গেলো ফেব্রুয়ারি মাসে শিল্প খাতে ১৭৯ শতাংশ গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার । তারপর নিরচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছে না শিল্প মালিকরা। ফলে গ্যাস সংকটের কারনে গার্মেন্টস সেক্টর থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিল্পখাতে কমেছে উৎপাদন। সংকটের কারণে সময় মতো মালামাল সরবরাহ করতে না পারার কারনে বিদেশী ক্রেতা হারাচ্ছে কারাখানার মালিকরা। তাদের অভিযোগ, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের কথা বলে গ্যাসের দাম বাড়নো হয়েছে । কিন্তু এর কোন সুফল নেই। শিল্পকারখানা পরিচালনা করতে গিয়ে অনেকটা অসহায় তারা।
সূত্র জানায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গণশুনানি ছাড়াই (সদ্য মঞ্জুর করা নীতি) বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমন্বয় করলো। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম বর্তমানের ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বেড়ে ১৪ টাকা হয়েছে । বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর কয়েকদিন পর আবাসিক, সার ও চা উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস ছাড়া অন্য খাতে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম ১৪ থেকে ১৭৯% পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।
সূত্র জানায়, দ্বিতীয়বারের মতো সরকার গণশুনানি ছাড়াই (সদ্য মঞ্জুর করা নীতি) বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম সমন্বয় করে । এর আগে ১২ জানুয়ারি সরকার খুচরা পর্যায়ে দাম ৫% বাড়িয়ে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুতের দাম ৭.৪৮ টাকা করার ঘোষণা দেয়। নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম বর্তমানের ৫ টাকা ২ পয়সা থেকে বেড়ে ১৪ টাকা হবে (১৭৯% বৃদ্ধি)। এছাড়া ক্যাপটিভ পাওয়ার প্লান্টের গ্যাসের দাম ১৬ টাকা থেকে বেড়ে ৩০ টাকা হবে (৮৮% বৃদ্ধি)। বৃহৎ শিল্পের ক্ষেত্রে এই দাম ১১ টাকা ৯৮ পয়সা থেকে বেড়ে ৩০ টাকা হচ্ছে (১৫০% বৃদ্ধি)।
সূত্র জানায়, মাঝারি শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের নতুন দাম ১১ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০ টাকা (১৫৫% বৃদ্ধি)।এছাড়া হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বেলায় গ্যাসের মূল্য হবে ৩০ টাকা ৫০ পয়সা, যেখানে এতদিন দাম ছিল ২৬ টাকা ৬৪ পয়সা (১৪% বৃদ্ধি)।তবে আবাসিক, সার ও চা উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। গত বছরের জুনে, রিটেইল গ্রাহকদের জন্য গ্যাসের গড় দাম ২২.৭৮% বাড়ায় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
এদিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি বাংলাদেশের ব্যবসা খাতে প্রতিযোগিতার ক্ষতি করতে পারে বলে তখন আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন কয়েকজন শিল্পপতি। যদিও অনেকেই নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য আরও বেশি অর্থ দিতে তখন ইচ্ছুক ছিল। গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরও শিল্প কারখানা পাচ্ছেনা গ্যাস।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের বৃহৎ সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান জানান, আমরা এখন অসহায়। নিরীহ মানুষের থেকেও আমরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা যারা গার্মেন্টে ব্যবসার কারণে ডলার নিয়ে ব্যবসা করি আমাদের মতো অসহায় অবস্থা অন্য কোন ব্যবসায় দেখা যায় নাই।
সেলিম ওসমান বলেন, ব্যাংক আমাদের ডলারের লিমিট দিয়েছে। হঠাৎ সকালে শুনলাম ডলারের লিমিট ৩০ পার্সেন্ট কমিয়ে দিয়েছে। এটা কেমন কথা। আমরা এলসি খুলছি আমাদের যারা সাপ্লাই করছে তাদেরকে ডলার দেয়া যাচ্ছে না। কারণ ব্যাংকের কাছে ডলার রিজার্ভ নাই। আমাদেরকে মালামাল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। কয়েকদিন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। ডলারের অভাব।
তিনি বলেন, গ্যাস আমাদের শেষ হয়ে গেছে। সরকার আমাদেরকে বললেন তোমরা যদি ইমপোর্টের পয়সা দাও আমরা তোমাদেরকে গ্যাস দিবো। আমরা দীর্ঘ মিটিং করলাম। রাজি হয়ে গেলাম গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে দেন। ১০০ পার্সেন্ট বৃদ্ধি করে দেয়া হলো। আমাদের মানুষগুলোকে বাঁচতে হবে। আমরা বাঁচবো কিনা সেটা কথা ছিল না শ্রমিক ভাইয়ের বাঁচার কথা চিন্তা করি। ৬৫ পার্সেন্ট মহিলা শ্রমিক আমাদের কাজের উপর নির্ভর করছে।
কোনো লাভের মুখ দেখেন না উল্লেখ করে সেলিম ওসমান বলেন, অনেকে মনে করেন আমরা যারা ব্যবসা করি আমরা যারা এক্সপোর্ট করি আমরা খুব ভালো আছি। বিশ্বাস করেন আমাদের মতো অবস্থা কারও নেই। আমরা অসহায় এখন। আমরা লাভের মুখ দেখি না। আমরা লস করতে করতে এমন জায়গায় এসে ঠেকেছি আমার কাছে মনে হয় আমার দাদা যে ব্যবসা (পাটের ব্যবসা) করতো আমরা সে ব্যবসা করছি।
ফতুল্লা পঞ্চবটির বিসিক শিল্পনগরীর ক্রোনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএইচ এম আসলাম সানী জানান, আড়াই বছর ধরে গ্যাস সংকটে ভুগছি। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের পরে অর্থনৈতিক যে মন্দা, সেই মন্দায় প্রত্যেকটি বায়ার ৩০ শতাংশ আরএমজি কম দিচ্ছে, ডিমান্ড কমে গেছে মার্কেটে। ডিমান্ড কমে যাওয়ায় আমরা কিছু কিছু অর্ডার পাচ্ছি। আবার টিকে থাকার জন্য অর্ডারগুলো এক্সিকিউট করতে পারছি না, গ্যাস সংকটের কারণে। গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর পর ব্যবসায়ীদের নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস দেওয়া হবে বলে সরকার জানিয়েছিল, কিন্তু সেটা বিভিন্ন কারণে ব্যাহত হচ্ছে।