চট্টগ্রামে গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। দিনে রাতে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে এ চট্টগ্রামের শিল্প কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে কল-কারখানায় উৎপাদন কমছে। বড় কল-কারখানাগুলো জেনারেটর চালিয়ে কোন রকম উৎপাদন ঠিক রাখার চেষ্টা করছে। ক্ষুদ্র শিল্প কারখানাগুলো লোডশেডিংয়ে উৎপাদন বন্ধ রাখছে। শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে জনজীবন। এদিকে চট্টগ্রাম নগরীর পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলার গ্রামেও লোডশেডিং শহরের তুলনায় আরও বেশি বলে জানা গেছে।
এদিকে চট্টগ্রামে তাপদাহের কারণে তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। প্রচন্ড গরমের কারণে ব্যাহত হচ্ছে দিনের বেলা স্বাভাবিক কাজকর্ম। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট হয়ে ওঠছে অসহনীয়। এ অবস্থায় দুর্বিষহ হয়ে ওঠেছে জনজীবন। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবন-যাপন। চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে তীব্র দাবদাহে পানি জনিত রোগে আক্রন্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। শিশুরা এসব রোগে বেশি আক্রন্ত হচ্ছে। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা হারুনুর রশীদ জানান, চট্টগ্রামের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকার কারণে প্রচুর ঘাম হচ্ছে এবং গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, গরমও বাড়ছে লোডশেডিংও বাড়ছে। এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে। দিনে সময় কাটলেও রাতে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। নগরীর হালিশহর, বহদ্দারহাট, অক্সিজেন, আগ্রাবাদ, চকবাজার, ব্যাটারি গলি, আসকার দীঘির পাড়, পাথরঘাটা, আলকরন, আন্দরকিল্লা, শুলকবহর, পাঁচলাইশ, মুরাদপুর, বিবিরহাট, ফিরিংগীবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন এসব এলাকার বাসিন্দারা। চট্টগ্রাম মহানগরীর রিয়াজউদ্দিনবাজারে ১২ ঘন্টার বিদ্যুৎ আসা যাওয়ার চিত্র দেখলে বোঝা যায় লোডশেডিং কতটা ভয়াবহ। ঐ দিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত রিয়াজউদ্দিনবাজারে আটবার বিদ্যুৎ চলে যায়। ৫ ঘন্টার ওপরে বিদ্যুত ছিল না। চট্টগ্রামের বৃহৎ পাইকারী বাজারের এ অবস্থা হলে অন্যান্য স্থানের কি অবস্থা সহজেই অনুমেয় । মো: আকবর নামে রিয়াজউদ্দিনবাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্তÍ এ সময়টা হচ্ছে ব্যবসার সময় । এর মধ্যে ৫/৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ না থেকে তাহলে ব্যবসা কিভাবে হয়। এ চরম ভোগান্তি। নগরীর অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কারখানা ও আবাসিক এলাকাগুলোতে জনজীবনের আরো কাহিল অবস্থা।
এদিকে পিডিবি সূত্র বলছে, চট্টগ্রামে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। প্রতিদিন গড়ে ১১০০-১৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। সেখানে পাওয়া যায় ৮০০ থেকে ৮৫০ মেগাওয়াট। চট্টগ্রামে খুব গরম পড়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দফায় দফায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে দৈনিক যে বিদ্যুতের চাহিদা তার চেয়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। পিডিবি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ২৭টি প্ল্যান্ট থাকলেও উৎপাদনে আছে ১৬টি। সচল থাকা প্ল্যান্টগুলোও উৎপাদন করছে সক্ষমতার অর্ধেকেরও কম। রাউজানে ২১০ মেগাওয়াটের দুইটি প্ল্যান্ট থেকে ৪২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে একটি প্ল্যান্ট বন্ধ এবং অন্য প্ল্যান্ট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১০০ মেগাওয়াট। শিকলবাহায় ৫৫ মেগাওয়াটের জুদিয়াক প্ল্যান্ট থেকে ১৭ মেগাওয়াট ও ২২৫ মেগাওয়াট সিসিপিপি থেকে উৎপাদন আসছে ২২১ মেগাওয়াট। তবে ১৫০ মেগাওয়াটের প্ল্যান্টে কোনো উৎপাদন নেই। এছাড়া কাপ্তাইয়ের ৪৬ মেগাওয়াটের একটি প্ল্যান্ট থেকে ২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন হলেও ৪৬ মেগাওয়াটের অন্যটি এবং ৫০ মেগাওয়াটের তিনটি প্ল্যান্টের কোনো উৎপাদন নেই। আর ১০০ মেগাওয়াটের দোহাজারি থেকে ৫১, ১০০ মেগাওয়াটের হাটহাজারী থেকে ৬১, ২৪ মেগাওয়াটের রিজেন্ট থেকে ৯ মেগাওয়াট, ৫০ মেগাওয়াটের ইউনাইটড থেকে ২৩, ৩০০ মেগাওয়াটের জুলধা থেকে ২৩২, ২৬ দশমিক ৭ মেগাওয়াটের আরপিসিএল থেকে ১৭, ৫০ মেগাওয়াটের বারাকা থেকে ৪৪, ১০৫ মেগাওয়াটের শিকলবাহা-বারাকা থেকে ৬৯, ১১০ মেগাওয়াটের বারাকা কর্ণফুলী থেকে ৭৪, ৩০০ মেগাওয়াটের ইউনাইটেড থেকে ২৭৪, ১১৬ মেগাওয়াটের এনলিমা থেকে ৩৪ এবং ১৬২ মেগাওয়াটের মিরসরাই বি-আর প্ল্যান্ট থেকে ১৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। বেশিরভাগ প্ল্যান্টগুলো গ্যাস ও তেল নির্ভর।