চলতি বছরের হজযাত্রায় অনিয়ম অব্যবস্থাপনা অব্যাহত রয়েছে। এর বেশির ভাগ অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার সাথে বেসরকারি এজেন্সি মালিকরা জড়িত। এছাড়া হাজীদের সেবায় নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তারাও নানা অব্যবস্থাপনায় জড়িয়ে পড়ছেন। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন হজযাত্রীরা। ধর্মমন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ নিলেও তাতেও বন্ধ হচ্ছে না অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা।
বাংলাদেশ থেকে এ বছরের হজযাত্রা শুরু হয় গত ২১ মে থেকে। ওই দিনই ভিসা না হওয়ায় ১৪০ জন হজযাত্রী সময়মতো হজে যেতে পারেননি। অনেক বিড়ম্বনা শেষে পরদিন তারা হজে যেতে বাধ্য হন। জান্নাত ট্রাভেলস নামের একটি হজ এজেন্সির মাধ্যমে তাদের সৌদি যাওয়ার কথা ছিল। আবার প্রথমদিন সৌদিতে নেমেই অনেক হাজী বিপাকে পড়েন। বেসরকারি এজেন্সি ভিসায় যেখানে বাসা ভাড়া করেছেন সেখানে তাদের ওঠাননি। এতে দীর্ঘসময়ের ভ্রমণ কান্তির পরও নতুন করে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাদের। এভাবে হজে যাওয়ার আগে যাত্রীদের এক হোটেলের কথা বলে অন্য হোটেলে ওঠানোর প্রতারণায় দায়ে আট এজেন্সিকে শোকজ করেছে ধর্মমন্ত্রণালয়। ওই এজেন্সিগুলো হলো আল কাশেম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, ইউরো বেঙ্গল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম, ইউরোপা ট্রাভেলস, কে আই ট্রাভেলস, এল আর ট্রাভেলস, এন জেড ফাউন্ডেশন অ্যান্ড হজ মিশন, সাকের ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস ও সঞ্জরি ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস। এভাবে হজযাত্রার শুরুর পর থেকেই দেশে ও সৌদি আরবে হজযাত্রীরা নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সর্বশেষ সৌদি আরবে যাওয়ার পর ৩৪ হজযাত্রীকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ এয়ার ট্রাভেলস নামে একটি এজেন্সির বিরুদ্ধে। এজেন্সির বিরুদ্ধে অভিযোগ, হজযাত্রীদের সেখানকার বাড়ি ভিসার সাথে মিল না থাকায় লাগেজ নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়েছে সৌদির ট্রাক চালককে। একপর্যায়ে যাত্রীদের লাগেজ সৌদির হজ মিশনে রেখে দেন ট্রাকচালক। পরে এজেন্সির পক্ষ থেকে নেয়ার ব্যাপারেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। একইভাবে সৌদিতে ৭৪ জন হজযাত্রীর জন্য আল আমানা ওভারসিজ এজেন্সি কবুতর চত্বরের পাশে নামারা শামস নামে একটি হোটেলে ওঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাদের কাবা ঘর থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার দূরের শাওকিয়া নামে একটি এলাকার হোটেলে রেখেছে। এ দুটি ঘটনায় সংশ্লিষ্ট এজেন্সিকে শোকজ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
একইভাবে সাবওয়ে ট্রাভেলস অ্যান্ড হলিডেস এজেন্সির বিরুদ্ধে দুইজন হজযাত্রীর ভিসা না করা ও তাদের সাথে খারপর আচারণ করার অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে তিনটি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে ৪৫ জন হজযাত্রীর চূড়ান্ত নিবন্ধনের পরও গোপনে তাদের নিবন্ধন বাতিল করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে তাদের হজে যাওয়া এখন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ধর্ম মন্ত্রণালয় ওই তিন এজেন্সিকে শোকজ করেছে।
