আজ জাতীয় চা দিবস। দেশজ চা উৎপাদনে পঞ্চগড়সহ উত্তরের কয়েকটি জেলা নিয়ে সমতলের চা অঞ্চল এরই মধ্যে দেশে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে ক্রমাগতভাবে সবুজ চা পাতার দাম কমে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ বাগান মালিকরা। চা কারখানার মালিকদের সিন্ডিকেটের কারণে নির্ধারিত মূল্যের অর্ধেক দামে পাতা দিতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। জাতীয় চা দিবসে চা চাষিদের অস্তিত্ব রক্ষায় কাঁচা পাতার দাম সর্বনি¤œ ৪০ টাকা কেজি নির্ধারণ, পঞ্চগড়ে সরকারিভাবে চা কারখানা প্রতিষ্ঠা করাসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে পঞ্চগড়ে মানববন্ধন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে চা বাগান মালিক সমিতি। আজ রোববার সকালে জেলা শহরের চৌরঙ্গী মোড় থেকে সরকারি অডিটোরিয়ামের সামনে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের পাশে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধনে অংশ নেবেন চা বাগান মালিকরা।
২০০০ সালে পঞ্চগড়ে চা চাষ শুরু হওয়ার পর থেকেই বাড়তে থাকে আবাদি জমির পরিমাণ। এরপর থেকে আশপাশের ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুরে ছড়িয়ে পড়ে সমতলের চা চাষ। দেশজ চা উৎপাদনে দেখা দেয় নতুন সম্ভাবনা। প্রতি বছরই চা উৎপাদনে রেকর্ড করতে থাকে এই চা অঞ্চল। চা বোর্ডের হিসাবে এই অঞ্চলে প্রায় ১৩ হাজার একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে শুধু পঞ্চগড়েই রয়েছে ১০ হাজার একরেরও বেশি বাগান। বড় বাগানের পাশাপাশি এখানে ক্ষুদ্র চা চাষির সংখ্যাও ১০ হাজারের বেশি। সার, কীটনাশকসহ মজুরি বৃদ্ধির কারণে এবং প্রচণ্ড খরায় সেচ দেয়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেলেও সবুজ পাতার দাম নি¤œমুখী। বাগান মালিকদের দাবি, চা কারখানাগুলো কাঁচা চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটির নির্ধারিত ১৮ টাকা কেজি দরে পাতা না নিয়ে বর্তমানে ১৩ থেকে ১৪ টাকা দরে কাঁচা পাতা কিনছে। এ ছাড়া বড় আকারের চা পাতা আনার অজুহাতে শতকরা ৩০-৪০ শতাংশ কেটে রাখছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। চা কারখানা বাড়ার সাথে সাথে প্রতিযোগিতা করে কাঁচা চা পাতার মূল্য বাড়ার কথা থাকলেও সিন্ডিকেট করে সব কারখানা একই দামে পাতা কিনছে বলে দাবি বাগান মালিকদের। এ অবস্থায় অনেক চা বাগান মালিক কেটে ফেলছেন চা গাছ। তবে আগের মতোই খোঁড়া যুক্তি দেখাচ্ছেন কারখানা মালিকরা। তারা বলছেন কাঁচা চা পাতা মূল্য নির্ধারণ কমিটি বাগান থেকে চা পাতার কচি চা আনার নির্দেশনা দিলেও বাগান মালিকরা তার চেয়েও দ্বিগুণ বা তারও বেশি কাণ্ডসহ ভেজা পাতা আনায় চায়ের মান খারাপ হচ্ছে। নিলাম মার্কেটে তারা সর্বনি¤œ দরে চা পাতা বিক্রি করার নির্ধারিত দামে তারা পাতা কিনতে পারছেন না।
তেঁতুলিয়ার চা চাষি ইউসুফ আলী বলেন, প্রতি বছর বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ। আগের চেয়ে বেশি করে কীটনাশক ¯েপ্র করতে হচ্ছে। সারের দামও অনেক বেড়ে গেছে। পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় চা বাগানে সেচ দিতে হচ্ছে। এক কেজি কাঁচা চা পাতা তুলতে শ্রমিকদের দিতে হয় ৩ টাকা। ধার-দেনা আর এনজিওর ঋণ নিয়ে চা বাগানে বিনিয়োগ করেছি। সার-কীটনাশকের দোকানে অনেক টাকা বাকি। আর কত লোকসান গুনবো। তাই বাধ্য হয়ে চা বাগান কেটে ফেলছি। এই জমিতে অন্য ফসল আবাদ করলেও বছরে অনেক টাকা পাবো।
বাংলাদেশ চা বোর্ড পঞ্চগড় আঞ্চলিক অফিসের উন্নয়ন কর্মকর্তা আমির হোসেন চা চাষিদের হতাশার কথা স্বীকার করে বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তিনি সভা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি আরো বলেন, চায়ের মান বাড়াতে চা বাগান মালিক ও কারখানা মালিকদের উদ্যোগ নিতে হবে। চা চাষিরা যেন ছোট আকারের পাতা কারখানায় আনে সে ব্যাপারে আমরা তাদের উদ্বুদ্ধ করছি। কারখানা মালিকদের বলেছি ছোট পাতা আনলে নির্ধারিত দামেই যেন তারা পাতা কিনেন। চায়ের মান বাড়াতে পারলে নিলাম মার্কেটে ভালো দাম পেলে কারখানা মালিকরাও বেশি দামে পাতা কিনতে পারবে। চা বোর্ডের চেয়ারম্যানও বিষয়টি অবগত।