প্রতি কেজি আদার আমদানি মূল্য ১২৯-১৩০ টাকা। কিন্তু রাজধানীর সর্ববৃহৎ আড়ত শ্যামবাজারে ২৬০-২৮০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। এছাড়া জিরার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে, যা একেবারেই অযৌক্তিক। তাই কুরবানির ঈদের আগে আদাসহ অন্যান্য মসলার দাম নিয়ন্ত্রণে আজ থেকে বাজার কঠোরভাবে তদারকি করা হবে। অনিয়ম পেলে আইনের আওতায় আনা হবে।
রোববার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান এ কথা বলেন। মসলাজাতীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল ও সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সভাকক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন খুচরা-পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন। মহাপরিচালক বলেন, রোজার ঈদের পর থেকেই মসলাজাতীয় পণ্যের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে আদার দাম অনেক বেড়েছে। সেটা নিয়ে অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ থেকে শুরু করে রাজধানীর শ্যামবাজার, মৌলভীবাজার থেকে তথ্য নিয়েছি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও তথ্য নিয়েছে। সেই তথ্যের ওপর ভিত্তিতে বোঝা যাচ্ছে-সামনে কুরবানির ঈদ ঘিরে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, বিভিন্ন দেশের আদার মানের ওপরে নির্ভর করে প্রতি কেজির আমদানি মূল্য ১২৯-২৫০ টাকা। কিন্তু দেশের আড়তে বিক্রি হচ্ছে ২৬০-২৮০ টাকা। ২৫০ টাকার আদা ২৬০ বা ২৮০ টাকায় বিক্রি, এটা মানা যায়। কিন্তু ১২৯ টাকার কেনা আদাও আছে। সেই আদা আড়ত থেকেই ২৬০-২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটা কেন হবে? তিনি জানান, চীনের আদা কিছুদিন ধরে আমদানি হচ্ছে না। কিন্তু সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে চীনের আদা প্রতি কেজি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, বাজারে আমরা একটি শৃঙ্খলা আনতে চাই। বাজারে মূল্যতালিকা রাখতে হবে। ক্রয় রসিদ ও আমদানির মূল্যের তথ্য রাখতে হবে। কিন্তু আমরা সেটা দেখছি না। আমরা বারবার বলছি, ব্যবসায়ী সমিতির এসব দেখতে হবে। কিন্তু তার ব্যত্যয় দেখছি। আপনারা না পারলে বলেন আমরা কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। ব্যবসায়ী সমিতি অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ীদের শেল্টার দিচ্ছে। এটা ঠিক না। তিনি জানান, কুরবানির ঈদ ঘিরে আজ থেকে বাজারে কঠোরভাবে তদারকি করা হবে। এক সপ্তাহ তদারকি করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেব। আমরা চাই ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবেন। কিন্তু পার্বত্য চট্টগ্রামের আদা চায়না আদা বলে বেশি দামে বিক্রি করবেন। এটা ঠিক না। এলসি কত টাকা দিয়ে করা হচ্ছে, তা প্রতিদিন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। চায়না আদা আসেনি; কিন্তু চায়না আদা বলে বাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের উপপরিচালক মাহমুদ বলেন, প্রতি কেজি জিরার আমদানি ব্যয় হয় ৩৩২-৩৩৫ টাকা। কিন্তু বাজারে ৮০০-৮৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এলসি থেকে খুচরা বাজারে দামের অনেক পার্থক্য। পাশাপাশি আদা আমদানি হয়েছে প্রতি কেজি ১৭০-১৮০ টাকায়। পরিবহণে ১৫ শতাংশ নষ্ট হয়। সে লোকসান ধরেও দেশে আড়তে বিক্রয় মূল্য অনেক বেশি।
ব্যবসায়ীরা জানান, পণ্য আমদানির পর পোর্টে মালামাল আটকে যাচ্ছে। এজন্য সেখানে ভাড়া দিতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যে টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে, তা পণ্যের সঙ্গে যোগ হচ্ছে। কারণ, কোনো ব্যবসায়ী লস দিয়ে বিক্রি করবে না। তাই পণ্যের আমদানি মূল্যের সঙ্গে বিক্রয় মূল্য মিল থাকছে না।
ক্যাবের প্রতিনিধি ও ভোক্তা কণ্ঠের সম্পাদক আব্দুল হান্নান বলেন, সবচেয়ে আমাদের জন্য হুমকির সময় হচ্ছে কুরবানির ঈদের আগের ১৫ দিন। গরম মসলা, পেঁয়াজ, আদাসহ অন্যান্য মসলাজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। এ সময় বাজার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ভোক্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য সার্বিক তদারকি বৃদ্ধি প্রয়োজন।