আরো একবার এই অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাওয়া গেছে যে, সরকারের পক্ষ থেকে যতোই ‘সবকিছু’ কিংবা ‘এত বেশি’ দিয়ে আসা হোক না কেন, বাংলাদেশকে উস্কানি দেয়ার কর্মকান্ড চলতেই থাকবে। প্রমাণ হিসেবে এবার সামনে এসেছে একটি ম্যুরাল, যা আসলে অখন্ড ভারতের মানচিত্র। এই মানচিত্রে শুধু পাকিস্তানকে নয়, অফগানিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা ও মিয়ানমারের পাশাপাশি বাংলাদেশকেও ভারতের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে। এটা করা হয়েছে রাজধানী দিল্লিতে অবস্থিত ভারতের সংসদ ভবনে। এর বিরুদ্ধে বিশেষ করে বাংলাদেশে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। কিন্তু ভারত নিজের ভুল স্বীকার করে কোনো বিবৃতি দেয়নি। সে কারণে দেশপ্রেমিক বাংলাদেশিরা বিষয়টিকে ভারতের নতুন উস্কানি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। ম্যুরালের ছবি বিভিন্ন দৈনিকসহ গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। বড় কথা, ভারত সরকার ৫ জুন পর্যন্তও ভুল স্বীকার যেমন করেনি, তেমনি বাংলাদেশকে কোনো আশ্বাস দিয়েও বলেনি যে, ম্যুরালটি সংশোধন করা হবে এবং এতে অন্তত বাংলাদেশকে রাখা হবে না।
এদিকে দেশপ্রেমিকরা বলেছেন, ম্যুরালের অন্তরালে কেন্দ্রীয় তথা মোদি সরকারের সঙ্গে সুচিন্তিত কোনো আয়োজন থাকতে পারেÑ যার মধ্য দিয়ে ভারত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও অসম্মানিত করে ছেড়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ভারতের হিসাব-নিকাশের বিষয় মনে করা হলেও সাধারণভাবে বলা হচ্ছে, ওই ম্যুরালের মধ্য দিয়ে মোদি সরকার আসলে বাংলাদেশের ওপর বিপদ চাপিয়ে দেয়ার ভয়ংকর উদ্যোগ নিয়েছে। কারণ, ভারতের নির্দেশে কথিত জঙ্গি বিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে অনেক আগেই বাংলাদেশের নাভিশ্বাস উঠেছে। তাছাড়া ভারতের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে মাঝে-মধ্যেই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর হুমকিও উচ্চারিত হয়ে থাকে। এই হুমকিতে যদিও পাকিস্তানের কাশ্মীর অংশের কথা বলা হয় কিন্তু পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বাংলাদেশকেও হিসাবের মধ্যে রাখা দরকার। পর্যবেক্ষকরা বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর বহুবার উচ্চারিত একটি বক্তব্য স্মরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন- যার মূলকথায় শেখ হাসিনার বলেছেন, তার সরকার ভারতকে অনেক বেশি দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কথাগুলো প্রায় নিয়মিতভাবে বলে থাকেন বলেই ম্যুরাল কেন্দ্রিক ঘটনাপ্রবাহে রাজনৈতিক অঙ্গনের সবার বক্তব্যেই ঘুরেফিরে প্রাধান্যে থাকছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে গোপনে স্বাক্ষরিত সামরিক বা প্রতিরক্ষা চুক্তি। বলা হচ্ছে, ওই চুক্তির পক্ষে যৌক্তিকতা তৈরি করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে অনেক উপলক্ষেই ‘জঙ্গি উৎসব’-এর অয়োজন করা হয়েছে। এখনও অয়োজন করা হয়। এসবের মাধ্যমে বোঝানো হয়। ১. বাংলাদেশে কথিত ইসলামী জঙ্গিদের ভয়াবহ উত্থান ঘটেছে; এবং ২. ওই জঙ্গিরা এতটাই দক্ষ ও দুর্ধর্ষ যে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীও তাদের সঙ্গে ‘পেরে’ উঠছে না এবং ‘পেরে’ উঠবেও না! আর কোনো দেশের সেনাবাহিনী যখন ‘ব্যর্থ’ হয় তখন প্রতিবেশি বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের সাহায্য নেয়ার মধ্যে ‘দোষের’ কিছু থাকতে পারে না! সেজন্যই সরকার ভারতের সঙ্গে যে নামেই হোক সামরিক ও প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এসব চুক্তি গোপনও রাখা হয়েছে। বলা দরকার, এটা সাধারণভাবে দেশপ্রেমিক সকল দল ও মহলের অনুমান।
