তীব্র গরম আর ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে ত্রাহি অবস্থা জনজীবনে। টানা বৃষ্টিহীন সময় যাচ্ছে। এ কারণে বাড়ছে গরমের তেজ। এমন অবস্থায় ঘরেও স্বস্তিতে থাকার সুযোগ মিলছে না লোডশেডিংয়ের কারণে। দিনে রাতে সমান তালে হচ্ছে লোডশেডিং। গ্রাম-শহর কোথাও স্বস্তি নেই। টানা কয়েক ঘণ্টাও বিদ্যুৎ থাকছে না কোনো কোনো এলাকায়। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সামনে আরও কয়েকদিন বৃষ্টির অপেক্ষায় থাকতে হবে। এই সময় খরতাপে পুড়বে পুরো দেশ। এমন পরিস্থিতিতে লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতিরও কোনো সম্ভাবনা নেই।
নগরায়নের প্রভাবে রাজধানী ঢাকার বাসিন্দাদের অবস্থা আরও নাজেহাল। ঢাকার শনিবারের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে তাপ অনুভূত হচ্ছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। এই তীব্র গরমের মাঝে লোডশেডিংয়ের কবলে নগরবাসী। শুক্রাবাদের বাসিন্দা আফরিদা ইফরাদ হিমিকা বলেন, রাতে একটার দিকে কয়েকদিন ধরেই বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। একঘণ্টা পর আসে। এরপর ফের ৪টার দিকে বিদ্যুৎ যায়। দিনে প্রায় ৩ থেকে ৪বার একঘণ্টা করে বিদ্যুৎ থাকছে না।
পান্থপথের বাসিন্দা আকবর হোসেন বলেন, আমি যে বাড়িতে থাকি সে বাড়িতে কোনো আলো বাতাস ঢোকে না। এরপর তীব্র গরমে রাতে দু’বার করে বিদ্যুৎ থাকে না। গরমে অতিষ্ট। ঘুমতো দূরের কথা হাঁসফাঁস লাগে। আমার বাসায় বৃদ্ধ বাবা-মা থাকেন। এত গরম বাবার উচ্চ রক্ত চাপ দেখা দেয়। তিনি বলেন, সারারাত ঘুম হয় মাত্র কয়েক ঘণ্টা। এরপর আবার সকালে অফিসে যেতে হয়।
তীব্র তাপদাহের মাঝে আবহাওয়া অধিদপ্তর যেমন সুখবর দিচ্ছে না তেমনি সুখবর দিতে পারেননি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও। তিনি গতকাল একটি অনুষ্ঠানে বলেন, কয়েকটি পাওয়ার প্ল্যান্ট কাজ না করায় লোডশেডিং বেড়েছে। কিছুদিন এ পরিস্থিতি থাকবে। কয়লার অভাবে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র (পায়রা) অর্ধেক বন্ধ আছে, আগামী ৫ তারিখের (জুন) পর বাকি অর্ধেকও বন্ধ হয়ে যাবে। সিস্টেমে একটি বড় অংশ বিদ্যুৎ না পাওয়ায় জনদুর্ভোগ কিছুটা বেড়েছে।
দেশের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে বড় ভূমিকা পালন করে আসছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। টানা ৩ বছর ধরে চলছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র। কিন্তু কয়লা সংকটের কারণে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণরূপে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হতে হচ্ছে। সোমবার থেকে পুরোপুরি বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে এই কেন্দ্রে। প্রথম ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। এবার দ্বিতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে ২০২০ সালে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। কেন্দ্রটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা কিনতে ঋণ দেয় চীনা অংশীদার চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল মাস পর্যন্ত বকেয়া বিল দাঁড়ায় প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন ডলার। এ বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় সিএমসি কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন করে কয়লা আমদানির জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকার যৌথভাবে ১০০ মিলিয়ন ডলার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। জুনের শেষে কয়লা আসলে আবার পুরোপুরিভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু করা হবে। পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শাহ আব্দুল হাসিব গণমাধ্যমকে বলেন, এলসি খোলা হয়েছে। আগামী ২৫শে জুন প্রথম কয়লাবাহী জাহাজ পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে আসবে। এতে ২১ দিনের আগে বিদ্যুৎ চালু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম বলে জানান তিনি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, এখন গড়ে ২ হাজার মেগাওয়াটের মতো লোডশেডিং হচ্ছে। সামনে এটি আরও বাড়তেও পারে। এ ছাড়া অত্যধিক গরম এবং বৃষ্টি না হওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদাও বেড়েছে। এমন অবস্থায় পালা করে প্রত্যেক এলাকায় লোডশেডিং করতে হচ্ছে।