আগামী বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং খাতের ওপর আরও বেশি নির্ভর করতে যাচ্ছে সরকার। এ ক্ষেত্রে চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ১৮ শতাংশ বেশি ব্যাংক ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকার বেশি পরিমাণে ব্যাংক ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কমে যাওয়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।
আগামী ১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৭ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকার বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন বাজেটে ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে ২ লাখ ৬২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংক খাত থেকে নেওয়া হবে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি। চলতি বাজেটে ব্যাংকিং খাত থেকে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন ও সরকারের ব্যয়ে বাড়তি চাহিদার কারণে ব্যাংক ঋণ বাড়াতে হচ্ছে। তাছাড়া সঞ্চয়পত্রে সরকারের সুদের ব্যয় কমানোর জন্য বেশ কিছু নানা বিধিনিষেধ আরোপ করায় সাম্প্রতিক সময়ে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমাও ব্যাংক ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
আগামী অর্থবছর সঞ্চয়পত্র থেকে প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হতে পারে, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৩১ শতাংশ কম। চলতি বাজেটে এ খাত থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এ ছাড়া বাজেট ঘাটতি মেটাতে বিদেশি উৎস থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হতে পারে। এটি চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মাত্র ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি।
চলতি অর্থবছর বিদেশি উৎস থেকে ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ঘাটতির বাকি ১৩ হাজার কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ উৎসের অন্যান্য খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে। চলতি বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। আগামী বাজেটেও ঘাটতি সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যেই রাখতে চায় সরকার।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে (জুলাই-এপ্রিল) ব্যাংক খাত থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৭৪ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু এপ্রিল মাসেই নেওয়া হয়েছে ২৯ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।
এদিকে গতকাল প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি ২০২২-২৩ : তৃতীয় অন্তর্বর্তীমূলক পর্যালোচনা’য় গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানিয়েছে, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে বিশেষত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ১ টাকা ঋণ নিলে অর্থবাজারে ৫ টাকার প্রভাব পড়ে। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারকে ব্যাংক থেকে কম ঋণ নিতে হবে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ বাড়লে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে যাবে। তাছাড়া ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা আরও কঠিন হয়ে যাবে। তাই ব্যাংক ঋণ না বাড়িয়ে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারের অর্থের চাহিদা পূরণের তাগিদ দেন তিনি।
তাছাড়া আগামী অর্থবছরে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে ৩৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি আশা করছে সরকার। এ অবস্থায় সরকার ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঘাটতি অর্থায়নের পরিবর্তে বিদেশি উৎস থেকে কম সুদের অর্থায়ন বাড়ানোর দিকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।