দেশজুুড়ে চলছে তীব্র তাপদাহ। সেই সাথে বেড়েছে লোডশেডিং। অসহনীয় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। ফলে খুদে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে আজ সোমবার থেকে আগমী ৮ জুন পর্যন্ত চার দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে সব প্রাথমিক বিদ্যালয়। গতকাল রোববার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ছুটির এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর আগে তীব্র তাপদাহের কারণে সারা দেশে বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টের সব খেলাও স্থগিত করা হয়েছে। গত শনিবার থেকে এ টুর্নামেন্ট হওয়ার কথা ছিল।
অন্য দিকে সরকারের এই সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ বেসরকারি স্কুল বা কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো। কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মালিকরা বলছেন, তীব্র গরমে ও লোডশেডিংয়ের মধ্যেও আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে। সপ্তাহে এমনিতেই দু’দিন স্কুল বন্ধ। কাজেই শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বন্ধ করে আমরা স্কুল বন্ধ বা ছুটি দিতে চাই না। তবে রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের এক পরিচালক জানিয়েছেন, তারা প্রাথমিক পর্যায়ের (পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত) বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের ক্লাস সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে বন্ধ রাখবেন। আর উপরের দিকের অন্যান্য ক্লাস যথারীতি চালু থাকবে।
এ দিকে দেশজুড়ে তীব্র তাপদাহ থাকলেও মাধ্যমিক স্কুলের অর্ধবার্ষিকের মূল্যায়ন পরীক্ষার কারণে এই মুহূর্তে দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুলগুলোতে ছুটির ঘোষণা দিচ্ছে না মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। আগামী বুধবার থেকে অর্ধবার্ষিকের মূল্যায়ন পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। সূত্র বলছে, এই পরীক্ষা শেষ হলেই গ্রীষ্মকালীন ও ঈদের ছুটি দেয়া হবে। আর মূল্যায়ন পরীক্ষা হবে দুই শিফটে। কাজেই শিক্ষার্থীদের তেমন কষ্ট হওয়ার কথা নয়।
গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে সারা দেশে চলছে তাপদাহ। এর মধ্যে গত তিন দিন যাবৎ সারা দেশেই শুরু হয়েছে অব্যাহত লোডশেডিং। আর এই তীব্র তাপদাহের কারণে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ৫ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। চার দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ রাখার এই সিদ্ধান্তের কথা গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দেশব্যাপী তীব্র তাপদাহের কারণে কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরো জানায়, গত কয়েক দিনের তীব্র গরমে অনেক স্কুল থেকেই সংবাদ আসছে যে, অধিকাংশ খুদে শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ছে। অনেক স্কুলে ক্লাসে উপস্থিতিও কমে গেছে। ফলে পরিস্থিতি বিবেচনায় গতকাল স্কুল বন্ধের এই ঘোষণা এসেছে। বর্তমানে সারা দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এসব স্কুলে পড়াশোনা করে এক কোটি ২৪ লাখের মতো শিক্ষার্থী।
দেশে ৬৫ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাইরেও আরো প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার বেসরকারি স্কুল রয়েছে, যেগুলো কিন্ডারগার্টেন নামে পরিচিত। এসব কিন্ডারগার্টেনে আরো প্রায় এক কোটি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। এই গরমে তারাও নাজেহাল অবস্থায় রয়েছে; কিন্তু তারপরেও এসব বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ স্কুল ছুটির সরকারি সিদ্ধান্ত মানতে নারাজ।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের চেয়ারম্যান এম ইকবাল বাহার চৌধুরী গতকাল রোববার সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে জানান, কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোকে অভিভাবকরা মাসিক বেতন দিয়ে শিশুদের পড়াশোনা করান। আমাদেরও দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ ছাড়া আমাদের কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে শিক্ষার্থীরা এক বেঞ্চে এক বা দু’জন বসে ক্লাস করে। সরকারি স্কুলের মতো গাদাগাদি করে বসতে হয় না। বিদ্যুৎ না থাকলেও আমাদের বিকল্প ব্যবস্থা থাকে। এমনিতেই করোনায় পড়াশোনার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তাই আমরা ক্লাস চালু রাখতে চাই।
তবে সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে অনেক বেসরকারি প্রাথমিক স্কুলও ইতোমধ্যে চার দিনের ছুটি ঘোষণা করেছে। রাজাধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুলের ১২ নম্বর শাখার পরিচালক আক্তার উজ জামান গতকাল রাতে নয়া দিগন্তকে জানান, আমরা সরকারি সিদ্ধান্তের আলোকে আমাদের প্রাথমিক পর্যায়ের বাংলা এবং ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের চার দিনের ছুটি ঘোষণা করেছি। আর যেহেতু গতকাল সরকারি ঘোষণাটি স্কুল ছুটির পর এসেছে তাই আমরা শিক্ষকদের বলেছি ফোনে বা মেসেস দিয়ে যেন অভিভাবকদের জানানো হয়।
এ দিকে আজ আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের উপর দিয়ে এখন মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এটি আগামী পাঁচ থেকে ছয় দিন অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে দেশের ৪৪টি স্টেশনের আবহাওয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরেছে। দেখা গেছে, এসব স্টেশনের মধ্যে ৩১টিতেই মৃদু থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে।