গ্যাস, জ্বালানি ও বিদ্যুতের লোডশেডিং সমস্যা উল্লেখ করে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেছেন, দেশের অর্থনীতি গত ৪০ বছরেও এমন সংকট দেখিনি। এমনকি করোনার মধ্যেও এমন পরিস্থিতির শিকার কেউ হয়নি। গতকাল ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত বাজেট পরবর্তী আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান। এ ছাড়া মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (আরএপিআইড) চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক।
অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট নিয়ে কথা বলেন মো. জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘১৬ টাকার গ্যাস ২৫ টাকা করার প্রস্তাব আমরাই দিয়েছিলাম। আমাদের শর্ত ছিল, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দিতে হবে। ১৬ টাকার গ্যাসের দাম ৩০ টাকা করা হলো, কিন্তু এখন আমরা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছি না। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে অন্ধকার বেশি ব্যয়বহুল। বিদ্যুৎ চলে গেলে জেনারেটর চালাচ্ছি, প্রতি কিলোওয়াটের দাম পড়ছে ২৫ টাকা।
অর্থনীতি টেকসই ও সেই সঙ্গে শিল্পোৎপাদন ধরে রাখতে হলে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো বর্তমানে এক ডলারের বিপরীতে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে। লুটের মালের মতো যেভাবে পারছে, তারা (ব্যাংক) সেভাবে ডলারের দাম নিচ্ছে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা রয়েছে। এগুলোকে সামনে রেখেই আসন্ন বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০০৮ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত দেশের অনেক উন্নতি হয়েছে। করোনার সময়ের সংকট কাটিয়ে ওঠার পর পরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করে। এ রকম সংকট আগে কখনো দেখি নাই। করোনার সময়ে বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দেয়া হয়েছে। তবে যুদ্ধ শুরুর পরে সংকট আরও বেড়েছে। সমস্যার মধ্যেই বাজেট ঘোষণা করেছে সরকার। সামনে আবার নির্বাচন। সংকট থাকলেও অনেক পজেটিভ গ্রোথ রয়েছে। রপ্তানিতে বহুমাত্রিকতা আনা উচিত ছিল, যা আমরা করতে পারিনি।
জসিম উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন সমস্যা, অভিযোগসহ নানা বিষয়ে আলোচনার জন্য এফবিসিসিআই ও এনবিআরের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স আছে, কিন্তু তাদের বৈঠক হয় না। তিনি আরও বলেন, পণ্য আমদানিতে এইচ এস কোডের ভুলের জন্য ২০০ শতাংশ জরিমানা করা হয়, তার ২০ শতাংশ পায় কর কর্মকর্তা। বাজেটে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের যে লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে, তা কীভাবে সংগ্রহ করা হবে, সে বিষয়ে দিকনির্দেশনা থাকলে ভালো হতো।
এ ছাড়া এনবিআরের সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে জোর দেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশে এনবিআরকেও ডিজিটাল করতে হবে এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে আয়কর ও ভ্যাট আদায় করতে হবে। উভয়পক্ষের মধ্যে যত কম দেখা হবে, ততই দুর্নীতি কমে আসবে।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আয়কর রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কর দেয়া বাধ্যতামূলক করায় অনেকে সমালোচনা করছেন। ৬ কোটি লোক স্মার্টফোন ব্যবহার করলে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা আয়কর দেয়া যৌক্তিক। তবে এটার একটা বিপরীতমুখী দিক রয়েছে। সেটা হলো বাজেটে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করমুক্ত আয়কর সীমা হলে ন্যূনতম ২ হাজার টাকা কীভাবে নেবে। তবে ন্যূনতম কর ২ হাজার টাকা নিলে কোনো অসুবিধা নেই।
র্যাপিডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক সভায় বাজেট বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। আরও বক্তব্য দেন দৈনিক প্রথম আলোর হেড অব অনলাইন শওকত হোসেন মাসুম, দ্য এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সেরাজ প্রমুখ। ইআরএফ সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।