‘জঙ্গি উৎসব’-এর পরিপ্রেক্ষিতে ভীতি ও উদ্বেগের পাশাপাশি সমস্যা মোকাবেলার পরামর্শও যথেষ্ট এসেছে। এসব পরামর্শে দেশপ্রেমিকরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সমস্যাকে জাতীয়ভাবে মোকাবিলার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। বলেছেন, বৈশ্বিক সমস্যায় পরিণত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ভয়ংকর সমস্যাকে নির্মূল করতে হলে ক্ষমতাসীনদের ‘দোষারোপের রাজনীতি’ পরিত্যাগ করতে হবে এবং এ উদ্দেশ্যে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। উল্লেখ্য, জাতীয় ঐক্যের ব্যাপারে আহবানের পুনরাবৃত্তি করা হলেও ক্ষমতাসীনরা সে আহবানের প্রতি বরাবর উপেক্ষা দেখিয়ে এসেছেন।
বলা হয়েছে, উদ্দেশ্য অন্য রকম ছিল বলেই ক্ষমতাসীনরা ভারতের সঙ্গে গোপনে সামরিক বা প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। উদ্বেগ সৃষ্টি হওয়ার কারণ, প্রধানমন্ত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করে আসার পরপর একদিকে পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হঠাৎ আত্রাই নদীর পানির হিস্যার জন্য চাপ সৃষ্টির করেছেন, অন্যদিকে জঙ্গি দমনের নামে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর পরোক্ষ হুমকি উচ্চারিত হয়েছিল মোদি সরকারের পক্ষ থেকে। এটা ২০১৭ সালের ঘটনা।
প্রসঙ্গক্রমে সঙ্গত কারণেই ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি নিয়েও কথা উঠেছিল। কারণ, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামরত কাশ্মীরে শুধু নয়, আসাম ও মনিপুরসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্য সব রাজ্যেও বহু বছর ধরে বিশেষ ক্ষমতা আইনের যথেচ্ছ প্রয়োগ ঘটছে। আইনটির অধীনে নির্যাতিত হচ্ছে ভারতের সাধারণ মানুষ। রাজ্যগুলোকে ‘উপদ্রুত অঞ্চল’ হিসেবে ঘোষণা করেছে ভারত সরকার। আইনের আড়াল নিয়ে ক্রসফ্রায়ারে হত্যা থেকে ধর্ষণ পর্যন্ত সব ধরনের অপরাধই করে চলেছে ভারতের সেনাবাহিনী। প্রতিবাদে সময়ে সময়ে আন্দোলন গড়ে উঠলেও এবং সেসব আন্দোলনে পৃথিবী জুড়ে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গেলেও ভারত আইনটি বাতিল করেনি। ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর ইঙ্গিত দেয়ার আড়ালে কুখ্যাত সে আইনটি প্রয়োগেরও পরোক্ষ হুমকি দেয়া হয়েছিল। তেমন অবস্থায় পাকিস্তানের অভ্যন্তরে শুধু নয়, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশেও নতুন পর্যায়ে দমন-নির্যাতন মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।
এখানে ভারতের রাজনৈতিক ও সামরিক নেতৃবৃন্দের মনোভাবের পাশাপাশি দেশটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কেও ধারণা দেয়া দরকার। কারণ, ভারতের অনেক রাজ্যেই স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম ও সশস্ত্র যুদ্ধ চলছে। পাশাপাশি আছে ভয়ঙ্কর ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। কিছুদিন আগের এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ভারতের ৬০৮টি জেলার মধ্যে ২৩১টি জেলায় অর্থাৎ দেশটির প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকাতেই সশস্ত্র যুদ্ধ ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর হিসাবে সন্ত্রাসী গোষ্ঠির সংখ্যা ২৭০টি। রয়েছে ‘নকশাল’ ধরনের বিপ্লবী ও মাওবাদী এবং ‘ডিফেন্স’ ও ‘কমান্ডো ফোর্স’ ধরনের সংগঠন। এসব সংগঠন পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী ও সেনাবাহিনীর কয়েক হাজার সদস্যকে হত্যা করেছে। সশস্ত্র তৎপরতার কারণে ভারতের প্রধান আটটি রাজ্যকে ‘লাল’ অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে হয়েছে (পশ্চিমবঙ্গ, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, বিহার, উড়িষ্যা, ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড়, অন্ধ্র প্রদেশ)। ভারতে সন্ত্রাসী হামলায় মৃত্যুর সংখ্যাও যে কাউকে ভীত-আতংকিত করবে। এক পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছে, ১৯৯৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মোট ৫৪ হাজার ৯৬৯ জন সন্ত্রাসী হামলায় মারা গেছে। এত মৃত্যু বিশ্বের কোনো দেশে কল্পনাও করা যায় না।
