ইবরাহীম খলিল: অনেকটা অস্বাভাবিকভাবেই গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন সাবেক মেয়ার জাহাঙ্গীর আলমের মা জায়েদা খাতুন। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে গাজীপুর বঙ্গতাজ পৌর অডিটোরিয়ামে ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্রে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী টেবিল ঘড়ি প্রতীক নিয়ে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ও আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী মো. আজমত উল্লা খান ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৭ ভোট পেয়েছেন। ১৬ হাজার ১৯৭ ভোটে জয়ী হন জায়েদা খাতুন। ৪৫ হাজার ৩৫২ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন হাতপাখা প্রতীকের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান। পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনূর ইসলাম রনি হাতি প্রতীক নিয়ে ২৩ হাজার ২৬৫ ভোট পেয়েছেন। লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন ১৬ হাজার ৩৬২ ভোট পেয়েছেন। আর মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম পেয়েছেন ১৬ হাজার ৯৭৪ ভোট।
গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ পেয়েছেন ৭ হাজার ২০৬ ভোট এবং ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ পেয়েছেন ২ হাজার ৭২৬ ভোট। দেশের বৃহত্তম এই সিটি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ৩৩৩ জন প্রার্থী। এরমধ্যে মেয়র পদে আটজন ছাড়াও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৯ জন এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন এবং মহিলা ভোটার ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন। এছাড়াও বিপরীত লিঙ্গের (হিজড়া) ভোটার আছেন ১৮ জন।
বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত এই প্রতিবেদক ছিলেন নির্বাচন পর্যবেক্ষণের দায়িত্বে। ছিল দেশের সব প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার শত শত সংবাদকর্মী। তাৎক্ষণিক ছাপা হয়েছে অনলাইন মিডিয়াতে। শিরোনামগুলো দেখলে দেখা যায় — ‘শেষ মুহূর্তেও কেন্দ্র ফাঁকা, ভোটগ্রহণ হবে আর এক ঘণ্টা’। ‘শেষ মুহূর্তে ভোটারের প্রত্যাশা করলেও সে গুড়ে বালি’। ‘ফাঁকা ভোটকেন্দ্রে বসে ভোটারের অপেক্ষায় পোলিং এজেন্ট এবং নির্বাচনী কর্মকর্তারা।’ বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। রিপোর্টে বলা হয়, সকাল থেকেই কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের উপস্থিতি ছিল হাতেগোনা। দুপুরের পর ভোটারের আনাগোনা বাড়তে পারে এমন প্রত্যাশা ছিল প্রার্থীদের। তবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও ভোটাররা আসেননি। যারা ভোটকেন্দ্রে এসেছেন তাদের সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা। বিকেল তিনটা পর্যন্ত কোনো কোনো কেন্দ্রে ভোট পড়েছে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ। কোনো কোনো কেন্দ্রের ভোটারের উপস্থিতি ছিল ২০ শতাংশেরও কম।
করপোরেশনের ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের মেধাবিকাশ আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের দুই হাজার ৪৩৭ জন নারী ভোটারের মধ্যে বেলা দেড়টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে মাত্র ৪৪৯টি। যা ওই কেন্দ্রের মোট ভোটের ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ। ওই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. শাহরিয়ার হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
