আপনাদের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। যেটুকু সময় আছে সেই টুকু সময়ের মধ্যে অন্তত একটি ভালো কাজ করুন। গুম হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করুন। তা না হলে পরিণতির কথা চিন্তাও করতে পারবেন না।
গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ পালন উপলক্ষে মায়ের ডাকের উদ্যোগে প্রতিবাদী সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মায়ের ডাকের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি। মো: মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আফরোজা ইসলাম আঁখি। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা কমরেড সাইফুল হক, তাবিথ আওয়াল, মানবাধিকার সংগঠনের নেতা নূর খান লিটন, অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান, আন্তর্জাতিক চিত্রশিল্পী শহিদুল আলম, নারী নেত্রী ফরিদা আক্তার। ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুষ্টিয়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের গুম হওয়া সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন সবুজের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া, গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমনের ছোট মেয়ে আরোয়া ইসলাম, ড্রাইভার কাউসারের মেয়ে লামিয়া ইসলাম মীম, শিশু হৃদি, শিশু সাফা, মাহবুব হোসেন সুজনের ভাই সাকিল, বরিশালের গুম হওয়া ফিরোজ খান কালুর স্ত্রী আমিনা আক্তার বৃষ্টিসহ প্রমুখ।
নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রতি বছরই এই পরিবারগুলো তাদের স্বজনদের ফিরে পাওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় উপস্থিত হয়ে তাদের চোখে পানি আর কষ্ট ছাড়া কিছুই পায়নি। বছরের পর বছর কেটে গেলেও তাদের নিখোঁজ স্বজন কোথায় আছে, কেমন আছে, বেঁচে আছে কি না মরে গেছে কেউ জানে না। তাদের জন্মদিন থাকলেও কারো মৃত্যুদিন নেই। এখান থেকে উত্তরণের উপায় প্রধানমন্ত্রীকে খুঁজে বের করতে হবে। নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, আপনাদের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। যেটুকু সময় আছে সেইটুকু সময়ের মধ্যে অন্তত একটি ভালো কাজ করুন। তা না হলে পরিণতির কথা চিন্তাও করতে পারবেন না। ইতোমধ্যে দেখতে পাচ্ছেন, গাজীপুর সিটিসহ বিভিন্ন জায়গায় নৌকা ডুবতে শুরু করেছে। যে ঝড় শুরু হয়েছে তা চলতে থাকলে নৌকার অস্তিত্বও খুঁজে পাবেন না। আর প্রশাসনের যে ব্যক্তিরা কিছু সংখ্যক ব্যক্তির পরামর্শে এই অন্যায় কাজগুলো করেছেন, আপনারা যেখানেই থাকুন না কেন আপনাদেরকে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ না। এত বছর আপনারা যাদের গুম করে রেখেছেন, তাদের পরিবারের সদস্যরা কেউ ঘুমিয়ে নেই। তারা রাজপথে বছরের পর বছর প্রতিবাদ করছেই। এই প্রতিবাদ চলতেই থাকবে, যত দিন না তারা ফিরে আসবে। তারা বলেন, ২০০৯ সাল থেকেই বাংলাদেশে গুমের ঘটনা ব্যাপক রূপ নিয়েছে। এই সময়ে সাধারণ মানুষ, বিরোধীদলের নেতা-কর্মী এবং ভিন্নমতের ব্যক্তিরা গুমের শিকার হয়েছেন, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর অনেকেরই কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরাই তাদের ধরে নিয়ে গেছে বলে ভিকটিমদের পরিবারগুলো থেকে দাবি করলেও সরকার তা অস্বীকার করছে।
সভায় মিরপুরের কাঠ ব্যবসায়ী গুম হওয়া ইসমাইল হোসেন বাতেনের শাশুড়ির মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করা হয় এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।