বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দ্রুত, নিরাপদ, টেকসই ও স্বেচ্ছা প্রত্যাবাসনে সহায়তা দেবে চীন। দেশটির মতে, রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও সমগ্র অঞ্চলের জন্য মঙ্গলজনক। একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় রোহিঙ্গাদের প্রথম ব্যাচের প্রত্যাবাসনের জন্য রোহিঙ্গা নেতাদের রাখাইন সফর ও মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের কক্সবাজার নিয়ে আসার বাংলাদেশের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে চীন।
গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজিত বাংলাদেশ-চীন পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে (এফওসি) এ সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। আর চীনের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির ভাইস মিনিস্টার সুন ওয়েইডং। চীনের ভাইস মিনিস্টার তিন দিনের সফরে শুক্রবার রাতে ঢাকা এসে পৌঁছেছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
এফওসি সকাল ১০টা থেকে শুরু হয়ে মধ্যাহ্নভোজের পর পর্যন্ত চলে। প্রথম দফা বৈঠকে রোহিঙ্গা, ইন্দো-প্যাসিফিক আউটলুক ও দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্বিতীয় দফা বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, কনস্যুলার সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং রাজনৈতিক সফর নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকে উভয় পক্ষ দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট ইস্যুসহ বহুজাতিক ফোরামে সহযোগিতা নিয়ে বিস্তৃত পরিসরে আলোচনা করেছে। তারা চীনের সহায়তায় বাংলাদেশে নির্মাণাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। দুই পক্ষ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু ট্যানেল ও পদ্মা সেতু রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পের আসন্ন উদ্বোধনীকে স্বাগত জানান। তারা বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ খাতের কয়েকটি প্রকল্পের অনিষ্পন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন।
উভয় পক্ষ বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে বিদ্যমান সামরিক সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তারা সামরিক বাহিনীর স্টাফ পর্যায়ে নিয়মিত আলোচনা ও বিশেষায়িত প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা করেন। অনলাইন জুয়া ও মাদক পাচারের ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতে সহযোগিতার প্রস্তাব করেছে চীন। জননিরাপত্তা ইস্যুতে দুই পক্ষ নিয়মিত সংলাপের আয়োজন করতে নীতিগতভাবে একমত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার সময় আবহাওয়া সংক্রান্ত ভূ-উপগ্রহের তথ্য বাংলাদেশকে জানানোর জন্য চীনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব।
চট্টগ্রামের চীনের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগে চীনা কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করার নিশ্চয়তা দিয়েছেন সুন ওয়েইডং। ঢাকা-গুয়াংজু রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইট আবারো চালুর যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার ওপর উভয় পক্ষ গুরুত্বারোপ করেছে। বাংলাদেশী, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের ভিসা সংক্রান্ত ইস্যুতে আলোচনার জন্য নিয়মিত কনস্যুলার কনসালটেশনে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে। ডিজিটাল ও বায়োটেকনোলজিতে চীনের সাথে একসাথে কাজ করার ইচ্ছার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড (বিআরআই) উদ্যোগের আওতায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে যোগাযাগ বাড়াতে দুই পক্ষ আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
এফওসিতে চীনের বাজারে ৯৮ ভাগ পণ্যের শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধার আওতায় বাংলাদেশ থেকে রফতানি কিভাবে আরো বাড়ানো যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। চীনা পক্ষ বাংলাদেশ থেকে আম, কাঁঠাল, পেয়ারার মতো মৌসুমি ফল ও হিমায়িত খাদ্য আমদানিতে আগ্রহ দেখিয়েছে। চীনের সাথে বাণিজ্যবৈষম্য কমাতে বাংলাদেশ সবজি, ওষুধ, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যকে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধার আওতায় আনার অনুরোধ করেছে।