আগামী ক’বছরে বিদেশী ঋণ পরিশোধ প্রায় দ্বিগুণ বাড়বে। এই ঋণ পরিশোধ চার বছরের ব্যবধানে বৃদ্ধি পাবে ৭৩ ভাগ। যেমন- বিগত ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধে ব্যয় হয়েছিল ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার। চার অর্থবছর পর ঋণ পরিশোধে লাগবে ২৬০ কোটি ডলার। অর্থ বিভাগের ‘মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বিবৃতি-২০২৩-২০২৩ হতে ২০২৫-২০২৬’-এ এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
জানা গেছে, এই তথ্যে শুধু ঋণ পরিশোধের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এর সাথে সুদ যোগ করা হলে পরিশোধের অঙ্ক ধরনে এটি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাবে। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বৈদেশিক ঋণের পরিশোধ বাংলাদেশের ঋণ ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। বৈদেশিক ঋণের মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে নমনীয় ও অনমনীয় উভয় ধরনের ঋণ রয়েছে।’ পরিসংখ্যান দিয়ে বলা হয়েছে, ‘২০২১-২০২২ অর্থবছরে সরকার ১৫০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করেছে, যা ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বেড়ে ২১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়াবে। এরপর ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ হবে ২৪০ কোটি ডলার এবং যা ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে বেড়ে হবে ২৬০ কোটি ডলার। ’
অর্থ বিভাগ বলছে, ‘আর্থিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে এবং তারল্যসঙ্কট এড়িয়ে চলতে দক্ষ ঋণ পরিশোধ ব্যবস্থাপনা জরুরি। যদিও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে তবুও বৈচিত্র্যপূর্ণ অর্থায়ন উৎস এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তোলার জন্য সরকারের প্রচেষ্টার ফলে সহনীয় সীমার মধ্যে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
এ দিকে সরকারের বৈদেশিক ঋণ স্থিতির বেশির ভাগ মার্কিন ডলারে নেয়া। ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে বৈদেশিক ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ মার্কিন ডলারে ছিল। এ ছাড়া বৈদেশিক ঋণ স্থিতিতে জাপানিজ ইয়েনের পরিমাণ ছিল ২১ শতাংশ এবং ইউরোতে ১৫ শতাংশ, আরএমবি (চীন) ৯ শতাংশ ও ব্রিটিশ পাউন্ড ৩ শতাংশ। অর্থ বিভাগ বলেছে, ‘বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারের ওঠানামা ঋণ পরিশোধের খরচের ওপর উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব ফেলতে পারে বিধায় সরকার বৈদেশিক ঋণের মুদ্রার মিশ্রণকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে থাকে। ’
জানা গেছে, অর্থ বিভাগ থেকে বিদেশী ঋণ পরিশোধের যে পরিসংখ্যান দেয়া হয়েছে, সেটি শুধু সরকারি ঋণের তথ্য দেয়া হয়েছে। এ কারণে ২০২৫-২৬ সালে বিদেশী ঋণ পরিশোধের পরিমাণ দেখাচ্ছে ২৬০ কোটি ডলার; কিন্তু বিদেশী উৎস থেকে নেয়া সরকারি ঋণের পাশাপাশি এ সময়ে সরকারি কোম্পানি ও বেসরকারি খাতের নেয়া ঋণও সুদসহ পরিশোধ করতে হবে। সব মিলিয়ে আগামী অর্থবছর থেকে বিদেশী ঋণ পরিশোধের পরিমাণ ১০-১২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে।
তবে বৈদেশিক ঋণে সুদ কম, পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে পরিশোধ করতে হয়। বৈদেশিক ঋণে সুদ শূন্য দশমিক ৭৫ থেকে দেড় শতাংশ। এ ঋণ পরিশোধ করার সময়টাও অনেক বড়। অনেক ঋণ আবার ৩১ বছরে পরিশোধ করতে হয়। এখনো ৪৮ বিলিয়ন ডলার পাইপলাইনে আছে।