নিত্যপণ্যের জিনিসের দামে অস্বস্তিতে সাধারণ ক্রেতারা। সকল শ্রেণিপেশার মানুষই এই নিত্যপণ্যের মূল্যের কাছে অসহায়। নিরবে ফেলছে চোখের পানি। সবজি থেকে গোশত, মাছ, আলু, পটল কিছুতেই যেন নিস্তার নেই। সব জিনিসেরই দাম বেশি। বাজার এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্য বিত্তের নিরব কান্না যেন দেখার কেউ নেই।
সবজির বাজার চড়া; সেই সঙ্গে মাছ, গরু ও মুরগির গোশতের বাজারেও কোনো সুখবর নেই। নতুন করে দাম আর না বাড়লেও আমিষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে সাধারণ মানুষ। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নিকেতন বাজারও মহাখালী কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র মিলেছে। এসব বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২৩০ থেকে ২৫০ টাকার নিচে ব্রয়লার মুরগি মিলছে না। সোনালি মুরগির দাম ছুঁয়েছে ৩৩০-৩৫০ টাকা।
গোশতের পাশাপাশি মুরগির ডিমের দামও এখন বাড়তি। ডিমের ডজন ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা। আর হাঁসের ডিম প্রতি ডজন ২০০-২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পোলট্রি বাজারের এমন পরিস্থিতির জন্য বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করছেনক্ষুদ্র খামারিরা।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুইমাস আগেও ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজিতে যে ব্রয়লার মুরগি কেনা যেতো এখন সেটি বিক্রি হচ্ছে ২১০ থেকে ২৩০ টাকায়। কোথাও কোথাও ২৫০ টাকা। এক কেজি সোনালী মুরগি কিনতে লাগছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। দেশি মুরগির দর উঠেছে ৫৫০ টাকা কেজি। অন্যদিকে, এই সময়ের ব্যবধানে কেজিতে ২০০ টাকা বেড়ে খাসির গোশত এখন বিক্রি হচ্ছে ১,১০০ টাকা। আর ১০০ টাকা বেড়ে গরুর গোশত বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা।
মহাখালী কাঁচা বাজার এলাকায় গোশত কিনছিলেন কাদির। তিনি বলেন, ব্রয়লারের দাম বেড়েছে তো বেড়েছেই। আর কমার নাম নেই। ২৩০ টাকা কেজি দরে কিনলাম। বিকেলে আসলেই হয়ত দেখবো ২৫০ টাকা। এটাই ম্যাজিক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের। আরেক ক্রেতা সরকারি চাকরিজীবী বলেন, ইলিশ মাছ কিনতে চাচ্ছিলাম। দাম শুনে তো মাথা ঘরে পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয়েছে। বাজার পুরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে।
বাজারে রুইমাছ প্রতি কেজি ২৮০-৩০০ টাকা, তেলাপিয়া, ১৮০-২০০ টাকা, কার্প ২৫০-৩০০ টাকা, ইলিশ ১২০০-১৪০০ টাকা, মলা ৪৫০-৫০০ টাকা, শিং ৩৮০-৪২০ টাকা, পাবদা ