নিত্যপণ্যের বাজার চড়া। বর্তমানে মাছ, মাংস, সবজিসহ সবকিছুই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। এরমধ্যে বৃহস্পতিবার সংসদে
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এতে নিত্যপণ্যের বাজারে এর প্রভাব পড়ার শঙ্কা প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। তারা বলছেন, প্রতি বছরই বাজেট ঘোষণার পর তার প্রভাব পড়ে নিত্যপণ্যের বাজারে। এখন বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। এ ছাড়া মাছের বাজারও চড়া। নতুন করে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হবে ক্রেতাদের জন্য।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলুর কেজি ৪০ টাকা, রসুন ১৬০ টাকা, কাচামরিচ ১৪০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৭০-৮০ টাকা, করলার কেজি ৬০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, বেগুন ৬০-৭০ টাকা, ডিমের ডজন ১৪০ টাকা, পিয়াজ ৯০ টাকা, আদা ৩০০ টাকা, কাঁকড়ল ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা, কাঁচা কলা প্রতি হালি ৪০ টাকা হারে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৩০ টাকা, গরুর মাংস ৮০০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৯৫০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২শ’ টাকা। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২শ’ টাকা থেকে ২৫শ’ টাকা পর্যন্ত। পাঙ্গাশ মাছ প্রতি কেজি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, তেলাপিয়া মাছের কেজি ২২০ থেকে ২৫০ টাকা। তেল, চিনি, আটা-ময়দার দামও বাড়তি।
ক্রেতারা জানান, বাজেটের আগেই সবকিছুর দাম বাড়তি। এখন আবার প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে বাজেটে। এর প্রভাব কিছুদিন পর পড়বে। এদিকে সুযোগ পেয়ে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিতে শুরু করবে। এর চেয়ে আরও দাম বাড়লে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে যাবে। বিক্রেতারা বলছেন, বাজেটের আগে থেকেই বাজারে সবকিছুর দাম বাড়তি। তবে শঙ্কায় আছেন আড়তদাররা আরও দাম বাড়িয়ে দিলে তাদের অবস্থা কি হবে। তবে এখনো বাজেটের বাড়তি দামের কোনো প্রভাব পড়েনি।
মুদি দোকানি মিজানুর রহমান বলেন, পিয়াজ গতকালের চেয়ে আজ কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। তবে বাজেটের চাপটা কাঁচা বাজারে এখনো পড়েনি। নিত্যপণ্যের দাম এমনই উঠানামা করে সবসময়। যেমন আদার দাম বাড়ায় সরকার যদি ঠিকমতো বাজার তদারকি করে তাহলে কিছুটা কমতে পারি। এর দাম ছিল ২০০ টাকা কেজি। কিন্তু বর্তমান বাজারে ৩০০ টাকা। আমাদেরও বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে। আমরা ১০-২০ বিশ টাকা লাভে বিক্রি করি। তিনি বলেন, আগে একসময় আম, লিচু আমার ঘর ভর্তি থাকতো। বাচ্চারা ঘরে দৌড়াতো আর খেতো। কিন্তু এই বছর এখনো লিচু কিনতে পারিনি।
এদিকে দোকানে ক্রেতাও কম। কারণ একজন ব্যবসায়ী হলেও দিন শেষে আমারও কিন্তু পরিবার আছে। বর্তমানে আয়-ব্যয়ের সঙ্গে কোনো হিসাব মেলাতে পারছি না।
আরেক বিক্রেতা রাশেদ বলেন, পাইকারি বাজার থেকে আমাদের সবকিছু বাড়তি দামে কিনে আনতে হচ্ছে। পরিবহন, শ্রমিক খরচ দিয়ে আমাদের কিছুই থাকে না। আগের চেয়ে ক্রেতাও কম। নিত্যপণ্যের দাম কমলে তো আমাদের জন্য ভালো। ক্রেতাদেরও স্বস্তি মিলবে এদিকে আমরা চাহিদা অনুযায়ী বিক্রি করতে পারবো।
ফার্মগেট কাঁচা বাজারে আসা ক্রেতা অনিক বলেন, বাজেট ঘোষণার আগে নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসার সুখবরের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু সেটা হয়নি আগের দাম বাড়তির সঙ্গে আরও বাড়তি দাম সংযুক্ত হয়েছে। সবকিছুর দামের তালিকা আরও দীর্ঘ হয়েছে। এটা সাধারণ জনগণের বাজেট হয়নি।
মালিবাগ বাজারে কেনাকাটা করতে আসা বিপ্লব বলেন, কয়েকমাস ধরে অতিরিক্ত দামে সবকিছু ক্রয় করতে হচ্ছে। এখন আবার শুরু হবে বাজেটের উত্তাপ। আমাদের সাধারণ জনগণের কথা কেউ ভাবছে না। আগে যে পরিমাণ কেনাকাটা করতাম তার তিন ভাগের এক ভাগও কিনতে পারছি না।
ক্রেতা শিউলি আক্তার বলেন, আগে এমনিতেই জনগণ প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হিমশিম খেতো। এখন দাম বেড়ে যাওয়ায় দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবে আমাদের। সবকিছু সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে আসলে সুস্থ জীবন-যাপনও সহজ হয়ে যেতো। এখন তো আমরা অসুস্থ জীবন-যাপন করছি। এদিকে বেতন বাড়ে না। মাস শেষ হওয়ার আগে টাকা খরচ হয়ে যায়। নিত্যপণ্য আমাদের সবসময় প্রয়োজন হয়। বাজেট ঘোষণার পর আরও শঙ্কা বেড়ে গেছে। এই শহরে টিকে থাকতে পারবো কিনা।