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে চলমান স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে উল্লেখের কারণ ও উদ্দেশ্য একথাই জানানো যে, বাংলাদেশে নয়, জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে আসলে ভারতের অভ্যন্তরে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম থেকে সে ভারতের সাহায্য নিয়েই বাংলাদেশের কথিত জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের দমনের নামে উঠে-পড়ে লেগে আছে। সঙ্গত কারণে প্রশ্ন উঠেছে, ভারতের তুলনায় জঙ্গীই যেখানে নেই সেখানে কোন জঙ্গীদের দমনের নামে ভারতের সাহায্য নেয়ার জন্য সরকার এত উতলা হয়ে পড়েছে? এর একটি মাত্র উত্তরই হতে পারেÑ সরকার আসলে দেশ বিশেষের সেনা বাহিনীকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার অজুহাত সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। এর পেছনেও রয়েছে ওই দেশটির প্ররোচনা। অন্যদিকে ভারতের পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞরাও কিন্তু নয়াদিল্লির কৌশল ও মনোভাবের তীব্র সমালোচনা করেছেন। অনেক উপলক্ষেই তারা বলেছেন, সন্ত্রাসের প্রশ্নে পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশকে টেনে আনার প্রকৃত কারণ হচ্ছে, নয়াদিল্লি কখনো নিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা ও অক্ষমতার কথা স্বীকার করতে চায় না।
প্রশ্ন হলো, যে দেশ নিজের সন্ত্রাসই দমন করতে পারে না, সে দেশ কিভাবে অন্য দেশের কথিত জঙ্গীদের দমন করবে? সংশয়ের প্রধান কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশে মারাত্মক জঙ্গী তৎপরতা না থাকা সত্ত্বেও সরকার ভারতের সাহায্যের জন্য হা-পিত্যেশ করে চলেছে। ওদিকে ভারতও ‘এক পায়ে খাড়া হয়ে’ দাঁড়িয়ে রয়েছে। এজন্যই এমন আশংকা শক্তি অর্জন করেছে যে, ভারত এবং আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্দেশ্য আসলে বাংলাদেশের কথিত জঙ্গীদের দমন করা নয়। জঙ্গী দমনের আড়াল নিয়ে ভারত একদিকে তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামকে দমন ও ধ্বংস করতে চায়, অন্যদিকে চায় বাংলাদেশকে নিজের সন্ত্রাসের ভাগাড়ে পরিণত করতে।
মূলত এখান থেকেই বাংলাদেশের নিরাপত্তার প্রশ্নটি প্রাধান্যে এসেছে। বিশেষ কারণ হিসেবে আলোচিত হচ্ছে ভারতকে ট্রানজিট ও করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত। কারণ, রাষ্ট্রের অস্তিত্ব জড়িত থাকলেও এ ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গোপনে। জনগণকে জানানো দূরে থাকুক, সরকার এসব বিষয় নিয়ে জাতীয় সংসদেও আলোচনা করেনি। অথচ প্রমাণিত সত্য হলো, বাংলাদেশের প্রতি ভারতের নীতি ও মনোভাব মোটেও বন্ধুত্বপূর্ণ নয়। তাছাড়া পৃথিবীর কোনো ছোট দেশই প্রতিবেশী বড় দেশকে তার ভূমি, সড়ক ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে দেয় না। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি সব দিক থেকেই বিপজ্জনক। চট্টগ্রাম বন্দরের কথাই ধরা যাক। ধারণ ও পরিবহণ ক্ষমতা খুব কম বলে শুধু বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনকারী জাহাজগুলোকেই বন্দরে ও বহির্নোঙ্গরে দিনের পর দিন, এমনকি মাসেরও বেশি পর্যন্ত আটকে থাকতে হয়। কন্টেইনার জটও সেখানে নিয়মিত বিষয়। ভারতকে যদি ওই বন্দর ব্যবহারের সুযোগ দেয়া হয় তাহলে এখনকার চাইতে কয়েকশ’ গুণ বেশি জাহাজ যাতায়াত করবে। ফলে জাহাজ ও কন্টেইনার জটও ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। চুক্তি থাকায় ভারত ক্ষয়ক্ষতি মানবে না। তখন ভারতীয় জাহাজকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে প্রথমে বাংলাদেশের জাহাজকে বন্দরে ভিড়তে দেয়া হবে না। এতেও যখন সমস্যার সমাধান হবে না, তখন ভারত নিজেই বন্দর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ছিনিয়ে নেবে। ভারত একই সঙ্গে তার পণ্যের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে চাইবে। সড়ক পাহারা দেয়ার এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্যে পণ্য আনা-নেয়া নিশ্চিত করার জন্য পর্যায়ক্রমে সারা দেশে অবস্থান নেবে ভারতীয় সেনাবাহিনী। ফলে বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব মারাত্মকভাবে বিঘিœত হবে। কারণ, আগেই বলা হয়েছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ‘সেভেন সিস্টারস’ নামে পরিচিত রাজ্যগুলোতে বহু বছর ধরে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রাম চলছে। ভারত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ওই স্বাধীনতা সংগ্রাম ধ্বংস করার জন্য সেনাবাহিনী পাঠাবে এবং বাংলাদেশকে ভারতের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে হবে।
সব মিলিয়ে কোনো বিবেচনাতেই ভারতকে ট্রানজিট-ট্রানশিপমেন্ট বা করিডোর দেয়ার এবং সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে দেয়ার সিদ্ধান্ত সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। অন্যদিকে সরকারের পক্ষ থেকে এই বিরোধিতাকে প্রথম থেকে ‘জুজুর ভয়’ হিসেবে ব্যঙ্গ করা এবং দেশপ্রেমিকদের বিরোধিতাকে নাকচ করে হয়েছে। এখনও সরকার তার বক্তব্য ও মনোভাবে পরিবর্তন করেনি। ভারতের জন্য বাংলাদেশের দরজা খুলে দেয়ার ঘোষণাও জোরেশারেই দেয়া হচ্ছে। অথচ বাণিজ্য, পানি আগ্রাসন, ছিটমহল ও সীমান্ত সমস্যা এবং সমুদ্রসীমাসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের যে কোনো পর্যালোচনায় দেখা যাবে, ভারত শুধু নিতেই জানে, দিতে নয়। চুক্তি লংঘন করা এবং প্রতিটি বিষয়ে প্রতারণা ও চাতুরির আশ্রয় নেয়ার ব্যাপারেও ভারতের কোনো জুড়ি নেই। এজন্যই ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শুধু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এসেছে। বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতীয়দের নীতিতে পরিবর্তন ঘটবারও কোনো সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না। তা সত্ত্বেও সরকার জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আপস করে চলেছে। ‘কিছু একটা’ পাওয়াকেই সরকার বাংলাদেশের নদী-সমুদ্র ও জমিন ভাড়া দেয়ার জন্য যথেষ্ট মনে করছে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে শুধু নয়, বাংলাদেশের প্রতি অনুসৃত নীতি এবং বাংলাদেশ বিরোধী কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতেও দেশপ্রেমিকরা ভারতের সঙ্গে বেশি মাখামাখির বিরোধিতা করে এসেছেন। তারা যথার্থই বলেছেন, শুধু বাংলাদেশ ‘বন্ধুত্বের হাত’ বাড়িয়ে দিতে চাইলে চলবে না, যার উদ্দেশে এই হাত বাড়ানো, তার দিক থেকেও সমান সাড়া ও সহযোগিতা আসা দরকার। কিন্তু ভারত এ পর্যন্ত কখনো কোনো বিষয়েই তেমনভাবে সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয়দের নীতি ও মনোভাবে পরিবর্তন ঘটবারও কোনো সম্ভাবনা নেই। ভারতীয়রা বরং সকল উপলক্ষেই তাদের প্রকৃত মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছেন। এজন্যই সরকারের উচিত সবকিছুর আগে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া।