫০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে দাম কমেছে কেজিপ্রতি মাত্র ২০ থেকে ৩০ টাকা। সেখানে এখনও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়। বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, গত ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিভিন্ন বাজারে ৩০-৪০ টাকায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়। তবে ২৪ এপ্রিল দাম বেড়ে কেজিপ্রতি বিক্রি হয় ৪০-৪৫ টাকায়। ৬ মে দাম দাঁড়ায় ৫০-৬০ টাকা। এর পর ৩ জুন ৭০-৮০ টাকায় দাম ওঠে। ৪ জুন দাম আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৯০-১০০ টাকা। আমদানির খবরে এর পর কমতে থাকে দাম। তবু তিন গুণ বেশি মুনাফা নেওয়া হচ্ছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজে প্রায় সাড়ে তিন টাকা কর দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। এ সঙ্গে খরচ যুক্ত করেও ভারত থেকে গত তিন দিনে আমদানি হওয়া পেঁয়াজের দাম পড়েছে গড়ে ২০ টাকা। খুচরা বাজারে এখনও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকায়।