বিদ্যুৎ একটি দেশের অর্থনৈতিকসহ সার্বিক উন্নয়নের অন্যতম সঞ্চালক। উৎপাদন, উন্নয়ন, বিপণন ও ব্যবস্থাপনা সব ক্ষেত্রেই বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় এখনো বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত যথেষ্ট পিছিয়ে রয়েছে। আর এই পশ্চাদপদতা মোটেই কমছে না বরং যতই দিন যাচ্ছে ততই পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ) কর্তৃক প্রকাশিত ‘এনার্জি আর্কিটেকচার পারফরম্যান্স ইনডেক্স-২০১৭’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুসারে বিদ্যুৎ কাঠামোগত দক্ষতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৪তম বিশ্বের ১২৭টি দেশের মধ্যে। আগস্ট, ২০১৬ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যুতের মাথাপিছু উৎপাদন হল ৪০৭ কিঃ ওঃ আঃ। যা দক্ষিণ এশীয় দেশগুলো যেমন ভারত, পাকিস্তান কিংবা শ্রীলঙ্কার মধ্যে সর্বনিম্ন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিদ্যুৎ খাতটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে একীভূত অবস্থায় ছিল। এই খাতের সার্বিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে ১৯৯৮ সালে বিদ্যুৎ খাতটিকে, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে পৃথক বিদ্যুৎ বিভাগে পরিণত করা হয়। কিন্তু জাতীয় উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনায় স্থায়ী সমাধান এখনো সম্ভব হয়নি বরং এ সঙ্কট দিনের পর দিন তীব্রতাই পেয়েছে।
দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণের জন্য নিকট অতীতে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই হয়েছে বেশি। এতে হাজার হাজার টাকা গচ্ছা দিতে হয়েছে সরকারকে। কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদনে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ভয়াবহ লোডশেডিং শুরু হয়েছে এবং দিনের পর দিন সার্বিক পরিস্থিতির অবনতিই হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এর মধ্যে আবার এসেছে নতুন করে দুঃসংবাদ। যা জাতীয় গ্রীডে নতুন সঙ্কটের আভাস দিচ্ছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, চলমান অর্থসঙ্কটের কারণে কয়লা আমদানি করতে না পারায় উৎপাদনের দিক থেকে দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। মূলত, ডলার সঙ্কটের কারণে এ অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পায়রার মতো বড় কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে মারাত্মক সঙ্কট সৃষ্টি হবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে। হ্রাস পাবে উৎপাদন। এদিকে ডলার সঙ্কটে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রেও কয়লা আমদানির জটিলতায় উৎপাদন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ফলে সারাদেশেই শুরু হয়েছে তীব্র লোডশেডিং। এমতাবস্থায় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে তা জাতীয় গ্রীডে বড় ধরনের বিপর্যয় সৃষ্টি করবে; সৃষ্টি হবে জনদুর্ভোগ। যদিও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের কোন শঙ্কা নেই। কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কর্তৃপক্ষের এমন দাবির প্রতি আস্থা রাখা যাচ্ছে না। ফলে আগামী দিনের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে শঙ্কাটাও থেকেই যাচ্ছে।
অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও দক্ষতার বিচারেও অন্যতম সফল বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানির মালিকানাধীন পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩০২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎকেন্দ্র। গড়ে দেশের দৈনিক চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ জোগান দেয় এ কেন্দ্রটি। কিন্তু অর্থাভাবে এই কেন্দ্রটি নিয়ে বেশ অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে এবং যেকোন মুহূর্তে বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানা গেছে, আমদানিকৃত কয়লার বিপরীতে প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে নতুন করে আমদানি করাও সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে যে পরিমাণ কয়লা এখনো মজুদ আছে, তা দিয়ে চলতি মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচল রাখা সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এ সময়ের মধ্যে কয়লা আমদানি সম্ভব না হলে জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এর বিদ্যুৎ উৎপাদন। বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) পক্ষ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে এমন অনাকাক্সিক্ষত তথ্য উঠে এসেছে। যা আত্মসচেতন মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষে জানানো হয়েছে, তীব্র জ্বালানি সঙ্কটে দেশে শুরু হওয়া লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। রমযান মাসে লোডশেডিং নিয়ন্ত্রণে এ কেন্দ্রের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল ছিল বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)। এটিই একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র যা জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর থেকে নিরবচ্ছিন্নভাবে পুরো মাত্রায়, এমনকি সক্ষমতার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পায়রার মতো বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভীষণ সঙ্কট দেখা দেবে।
কেন্দ্র সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি পুরোদমে চালাতে দৈনিক গড়ে কয়লার প্রয়োজন হয় ১০ হাজার টন। যার পুরোটাই ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করে সিএমসি। কিন্তু ডলার সঙ্কটে গত ছয় মাস কয়লা ক্রয়ের বিপরীতে কোনো বিল পরিশোধ না করায় বাকি পড়ে গেছে ২৯ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলার (৩ হাজার ১৭৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা প্রায়)। সিএমসি বলছে, টাকা না দিলে ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আনা তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। অন্তত কিস্তিতেও যদি টাকা পরিশোধ করা হয়, তা হলে তারা কয়লা সরবরাহ করতে পারবে। কিন্তু এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেই। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। বিসিপিসিএল বরাবর গত ১৩ এপ্রিল চিঠি দিয়ে সিএমসি জানিয়েছে, ২৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ওভারডিউয়ের কারণে ‘পিটি বায়ান রিসোর্সেস টিবিকে’ নামের ইন্দোনেশিয়াভিত্তিক কৌল-মাইনিং কোম্পানির কয়লা সরবরাহে পুনরায় ঋণপত্র (এলসি) খুলতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চায়নার বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ। ফলে সৃষ্টি হয়েছে নতুন জটিলতা।
সিএমসির চিঠিতে বলা হয়, এপ্রিলে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হলে মে মাসের জন্য এলসি খোলা যাবে। আবার মে মাসে ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং পরবর্তী প্রতি মাসে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হারে পরিশোধ করা হলে প্রয়োজনীয় কয়লা সরবরাহ অব্যাহত রাখতে ঋণপত্র খোলায় কোনো বাধা থাকবে না। এ চিঠি পাঠানোর দুই সপ্তাহ পর গত ২৭ এপ্রিল সিএমসি ইমেইল করে বিসিপিসিএল কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে তাগাদা দেয়। সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে সেদিনই বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন বিসিপিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী। সঙ্কট সমাধানে বিদ্যুৎ সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে চিঠিতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই।
এ চিঠিতে বিসিপিসিএল জানায়, ইতিপূর্বে ওভারডিউ পরিশোধের জন্য দফায় দফায় সোনালী ব্যাংক (বিসিপিসিএল-এর অ্যাকাউন্ট ব্যাংক) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে সহযোগিতা কামনা করা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার জোগান না পাওয়ায় ওভারডিউয়ের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ওভারডিউ দ্রুত পরিশোধ করা অত্যন্ত জরুরি উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, অন্যথায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে গ্রীষ্ম ও সেচ মৌসুমে ব্যাপকভাবে লোডশেডিংয়ের কারণে জাতীয় অর্থনীতি হুমকির সম্মুখীন হবে। এ চিঠির অনুলিপি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নরের কাছেও পাঠিয়েছে বিসিপিসিএল।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসি) পটুয়াখালীর পায়রায় ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার কয়লা-তাপভিত্তিক এই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করে। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান মালিকানা রয়েছে বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে।
পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করে ইন্দোনেশিয়ার যে কোম্পানি, সেই কোম্পানির দাম পরিশোধ করে সিএমসি। বিসিপিসিএলের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কয়লা আমদানি সংক্রান্ত চুক্তি অনুযায়ী সিএমসি কয়লা ক্রয়ের ছয় মাস পরে বাংলাদেশ অর্থ পরিশোধ করতে পারবে। তিনি বলেন, ‘ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রোভাইড করে সিএমসি। ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল হলো-আমরা ইন্দোনেশিয়া থেকে যে কয়লা কিনি, তার ইনভয়েসের এগেইনস্টে সিএমসি এলসি করে পেমেন্ট করে। চুক্তি অনুযায়ী, আমাদের পেমেন্ট মেথড হলো ডেফার্ড পেমেন্ট (দেরিতে পরিশোধ)। শর্তানুযায়ী, আমরা ছয় মাস পর সিএমসিকে বিল দেই। অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে ইন্দোনেশিয়ার কৌল-মাইনিং কোম্পানিকে সিএমসি যে পেমেন্ট দেবে, আমরা জুলাইয়ে সিএমসিকে তা পরিশোধ করব। বাস্তবতা হচ্ছে, ছয় মাস তো পার হয়ে গেছে অনেক আগেই। আরও পাঁচ মাস চলে গেছে। আমরা বকেয়া শোধ করতে পারছি না।’ এত টাকা বকেয়া হওয়ায় চীনের ৈদৈশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ কয়লা ক্রয়ে নতুন করে এলসি খুলতে সিএমসিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
বিদ্যুৎ খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করে কয়লা আমদানি অব্যাহত রাখা জরুরি। কারণ, কয়লা সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে সামনের দিনগুলোতে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানো অসম্ভব হয় পড়বে। ফলে একদিকে সাধারণ মানুষ লোডশেডিংয়ের ভোগান্তিতে পড়বে; অন্যদিকে শিল্পোৎপাদনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনিতেই এখন দিন দিন লোডশেডিং বাড়ছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেলে লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ সঙ্কট ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিবের বক্তব্য হলো, ‘পায়রার কয়লা আমদানি বাধাগ্রস্ত হবে না। আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি, আশা করি কয়লার জোগান নিরবচ্ছিন্ন থাকবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোনো বাধা তৈরি হবে না’। কিন্তু তার এই দাবিতে কেউই আশ্বস্ত হতে পারছেন না। কারণ, আমাদের ডলার সঙ্কটের উল্লেখযোগ্য কোন উন্নতি হয়নি।
জানা গেছে, ডলার সঙ্কটে বাগেরহাটের রামপাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রও কয়লা আমদানি নিয়ে বেশ জটিলতার মধ্যে রয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ অংশীদারিত্বে নির্মিত এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটির একটি ইউনিট গত ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসার পর এ পর্যন্ত কয়েক দফায় বন্ধ হয়েছে। গত ১৫ এপ্রিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হয়ে যায়। এরপর চার দিন পর এটি আবার চালু হয়। কিন্তু কয়লার অভাবে ২৪ এপ্রিল থেকে এটি আবার বন্ধ হয়ে যায়। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নানা সঙ্কটে অব্যাহতভাবে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে পারছে না। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন, বিপণন ও ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন না করে তথা গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত না করেই বারবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বৃদ্ধি করছে। স্বাভাবিক কারণেই সৃষ্টি হচ্ছে জনদুর্ভোগ।
মূলত, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি জাতীয় উন্নয়নের উন্নতম চালিকাশক্তি। তাই দেশ ও জাতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রস্তুত করতে হলে দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ব্যবস্থাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা দরকার। অর্থাভাবে বা জ্বালানি সঙ্কটের কারণে যাতে কোন বিদুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে না যায় সেজন্য স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা দরকার। বন্ধ কেন্দ্রগুলো অবিলম্বে চালু করার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সময়ের দাবি। অন্যথায় জাতীয় উন্নয়ন মুখ থুবড়ে পড়বে, ব্যাহত হবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও ধারাবাহিকতা। যা জাতিকে পশ্চাদমুখী করবে।