এর মধ্যে সৌদি আরবে গত ২৪ মে ৯ লাখ রিয়াল নিয়ে সৌদি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন কোবা এয়ার ইন্ট্যারন্যাশনালের মালিক মো: মাহমুদুর রহমান এবং তার ছেলে ইউরো ও আহসানিয়া হজ মিশনের মালিক সাদ বিন মাহমুদ। তাদের অধীনে ৮২৩ হজযাত্রীর ১ জুন সৌদি আরবে যাওয়ার কথা। কিন্তু মালিক আটক হওয়ায় ওই তিন হজ এজেন্সির অধীনে নিবন্ধিত ৮২৩ জনের হজ পালন নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। তবে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মধ্যস্থতায় তাদের সৌদিতে পাঠানো হচ্ছে। আপাতত তিন ধাপে ২৭২ জনকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে এজেন্সির মালিকরা মুক্তি পেলে বাকিদের বিষয়ে তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। না হয় হাব বাকিদের হজে পাঠাবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির সভাপতি। এ বিষয়ে হাব সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম জানিয়েছেন, আপাতত ২৭২ জনকে তিনটি ফ্লাইটে হজে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে মালিকদের মুক্তি হয়ে গেলে বাকিরা মালিকদের তত্ত্বাবধানে যাবে। আর মুক্তি না হলে হাব পর্যায়ক্রমে বাকিদের হজে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। তিনি বলেন, মালিক গ্রেফতার হয়েছে এজন্য তো হজযাত্রীরা দায়ী না। তাদের হজের পাঠানোর জন্য হাব দায়িত্ব নিয়েছে। আগামী ২ জুন, ৪ জুন এবং ১৫ জুন এই তিন ধাপে মোট ২৭২ জন হাজীকে হজে যাওয়ার ফ্লাইটের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। জানা গেছে, আটক হওয়া এজেন্সির মালিক ও তার ছেলে তিনটি এজেন্সির হজযাত্রীদের সৌদি আরবে পাঠানোর জন্য কাজ করছিলেন। তাদের আটকের ফলে সৌদি আরবে সেখানকার প্রস্তুতিমূলক কাজে সমস্যা দেখা দেয়। এ অবস্থায় ৮২৩ হজযাত্রী হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশনে যোগাযোগ করলে তাদের প্লেনের টিকিট সংগ্রহের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়াসহ ফ্লাইটের তারিখ ১০ দিন পিছিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রাথমিক তিন ধাপে ২৭২ জনকে হজে পাঠানোর সিদ্ধান্তের কথা জানানো হলো।
এদিকে হাজীদের সেবায় সৌদি গিয়েও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না অনেক কর্মকর্তা। এ কারণে কয়েক জনকে শোকজ করেছে ধর্মমন্ত্রণালয়। অভিযোগে জানা যায়, এসব কর্মকর্তারা হজযাত্রীদের সেবা দিতে গিয়ে তারা হাজিদের সেবা না দিয়ে সৌদির বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ নিয়ে ব্যস্ত। এমন এক ঘটনায় শুক্রবার সাত কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছে সৌদি আরবের বাংলাদেশ হজ অফিস। অনুমতি ছাড়া তারা তায়েফ ভ্রমণ করেছিলেন বলে জানা যায়।
শোকজ খাওয়া ব্যক্তিরা হলেন- মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো: সাইদুর রহমান ও শাহানা খানম, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের লোক প্রশাসন কম্পিউটার কেন্দ্রের (পিএসিসি) রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী মো: লিয়াকত আলী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো: নুর ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অফিস সহায়ক লাইজু আক্তার, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) রহিমা আক্তার, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোছা. জাহান আরা বেগম।
এর আগে সৌদি আরবের বাংলাদেশ হজ অফিস এক আদেশে হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য সেবায় স্থাপিত মেডিক্যাল সেন্টারে সময় মতো উপস্থিত না থাকায় হজ প্রশাসনিক সহায়তাকারী বিল্লাল হোসেন নামের একজনকে শোকজ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গত ২২ মে বিকেল ৩টায় মদিনায় সমন্বিত হজ চিকিৎসক দলের দলনেতার কাছে রিপোর্ট করার নির্দেশনা থাকলেও তিনি তা করেননি।