স্টাফ রিপোর্টার: দ্রব্যমূল্যের আগুনে পুড়ছে সাধারণ মানুষ। প্রতিযোগিতামূলকভাবে বেড়েই যাচ্ছে জিনিসপত্রের দাম। পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা, আদার কেজি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, রসুন ১৬০ টাকা, চিনির দাম ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, সয়াবিন তেল ২০০ টাকা লিটার। ৬০ থেকে ৮০ টাকার কমে কোন সবজি মিলছে না বাজারে। মাছ-গোশতের দামও বেশি। কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে বাড়ছে মসলার দামও। ইতোমধ্যে জিরার দাম কেজিতে কয়েকশ’ টাকা বেড়ে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অবিলম্বে ব্যবসায়ীদের অবৈধ মুনাফা বন্ধ করে জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি ও মাছ গোশতের সরবরাহ রয়েছে বাজারে, তবু দাম অনেক চড়া। প্রতি কেজি গোল বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকা, লাম্বা বেগুন ৫০-৬০ টাকা, ঢেড়স ৫০-৬০ টাকা, করলা ৫০-৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা, পেঁপে ৬০-৭০ টাকা, পটল ৫০-৬০, কচুর লতি ৭০-৮০ টাকা, শশা ৭০-৮০ টাকা, টমেটো ৫০-৬০ টাকা, ধুন্দল ৫০-৬০ টাকা, লাউ প্রতি পিস সাইজ ও মান ভেদে ৫০-৬০ টাকা, জালি ৫০-৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়াও নতুন সবজির মধ্যে কচুর মুখী বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০০-১২০ টাকা, গাজর বিক্রি হচ্ছে ১০০-১২০ টাকা। লাল শাক, কলমি শাক বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা আটি। দুই আটি একসাথে নিলে ৫ টাকা কম রাখছে।
এদিকে ঝাল কমছে না কাঁচা মরিচের। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ১২০-১৩০ টাকা। সব থেকে বেশি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য আলু ৪০-৪৫ টাকা, পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকা, দেশি রসুন ১৮০-১৯০ টাকা, মোটা রসুন ২৩০-২৪০ টাকা। ইতিহাসের সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আদা ৩০০-৩২০ টাকা। আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।
এছাড়া মুদি দোকান থেকে জানা যায় চিনি, তেল ডালের মতো দ্রব্যাদির দাম। আগের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে এসব পণ্যের দাম। মসুরের ডাল ১৩০ টাকা, মুগ ডাল ১২০ টাকা, খেসারির ডাল ৮০ টাকা, বুটের ডাল ৯৫ টাকা, ছোলা ৮৫ টাকা, চিনি ১৩০-১৪০ টাকা, খোলা আটা ৫৭ টাকা, খোলা ময়দা ৬৩ টাকা, সয়াবিন তেল (প্যাকেট) ১৯৯ টাকা, তবে খোলা সয়াবিন তেলের দাম আট টাকা কমে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খোলা সরিষার তেল ২৫০ টাকা লিটার। অপরদিকে ব্রয়লার মুরগী বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা, সোনালি মুরগী ছোট সাইজ ৩১০-৩২০ টাকা, বড় সাইজ ৩২০-৩৪০ টাকা। ডিমের হালি ৫০ টাকা। এক ডজন নিলে ১৪০-১৪৫ টাকা। গরুর গোশত ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির গোশত ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে প্রচুর মাছ সরবরাহ থাকলেও দাম চড়া। পাঙ্গাস তেলাপিয়া বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৩০-৩৪০, কার্পজাতীয় মাছ ২৩০-২৬০, ট্যাংরা মাছের কেজি ৭০০, চাষের কৈ ২৫০, হাইব্রিড পুঁটি ২৫০ টাকা, রুই সাইজ ভেদে ৩০০-৪০০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন মসলা বাজারে দেখা গেছে, একমাস আগেও বাজারে চায়না থেকে আমদানি করা আদা প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকায়। চায়না আদা বাদেও বার্মিজ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করা আদার দামও বেড়েছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা। আর দেশি আদার দাম কেজিতে বেড়েছে ১০০ টাকার বেশি। দেশে এই বছর আদার উৎপাদন একেবারেই কম হয়েছে। আমদানিও