>দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তরণে কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবিলম্বে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে
>আমীরে জামায়াতসহ সকল বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিতে হবে
>দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে
>জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ বন্ধ সকল শাখা কার্যালয় খুলে দিতে হবে
>জুলুম-নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে
>মিছিল-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে
>ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে
৩১ মে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান দেশের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সেক্রেটারি মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর জনাব নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব আবদুর রহমান মুসা প্রমুখ।
দেশবাসীর উদ্দেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের প্রদত্ত বক্তব্য নিচে তুলে ধরা হলোঃ-
“প্রিয় দেশবাসী
বাংলাদেশের এক কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা জানেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর অথবা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। দেশের প্রায় সকল রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য পোষণ করে এ দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলন করে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার জনগণের সে দাবি বাস্তবায়নের পরিবর্তে হুমকি-ধামকি, ভয়-ভীতি, গ্রেফতার, মিথ্যা মামলা দায়ের ও নেতৃবৃন্দকে অন্যায়ভাবে আটক রেখে আবারো একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।
২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করার জন্য সমঝোতার মাধ্যমে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা দখল করে। এরপর কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। ২০১৪ সালের নির্বাচনটি এক প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত হয়। ১৫৪টি আসনে সরকারি দল ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থী ছিল না। ফলে এই ১৫৪টি আসনে কোনো নির্বাচন হয়নি। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই উল্লেখ করেছিলেন এটি নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। শীঘ্রই আরেকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু তিনি তাঁর কথা রাখেননি। ২০১৮ সালের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে বলে ঘোষণা করলেও আগের রাতেই ব্যালট পেপার ছিনতাই করে আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের বিজয়ী করার ব্যবস্থা করা হয়। এটি মধ্য রাতের নির্বাচন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। কার্যত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। গত ১৫ বছরের কর্তৃত্ববাদী শাসনামলে দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। প্রশাসনের পেশাদারিত্ব বলতে কিছুই নেই। দলীয় লোকদের দ্বারা প্রশাসন ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজিয়ে বিরোধী দলকে হয়রানি করা হচ্ছে। বিশেষ করে দলীয় ক্যাডারদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে অব্যাহতভাবে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর চরম জুলুম-নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
সচেতন দেশবাসী,
আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় বসার পর গত ১৫ বছর যাবৎ দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ধ্বংস করেছে। ভোটাধিকারসহ মানুষের সকল মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীকে সমূলে উৎপাটন করার রাষ্ট্রীয় তাণ্ডবতা চালিয়েছে। গত ১৫ বছরে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ২৪৬ জন নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়, ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয় বিভিন্ন রাজনৈতিকক দলের ৮৬ জন নেতাকর্মীকে, গ্রেফতার করা হয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৯১,২৪৬ জন নেতাকর্মীকে, জামায়াতের মহিলা বিভাগের ১,০৮৭ জন নারীকে গ্রেফতার করা হয়। ইসলামী ছাত্রশিবিরের ১৭,৪৬৩ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী ৬৭৬ জন ছাত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। এ পর্যন্ত সরকার জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১৪,৩০৯টি এবং ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৯,৫৮৪টি মামলা দেয়। আওয়ামীলীগের ১৫ বছরের দুঃশাসনের আমলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলায় ৭৫,০৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়। পায়ে বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি করে ও শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে ৫,২০৪ জন নেতাকর্মীকে পঙ্গু করে দেয়া হয়। ১৫ বছরে ৯৬,০৯৩ জনকে রিমান্ডে নিয়ে অমানসিক নির্যাতন চালানো হয়। গুম ও অপহরণ করা হয়েছে ২৫ জন নেতাকর্মীকে। দেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ামীলীগের ক্যাডার ও রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌথভাবে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে ৫ হাজারেরও বেশি বাড়ি ঘর ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আওয়ামী সরকারের ১৫ বছরের শাসনকাল হচ্ছে জুলুম-নির্যাতন ও নিপীড়ন চালিয়ে এবং রাষ্ট্রীয় শক্তি ব্যবহার করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নির্মূল করার হীন চেষ্টা চালানো। জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েও জামায়াতে ইসলামী গঠনতন্ত্রে বর্ণিত নিয়মতান্ত্রিক, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শান্তিপূর্ণভাবে তার দলীয় তৎপরতা চালিয়েছে এবং দেশের সামগ্রিক কল্যাণে কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।
এই সরকার স্বাধীন মত প্রকাশে বিশ্বাস করে না। বাংলাাদেশের সংবিধানে স্বাধীনভাবে চলাফেরা, মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ মিছিল-সভা সমাবেশ করার অধিকার রাখা হয়েছে। সংবিধান স্বীকৃত এই অধিকার বাস্তবায়নে সহযোগিতা করা রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান দায়িত্ব। সংবিধান হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন। যেহেতু সংবিধানে মিটিং-মিছিল করার কথা বলা হয়েছে, তাই মিটিং-মিছিলে বাধা দেয়ার ক্ষমতা কারো নেই। অথচ গত ১৫ বছর যাবত রাজপথে কথা বলতে দেয়া হচ্ছে না। এমনকি পুলিশের নিকট শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতা ও অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হলে উল্টো হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। ২৮ মে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের নিকট অনলাইনে ৫ জুন সমাবেশের জন্য আবেদন করে। ২৯ মে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের ৪ জন আইনজীবীর একটি প্রতিনিধি দল কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন, নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ৫ জুন সমাবেশ করার আবেদন নিয়ে ডিএমপি কমিশনারের নিকট গেলে কমিশনার কার্যালয়ের গেট থেকে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। মত প্রকাশ ও সভা-সমাবেশে বাধা দেয়ার এটি একটি নিকৃষ্ট নজির হয়ে থাকবে।
প্রিয় দেশবাসী,
সভা-সমাবেশ এবং মিছিলের আয়োজন করলেই সেখানে গুলি চালিয়ে ও লাঠি চার্জ করে গণগ্রেফতার চালানো হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় অফিসসহ দেশের অধিকাংশ জেলা/মহানগরী অফিস বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। স্বাধীন মত প্রকাশকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য জাতীয় সংসদে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করে জনগণের কণ্ঠ রোধ করা হয়েছে এবং সাংবাদিকদের ওপর দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে। এ সরকারের আমলে ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টিভি, চ্যানেল ওয়ান, দৈনিক আমার দেশ, দৈনিক দিনকালসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেল, জাতীয় দৈনিক এবং বহু অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে সাংবাদিক হত্যা করার পরও তার বিচার হয়নি। সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যার তদন্তের প্রতিবেদন পেশ ধার্য তারিখ ৯৮ বার পরিবর্তন করা হয়েছে।
বিগত ১৫ বছর যাবত দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। বর্তমান সরকারের আচরণে মনে হচ্ছে কেউ বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না, নির্বাচন করতে পারবে না, সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে পারবে না। এমনকি অন্যায় ও মিথ্যার বিরুদ্ধে কোনো কথাও বলতে পারবে না। সরকার মূলত বাংলাদেশকে একটি গণতন্ত্র ও মানবাধিকারহীন রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশের মানুষের দৃষ্টি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় এই সরকারকে বিতাড়িত করে তাদের পছন্দের সরকারকে ক্ষমতায় বসাতে চায়। কিন্তু সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মত একটি নির্বাচন করার নীল নকশা প্রণয়ন করে আবারো ক্ষমতায় বসার পরিকল্পনা করেছে।