এছাড়া গাজীপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মো. রুবেল মিয়া জানান, ওই কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ৪০ শতাংশ। কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৪৬৭ জন। কেন্দ্রের বাইরে বিভিন্ন প্রতীক সম্বলিত প্ল্যাকার্ড গলায় ঝুলিয়ে নেতাকর্মীরা অবস্থান করলেও ভোটারদের আনাগোনা ছিল একেবারেই কম। ৪৯ নং ওয়ার্ডের সিরিয়া হোসেন পাবলিক স্কুল কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২৩ শতাংশ। কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আশরাফুল আলম জানান, দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত এই ভোট পড়েছে। কেন্দ্রের মোট ভোটার সংখ্যা দুই হাজার ৪৭৭। এছাড়াও করপোরেশন এলাকার ১৫, ১৭, ৩৫ নং ওয়ার্ড ঘুরেও একই ধরনের তথ্য মিলেছে।
তবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা প্রত্যাশা করছেন, শেষ ঘণ্টায় হয়তো কিছু ভোটার ভোট কেন্দ্রমুখী হবেন এবং তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এক্ষেত্রে ভোট পড়ার হার ৪০ শতাংশ পর্যন্ত যেতে পারে বলে প্রত্যাশা তাদের।
সংবাদের আরেক শিরোনামে বলা হয়, ‘অনেক কেন্দ্রে ১০ শতাংশ ভোটও কাস্ট হয়নি’ সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত অনেক কেন্দ্রে ১০ শতাংশেরও কম ভোট কাস্ট হয় বলে জানান, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসাররা। দুপুর ১২টায় ১০ শতাংশ ভোটও কাস্ট হয়নি এমন একটি কেন্দ্র ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ বৃত্তি স্মৃতি বিদ্যালয়। এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল কাদের বলেন, আমার এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৯২ জন। এখন পর্যন্ত ৮ শতাংশ কাস্ট হয়েছে।
ভোগড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, এখানেও ভোটারের উপস্থিতি অনেক কম। এই কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আশেক মোহাম্মদ বলেন, আমার কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৩০ জন। সকাল সোয়া ১১টা পর্যন্ত ২৫৮ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। সেই হিসাবে ৮ দশমিক ৫১ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় উম্মুল কুরা হিফজ মাদরাসা ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার আব্দুল লতিফ বলেন, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৬১১ জন। এর মধ্যে ৩১২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
৪০ নম্বর ভোগড়া মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার ইন্দ্রজিৎ কুমার সরকার ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার ভোট কেন্দ্রে ৩ হাজার ৬৮৬ জন। সকাল পৌনে ১০টা পর্যন্ত ১৩৪ ভোট কাস্ট হয়েছে। যা মোট ভোটের ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। ভোট কম পড়ার কারণ হিসেবে প্রিজাইডিং অফিসাররা জানান, সকাল থেকে ভোটার উপস্থিতি অনেক কম। যারা ভোট দিতে এসেছেন তাদের ভোটও ধীরগতিতে হচ্ছে।
দৈনিক সংগ্রামের প্রতিবেদন বলছে, বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন চলছে। টঙ্গীর জামিয়া নুরিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রের বাইরে দেখা গেল মহিলাদের ভিড়। কিন্তু গেইট দিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখা গেল, ভোটার শূন্য। কেন্দ্রের ভেতর আর বাইরের চিত্র দেখে সন্দেহ তৈরি হয়। ভোট কেন্দ্রের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা মিলে প্রিজাইডিং অফিসার ইউনুস আলীর। তিনি জানালেন, এই কেন্দ্রে সকালে ইভিএম মেশিনের বেশ সমস্যা ছিল। তিনি নিজেই কম্পিউটার প্রোগ্রামার হওয়ায় সবকিছু অল্প সময়ে মধ্যে ঠিকঠাক হয়ে গেছে। তবে তিনি ভোটারদের উপস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন।
