তীব্র গরমে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল এবং পরশু তীব্র দাপদাহের কারণে ঢাকায় এবং ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ এবং কুমিল্লায় এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর খবরে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতির বিবেচনায় আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব স্কুল (হাইস্কুল) বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সহকারী পরিচালক এস এম জিয়াউল হায়দার হেনরি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। সূত্রমতে, তীব্র গরমে গতকাল রাজধানী ঢাকায় ভিকারুননিসা স্কুলের ৬ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ঢাকার বাইরে দিনাজপুরেও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হওয়ার খবর এসেছে। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার কুমিল্লায় তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে এক শিক্ষর্থীর মৃত্যুর খবরও সব অভিভাবক ও শিক্ষা সেক্টরের সবাইকে শোকাহত করেছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় আজ বৃহস্পতিবার সারা দেশে মাধ্যমিক পর্যয়ের সব স্কুল এক দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর আগামী দু’দিনের মধ্যে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে না এলে এই ছুটি আরো বাড়তে পারে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্র আভাস দিয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, তীব্র দাপদাহে দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছয়জন ছাত্রী গতকাল বুধবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার পর অভিভাবকদের মাধ্যমে বাসায় পাঠানো হয়। এ পরিস্থিতিতে স্কুল খোলা রাখা না রাখার সিদ্ধান্ত জানতে মাধ্যমিক উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশিথ) ও স্কুলের গভর্নিং বডির সভাপতির পরামর্শ চেয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক। এ বিষয়ে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আজকে (বুধবার) ছয়জন ছাত্রী গরমে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে অভিভাবকদের মাধ্যমে তাদের বাসায় পাঠানো হয়।
এ দিকে গত মঙ্গলবার কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্লাস রুমে অসুস্থ হওয়া এক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নেয়ার পর তার মৃত্যুর খবর দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। ওই ছাত্রীর নাম উম্মে হাবিবা। সে ওই প্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী ও তিতাস উপজেলার চান নাগেরচর গ্রামের জিয়াউল হকের মেয়ে।
কুমিল্লার ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর কারণ হিসেবে দাউদকান্দি উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লেখা এক চিঠিতে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক বলেছেন, গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ‘খ’ শাখার একজন শিক্ষার্থী হাবিবা আক্তার। তার রোল নম্বর ১৪। ওই ছাত্রী গত মঙ্গলবার সকালে স্কুলে আসার পর তার মা সকালের নাস্তা রুটি, ভাজি ও তালের শাঁস নিয়ে আসেন। মেয়েটি রুটি ভাজি না খেয়ে খালি পেটে তালের শাঁস খায় এবং পরে অসুস্থ হয়ে পড়ে ও বমি করে। স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়ার পরেও অবস্থার উন্নতি না হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর পরামর্শ দেন। ঢাকায় নিয়ে আসার পথে সে মৃত্যুবরণ করে।
এর আগে গত ৪ জুন তীব্র গরমের কারণে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণী কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। ঘোষণা অনুযায়ী আজ বৃহস্পতিবার (৮ জুন) পর্যন্ত বিদ্যালয়ে পাঠদান ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। অর্থাৎ এ ৪ দিন শিশুদের বিদ্যালয়ে আসতে হচ্ছে না। এর পর আগামীকাল শুক্রবার এবং পরের দিন শনিবারও সাপ্তাহিক বন্ধ। এ বিষয়ে দেয়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী তীব্র দাপদাহের কারণে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর আগে দাপদাহের কারণে সারা দেশে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের সব খেলাও স্থগিত করা হয়।
অন্য দিকে দাপদাহের কারণে ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে দেশের সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা। এ ছাড়া যেসব দাখিল মাদরাসায় ইবতেদায়ি স্তর সংযুক্ত রয়েছে, সেসব মাদরাসায় প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত কার্যক্রমও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার থেকে আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ দেয়া হয়েছে দেশের সব ইবতেদায়ি মাদরাসা। এ ছাড়া পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত প্রাত্যহিক সমাবেশ স্থগিত থাকবে।
মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের উপ-পরিচালক (প্রশাসন) মো: জাকির হোসাইন স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র কর্তৃক প্রকাশিত ‘তাপ প্রবাহের সতর্কবার্তা’ অনুসারে আগামী ৫ থেকে ৬ দিন দেশের ওপর দিয়ে চলমান শুধু মাঝারি ও তীব্র তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এই সতর্কবার্তার আলোকে মাদরাসা শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন মাদরাসাগুলোর শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে সতর্কতামূলক কিছু নির্দেশনা প্রতিপালন করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।