মূলত এই সরকার গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থাকে পদদলিত করেছে। সরকারের চরম ব্যর্থতা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও সুষ্ঠু নির্বাচন পদ্ধতিকে ধ্বংস করার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে মার্কিন ভিসা পলিসির শিকার হতে হয়েছে। এই কলঙ্ক বাংলাদেশের জনগণের নয়, সরকারের। আরো স্পষ্ট ভাষায় বলতে গেলে, এই কলঙ্ক আওয়ামীলীগের। মানুষ হত্যা, গুম, খুন, ধর্ষণ, অর্থ আত্মসাৎ, অর্থ পাচার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ভোট ডাকাতিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা আওয়ামীলীগ করেনি। গণতান্ত্রিক অধিকার, মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকার পদদলিত করে সরকার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও উলামায়ে কেরামসহ অসংখ্য মানুষকে জেলখানায় আটকে রেখেছে এবং জেলগেট থেকে পুনরায় গ্রেফতার করে চরমভাবে আদালত অবমাননা করছে। রাষ্ট্রের আইন শৃঙ্খলা-বাহিনীর জুলুমের হাত থেকে নারী-পুরুষ এমনকি শিশুরাও রেহাই পায়নি। রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয় বাহিনীতে পরিণত করা হয়েছে। চর দখলের মত হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্যাংক দখল করে জনগণের অর্থ লুটপাট ও আত্মস্যাৎ করে বিশ্বের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। মানুষ হত্যা করে সেই লাশের ওপর নৃত্য করে সারা দুনিয়ায় নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। জনরোষের ভয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে আওয়ামীলীগ ভয় পাচ্ছে। এই সরকার সারা বিশ্বে একটি কলঙ্কিত সরকার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
সচেতন দেশবাসী,
বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র। এ দেশে গণতন্ত্রের যে ধারা তৈরি হয়েছিল, তা আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামীলীগ তার দলীয় স্বার্থ বজায় রাখার জন্য যে কৌশল অবলম্বন করেছে তা কোনো অবস্থাতেই বাস্তবায়ন হতে দেয়া যায় না। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি সংবিধানে সন্নিবেশিত করার জন্য গোটা আজ ঐক্যবদ্ধ। আওয়অমীলীগ সরকার জনগণের সেই দাবি পাশ কাটিয়ে তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস ও ঘোষণা দিচ্ছে, তা বাংলাদেশের জনগণ বিশ্বাস করে না। আওয়ামীলীগ সংবিধানের দোহাই দিয়ে দলীয় ক্যাডার ও রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যবহার করে নির্বাচনের নামে প্রহসনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার যে নীল নকশা প্রণয়ন করেছে তা জনগণ কিছুতেই মেনে নিবে না। সংঘাত-সংঘর্ষের পথ পরিহার এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করে আওয়ামীলীগ শুভ বুদ্ধির পরিচয় দিবে বলে জনগণ আশা করে।
আওয়ামীলীগের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করার জন্য এবং গণতন্ত্রের স্বাভাবিক ধারা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে আমাদের আহ্বান হচ্ছে –
১। কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে অবিলম্বে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
২। অবিলম্বে আটক জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি মাওলানা আনম শামসুল ইসলাম, সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর জনাব সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্য ও সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরীসহ সকল নেতাকর্মী ও আলেম-উলামাকে মুক্তি দিতে হবে।
৩। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পর মুক্তি না দিয়ে জেলখানায় আটক রাখার বেআইনী, অসাংবিধানিক ও মানবাধিকার পরিপন্থী কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে আটক নেতৃবৃন্দের মুক্তির পরিবর্তে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা ও বন্দি থাকাবস্থায় মিথ্যা মামলা দায়ের করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪। অবিলম্বে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ জেলা/মহানগরীর সকল কার্যালয় খুলে দিতে হবে।
৫। সংবিধান স্বীকৃত মিটিং-মিছিল ও সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৬। সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল্লাহিল আমান আযমী, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার আরমান আহমদ বিন কাসেম, হাফেজ জাকির হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা আল মোকাদ্দাস ও মোহাম্মদ ওলিউল্লাহসহ নিখোঁজ ব্যক্তিদেরকে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।
৭। সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৮। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি রোধ করে জনগণের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় আনতে হবে।
৯। বিদেশে পাচারকৃত সকল অর্থ ফেরত এনে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা করতে হবে এবং পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১০। বন্ধ সকল চ্যানেল, জাতীয় দৈনিক, অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু ও সাংবাদিক দমন পীড়ন বন্ধ করতে হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।
তিনি আরো বলেন,
প্রিয় দেশবাসী, দেশের সংকট নিরসনে জনগণকে সাথে নিয়ে জামায়াতে ইসলামী কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আপনাদের সাথে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে, ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, আমীন।”