কেন্দ্র থেকে বের হয়ে গেইট দিয়ে মাদরাসার বাইরে যাওয়ার সাথে সাথে এই প্রতিবেদকের পেছনে পেছনে দৌড়ে আসেন পঞ্চাশোর্ধ এক ভদ্রলোক। তার নাম দেলোয়ার হোসেন। হাঁপাত হাঁপাতে হাত ধরে জানতে চাইলেন সাংবাদিক সাহেব ভোট কাস্টের অবস্থা কী? হতাশাজনক জানাতেই তিনি হাত ধরে আরও সামনে এগিয়ে চায়ের আমন্ত্রণ জানান। চা পানের মধ্যে অন্যান্য কেন্দ্রের অবস্থা জানতে চেয়ে বলেন যে, আপনাদের লোকতো অন্যান্য কেন্দ্রেও আছে। গাজীপুরে অবস্থান করা সহকর্মীকে ফোন দিয়ে লাউডস্পিকারে বলা কথা শুনে অনেকটা আশস্ত হন দেলোয়ার। তখন তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে ভোট কেন্দ্রগুলোর আসল চরিত্র।
তিনি অকপটে বলে গেলেন– গেইটের বাইরে রাস্তায় আনাগোনা করতে যেসব লোকজন দেখলেন; তারা কেউ ভোটার না। ভোটার উপস্থিতি ব্যাপক রয়েছে এমন দৃশ্য দেখানোর জন্য ফরমায়েশ দিয়ে আনা হয়েছে। আর কিছু না। ভোটার উপস্থিতি বেশি দেখানোর জন্য এগুলো করা হয়েছে। ভেতরেতো ভোটার নাই। ভোটতো কাস্ট হচ্ছে না। চাপ সৃষ্টি করেও ভোটার আনা যাচ্ছে না। নির্বাচনের মাঠতো আগেই খালি করা হয়েছে। জাহাঙ্গীরতো নাই। তার এজেন্টও কেন্দ্রে নাই। তার মা যদি আজমত উল্লা’র অর্ধেক ভোটও পায় তাহলে তো নৌকার ইজ্জত থাকে না। দেলোয়ার সাহেবের কথার সত্যতা পাওয়া গেল অন্যাান্য কেন্দ্রেও। তার কথায় বোঝা গেল খালি মাঠেও ভোট নিয়ে আতংকে আওয়ামী লীগের লোকজন। অবশ্য সেই আতংকই ঠিক থাকলো।
বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খান ভোট দেবেন বাড়ির পাশে কেন্দ্র টঙ্গী দারুস সালাম মাদ্রাসায়। একারণে এই কেন্দ্রে সকাল থেকেই গণমাধ্যম কর্মীদের ভিড় ছিল। আজমত উল্লা’র কর্মিবাহিনী এবং ভোটাররাও এই কেন্দ্রে চলে আসে সকাল থেকেই।
দেখা যায় সকাল আটটায় এই কেন্দ্রে ভোট শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ঠিক সময়ে শুরু হয়নি। সকাল আটটার কিছুক্ষণ পর ভোট শুরু হলেও কয়েকজন ভোটার ভোট দেওয়ার পর ইভিএম মেশিনে সমস্যা দেখা দেয়। তখন কিছুক্ষণের জন্য ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। কিছুক্ষণ পর মেশিন ঠিক করা হলে আবার ভোট গ্রহণ শুরু হয়। এ সময় ভোটারদের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়। হানিফ সরকার নামে এক ভোটার অভিযোগ করে বলেন, সাতবার ফিঙ্গার স্ক্যান করার পরও ভোট দিতে ব্যর্থ হয়ে পরে তিনি স্মার্ট কার্ড দিয়ে ভোট দিতে পেরেছেন। ইভিএম কাজ না করার বিষয়ে এই ভোটকেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার জাকির হাসান তালুকদার বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে কয়েকটি মেশিনে ভোট দিতে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে ভোটারদের। পরে সেগুলো ঠিক করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ভোটারদের উল্টাপাল্টা স্পর্শের কারণে চীপে সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ব্যাপারে ভোটারদের সচেতন করা হচ্ছে। পরবর্তীদের আর সমস্যা হবে না বলে আশস্ত করেন তিনি। সকাল ৮ টা ৫০ মিনিটের দিকে দিতে ভোট দিতে কেন্দ্রে যান মেয়রপ্রার্থী আজমত উল্লা। তার সঙ্গে যান একদল কর্মী। এসময় বেশ উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়। ভোট দেওয়ার পর আজমত উল্লা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। সকাল দশটা পর্যন্ত কেন্দ্রের কয়েকবার ইভিএম মেশিন নষ্ট হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
কেন্দ্রের সামনে কয়েকজন ভোটারের সাথে আলাপ করে জানা যায়, ভোট দিতে গিয়ে তারা নানাবিধ সম্মুখীন হয়েছেন। বিশেষ করে নামের বানানের কারণে সমস্যা তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন ন্যাশনাল আইডিতে তাদের নাম এক রকম। আবার ভোটার লিস্টে আরেক রকম। এক্ষেত্রে অফিসারদের সাহায্য নিয়ে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।
সকালে আউচপাড়া নিউ ব্রুন স্কুল কেন্দ্রে জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন ভোট দেন। সেখানে ইভিএম কাজ না করার কারণে তিনি বেশ কিছুক্ষণ ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেন। বেশ কিছুক্ষণ পর ভোট দিয়ে বের হয়ে তিনি সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন। তিনি জানান, ভোট দিয়েছেন। মেশিনে বোধহয় একটু সমস্যা ছিল। আমিই প্রথম ভোটার। মেশিনটা স্টার্ট দেয়ার মুহূর্তে বোধহয় কিছুটা জটিলতা ছিল। কিন্তু অল্প কিছুক্ষণ পরেই এটা ঠিক হয়েছে।
টঙ্গীর নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সকাল থেকে প্রচুর আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর উপস্থিতি চোখে পড়েছে। তবে এই কেন্দ্রে তেমন কোন ভোটারের উপস্থিতি সকাল পর্যন্ত দেখা যায়নি। সকাল পৌনে ১১ টার দিকে পূর্ব আরিচ পুর হাজী আম্বর আলীর মাদ্রাসা ও এতিমখানা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় এই কেন্দ্রে মহিলাদের ভোট গ্রহণ চলছে। প্রিজাইডিং অফিসার আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন এখানে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। ইভিএম মেশিনে সকালে একবার সমস্যা দেখা দিয়েছে। সাথে সাথে এই সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে বলে তিনি জানিয়েছেন এ প্রতিবেদককে।
হাজী সবদর আলি মাস্টার বিদ্যানিকেতনে কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম। এই কেন্দ্রে শুরু থেকেই একটি ইভিএম মেশিনের সমস্যা দেখা দেয়। প্রিসাইডিং অফিসার মোঃ কাউসার এই প্রতিবেদককে জানান, এই কেন্দ্রে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীরের মায়ের এজেন্ট ছাড়া বাকি সব প্রার্থীর এজেন্ট উপস্থিত ছিলো। আউচপাড়া নিউ ব্রুন স্কুল কেন্দ্রের আটটি বুথের মধ্যে সবকটিতেই ইভিএম মেশিন চালু না হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছিল। পরে অবশ্য সেগুলো ঠিক করা হয় বলে জানা যায়।
পুরোটা দিনজুড়ে ইভিএম মেশিন নষ্টের খবর এসেছে বার বার। প্রায় সবগুলো কেন্দ্রেই এভিএম মেশিন সমস্যা ছিল। ভোটার উপস্থিতি একেবারেই নগণ্য। অবশ্য নির্বাচন কমিশন দাবি করেছেন গাজীপুরে কম বেশী ৫০ শতাংশ ভোট কাস্ট হয়েছে। সারাদিন নৌকার জয় জয়কার। দিনটা নৌকার হরৌ রাতটা হয়ে যায় জায়েদা খাতুনের। অথচ কোন কেন্দ্রেই ভদ্রমহিলার এজেন্ট ছিল না কেন্দ্রে। গেইটের সামনে হাজার হাজার মানুষের মহড়া, আবার গেইটের ভেতর আওয়ামী লীগ নেতাদের পাহারা। এসব বাধা গলিয়ে যেখানে একটি এজেন্ট থাকতে পারলো কেন্দ্রে সেখানে বিপুল ভোটে জয় পেলেন জায়েদা খাতুন। তা একদিকে যেমন অস্বাভাবিক, অন্যদিকে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ৫০ শতাংশ ভোট কাস্ট হওয়ার খবরের সত্যতার হিসাব মিলানো যাচ্ছে না। সবকিছু ছাপিয়ে মার্কিন ভিসা নীতি ছিল মানুষের মুখে মুখে। এই হিসাব মিলাতে গিয়ে ইভিএম, এজেন্টবিহীন প্রার্থীর বিজয় কেমন যেন বেখাপ্পাই লাগে …।