রাজধানী ঢাকাসহ দেশজুড়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। দিনে-রাতে সব সময় বিদ্যুৎ যাচ্ছে। রোববার রাজধানীতে দুপুরের পর ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং করেছে বিতরণ কোম্পানি ডেসকো। কোম্পানিটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ডেসকোতে ২৪টি এলাকা আছে। এরমধ্যে বারিধারা, কুড়িল, বসুন্ধরা মিলে একটি এলাকা। রোববার বিকালের পর এই এলাকায় ৫০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং করতে হয়েছে। এজন্য দুপুরের পর থেকে এই এলাকায় এক ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং করতে হয়েছে। অন্যান্য এলাকায়ও ২০ থেকে ৩০ মেগাওয়াট লোডশেডিং ছিল পর্যায়ক্রমে। গ্রামাঞ্চলে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টারও বেশি লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। অনেক গ্রামে রাতে বিদ্যুৎ পাওয়াই যায় না। এ অবস্থায় দিন দিন ক্ষোভ বাড়ছে গ্রামের মানুষের।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, লোডশেডিং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ সময় লাগবে। এখন ২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। পরিস্থিতি যে অসহনীয় তা জানি। দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক কারণে কয়লা, তেল ও গ্যাসের জোগান দিতে না পারায় বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানো যাচ্ছে না। নসরুল হামিদ আশা প্রকাশ করেছেন, আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে তিনি একথা বলেন।
কয়লা সংকটের কারণে আজ থেকে সাময়িকভাবে বন্ধ হচ্ছে ‘পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।’ ডলার সংকটের কারণে কয়লার দাম দিতে না পারায় আজ থেকে ২০-২৫ দিনের জন্য দেশের বৃহত্তম এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ থাকবে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
তিন বছর আগে উৎপাদনে আসার পর এবারই প্রথম পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হবে। কয়লা সংকটে ইতোমধ্যেই বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট ২৫ মে বন্ধ করা হয়েছে। যে পরিমাণ কয়লা ছিল, তা দিয়ে এতদিন দ্বিতীয় ইউনিট চলছিল। অবশেষে সোমবার সেটিও বন্ধ হবে বলে যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ্ আব্দুল হাসিব। তিনি বলেন, ‘৫ জুন পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হবে।’
কয়লা সংকট সমাধান হবে কবে এমন প্রশ্নের জবাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ্ আব্দুল হাসিব বলেন, ‘২৫ জুন কয়লা নিয়ে আমাদের প্রথম জাহাজ আসবে। সেদিন ৪০ হাজার টন কয়লা আসবে। প্রথম আসা ওই জাহাজ আনলোড হতে ৩-৪ দিন সময় লাগবে।
জানা গেছে, কয়লা ক্রয় বাবদ এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা) বকেয়া পড়েছে। গত বছরের নভেম্বরে তারা যে পরিমাণ দিয়েছে তা শোধ করার কথা ছিল এই এপ্রিলে। ডলার সংকটের কারণে সেই টাকা পরিশোধ করতে পারেনি বিদ্যুৎকেন্দ্রেটির ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। তাই বকেয়া বিল পরিশোধ না হলে সিএমসি কয়লা কেনার জন্য টাকা দেবে না। ফলে কয়লাও কেনা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পূর্ণ সক্ষমতায় চালানো হলে দুটি ইউনিটে প্রায় ১৩ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হয়। বিদ্যুৎ বিভাগ জানিয়েছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া এই কেন্দ্রের ডিমান্ড পূরণ করতে সরকার ইউনাইটেড গ্রুপের ১০০ মেগাওয়াট ও বরিশাল ইলেকট্রিক পাওয়ারের ৩০৭ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ ছোটখাটো আরও ৬-৭টি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রস্তুত করে রেখেছে।
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, গত দুই মাস ধরে আমরা চেষ্টা করছি অচিরেই যেন এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। আমরা আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে বেরিয়ে আসতে। কারণ আমাদের কয়লার জোগান দিতে হচ্ছে, তেলের জোগান দিতে হচ্ছে, গ্যাসের জোগান দিতে হচ্ছে। আবার শিল্পে গ্যাস দিতে হচ্ছে। সব পরিস্থিতি একসঙ্গে এসেছে। তাপপ্রবাহও বেড়ে গেছে। তাপমাত্রা কোথাও ৪১ ডিগ্রি হয়ে গেছে। এজন্য আমাদের পিক আওয়ারে চাহিদা বেড়ে গেছে। আমাদের হাতে যে পাওয়ার প্ল্যান্ট মজুত ছিল, বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখার জন্য প্রস্তুত রাখছিলাম, সেটিও আমরা জ্বালানির কারণে চালু রাখতে পারছি না।
নসরুল হামিদ বলেন, আমাদের অনেক কিছু দেখতে হয়। আমাদের অর্থনৈতিক বিষয় আছে। সময়মতো এলসি খোলার বিষয় আছে। সময়মতো জ্বালানি পাওয়ার বিষয় আছে। সেই বিষয়গুলোকে আমাদের একসঙ্গে সমন্বয় করে নিতে হয়। তবে আশার বাণী হলো, সামাল দেওয়ার একটা ব্যবস্থা অন্তত হয়ে গেছে। সেজন্য আমাদের ১ থেকে ২ সপ্তাহ সময় দিতে হবে। সে সময় পর্যন্ত সবাইকে কিছুটা কষ্ট ভোগ করতে হবে।