কমেছে। এ জন্য দাম অনেক বেড়েছে। কুরবানি ঈদের আগে আদার দাম কমবে বলে মনে হয় না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে উৎপাদন কম হওয়ায় আদার দাম বেড়েছে। আমাদের দেশে যে আদা আমদানি হয় সেখানে প্রায় অর্ধেক থাকে চায়না আদা এবং বাকিগুলো বিভিন্ন দেশের। তবে দেশে চায়না আদার চাহিদা বেশি থাকে সবসময়। গেল কয়েক দিন ধরেই চায়না আদা আসছে না। তাই বাজারে আদার কিছুটা বেশ সংকট দেখা দিয়েছে। চায়না আদা বাজারে নেই বললেই চলে। এদিকে রান্নায় বহুল ব্যবহৃত মশলা জিরার দামে দিশেহারা ক্রেতারা। এক মাসের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে জিরার দাম। মাস দুয়েক আগেও ৪০০-৫০০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, দাম বেড়ে যাওয়া জিরা বিক্রিও কমেছে অনেক। আগে যারা আড়াইশ গ্রাম জিরা কিনত এখন তারা কিনছে একশ’ গ্রাম। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের বাজারে যত ধরনের জিরা বিক্রি হয় তা প্রায় সবটিই আমদানি করা। আগের থেকে চাহিদা বেড়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানিতে খরচ বাড়ছে। সম্প্রতি ভারত থেকে জিরা আমদানি কমে যাওয়ায় সংকট তৈরি হয়েছে। এতে খুচরা পর্যায়ে জিরার দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও মসলার আমদানিকারক এনায়েত উল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, আগে অধিকাংশ জিরা আসত ভারত থেকে। হঠাৎ করে ভারতে জিরার দাম বাড়ার কারণে বেশি দামে কিনতে হয়েছে। এবার শুধু ভারত নয় আরও বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সিরিয়া থেকে ও আফগানিস্তান থেকে অফার আসতেছে। আবার তুরস্ক থেকেও আমদানি করার চিন্তা করা হচ্ছে। আশা করছি খুব শিগগিরই দাম কমে যাবে। ঈদের আগেই কমতে পারে। শুধু জিরার দামই নয়। দাম বেড়েছে অন্যান্য গরম মশলারও। বাজারে প্রতি কেজি গোল মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা কেজি দরে, লং বিক্রি হচ্ছে ১৪০০-১৫০০ টাকা কেজি। অর্থাৎ প্রতি একশ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৯০-১০০ টাকায়। এলাচ বিক্রি হচ্ছে প্রতি একশ গ্রাম ১৮০-২০০ টাকায়। যার প্রত্যেকটির দাম আগের থেকে প্রতি একশ গ্রামে ১০-২০ টাকা বেড়েছে। অপরদিকে পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটছে রসুন-পেঁয়াজের দাম। বাজারে এখন প্রতি কেজি দেশী রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকায়। আর আমদানি করা মোটা রসুন বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকায়। দোকানদাররা বলছেন বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। তবে রসুন পরিমাণে কিছুটা কম লাগার কারণে এর খুব একটা প্রভাব না পড়লেও পেঁয়াজের ঝাঁঝে চোখে পানি ক্রেতাদের। ঈদুল ফিতরের আগে ৩০-৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া পেঁয়াজ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহ তিনেকে না যেতেই দ্বিগুণ দাম রান্নায় অপরিহার্য এই পণ্যটির। অধিক মুনাফা লাভের আশায় অনেকে পেঁয়াজ মজুদ রেখে সংকট তৈরি করছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সম্প্রতি সংবাদিকদের তিনি বলেন, ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম কয়েকদিনের ব্যবধানে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান বাজার বিবেচনায় আমরা পেঁয়াজ আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয় অবহিত করেছি। ইমপোর্ট পারমিট বা আইপি যেহেতু কৃষি মন্ত্রণালয় দিয়ে থাকে তাই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। দেশের কৃষকরা যাতে পেঁয়াজের ন্যায্য মূল্য পান সেজন্য মূলত ইমপোর্ট পারমিট বন্ধ রাখা হয়েছে। এখন যেহেতু ভোক্তাদের বাজারে পেঁয়াজ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাই আমদানি করা ছাড়া উপায় নেই।