দেশে আগামী জুলাই মাসে করোনার আরেকটি ঢেউ আসার আশঙ্কা রয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী থাকায় বিশেষজ্ঞরা এমন আশঙ্কা করছেন। তাঁরা বলছেন, এতে হাসপাতালে রোগী না বাড়লেও ঝুঁকিতে থাকবেন বয়স্করা।করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ‘এক্সবিবি’ শক্তিশালী হয়ে ওঠায় আগামী জুনে সংক্রমণ আরো তীব্র হতে পারে বলে আভাস দিয়েছে চীন।
এনডিটিভি অনলাইনের খবরে এ তথ্য জানা যায়। এর বিরূপ প্রভাব বাংলাদেশেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ড. মুশতাক হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নতুন ধরন এক্সবিবি হলো ওমিক্রনের উপধরন। পাশের দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই আমাদের দেশেও সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকে।
আমরা দেখেছি, গত তিন বছরে ইনফ্লুয়েঞ্জার মৌসুমে কভিডও বাড়ে। সেই হিসাবে মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। ২০২০ ও ২০২১ সালে সর্বোচ্চ কভিড রোগী শনাক্ত হয় জুন-জুলাইয়ে। এবারও তা-ই হবে বলে মনে হচ্ছে।
’তিনি বলেন, করোনা বাড়লেও হাসপাতালে রোগী খুব বেশি বাড়বে না। তবে ঝুঁকিতে থাকবেন বয়স্করা, যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে অসুখে ভুগছেন, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। এ জন্য মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে এবং হাত ধোয়ার প্রবণতা বাড়াতে হবে। জনসমাগম রয়েছে, এমন জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে।গতকাল শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২৮ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে।
এর আগের দিন ছিল ৬৮ জন, যা গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক দিনে ৬৪৩টি নমুনা পরীক্ষা করে এই ২৮ জন শনাক্ত হয়। এতে দিনে শনাক্তের হার ৪.৩১ শতাংশ, যা আগের দিন ছিল ৫.২৫ শতাংশ। গত কয়েক মাস এই হার ছিল ১ শতাংশের নিচে।অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এর আগে সর্বশেষ গত বছরের ১০ নভেম্বর ৬৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এর পরের মাসগুলোতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এক অঙ্কের ঘরে ছিল। চলতি বছরের মে মাসের শুরু থেকে সংক্রমণ হার আবার বাড়তে শুরু করেছে।
করোনা শনাক্তের হার বেড়ে পাঁচ গুণ : স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, গত ২০ থেকে ২৬ এপ্রিল এক সপ্তাহে দেশে করোনা শনাক্ত হয় ৫১ জনের। দৈনিক শনাক্তের হার ছিল এক শতাংশের নিচে। চলতি মাসের সর্বশেষ সাত দিনে শনাক্ত হয়েছে ২৪৮ জন। শনাক্তের হার বেড়ে ৪ শতাংশের বেশি হয়েছে। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে শনাক্তের হার বেড়ে গেছে প্রায় পাঁচ গুণ।
করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারিভাবে যে শনাক্তের হার দেখানো হচ্ছে, বাস্তবে তা কয়েক গুণ বেশি। কারণ এখন করোনা উপসর্গ থাকলেও অনেকে পরীক্ষার জন্য আসছেন না। যাঁরা আসছেন, তাঁরা হয় বিদেশ যাত্রী অথবা জরুরি কোনো সার্জারির জন্য করাচ্ছেন।’
তিনি বলেন, ‘প্রতিবছর জুলাই মাসে আমাদের দেশে একটা পিক হয়। এ বছরও একটা পিক হতে পারে। আর এ সংক্রমণ এখন থেকে শুরু হয়েছে। সুতরাং আমাদের আরো সতর্কভাবে চলতে হবে। সরকারের উচিত হবে আমাদের যে বন্দরগুলো রয়েছে, সেখানে আবার স্ক্রিনিং বসানো। বাইরে থেকে যারা আসবে, তাদের করোনা পরীক্ষা করতে হবে। এখন যেহেতু মানুষ পরীক্ষা করছে না, তাই করোনার পরীক্ষাটা বিনা মূল্যে করে দেওয়া উচিত, যাতে মানুষ আগ্রহ নিয়ে পরীক্ষাটা করে।
নতুন রোগীদের নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত কভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২০ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩৭ জন হয়েছে। এ পর্যন্ত সুস্থ হলেন ২০ লাখ ছয় হাজার ১৮৩ জন।
সর্বশেষ গত ২৮ মার্চ দেশে কভিডে একজনের মৃত্যুর খবর এসেছিল। এরপর গত ৫৮ দিন কভিডে আর কারো মৃত্যু হয়নি। এতে মৃতের মোট সংখ্যা ২৯ হাজার ৪৪৬ জনই রয়েছে।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল ২০২০ সালের ৮ মার্চ। প্রথম শনাক্তের ১০ দিন পর ২০২০ সালের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যু তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।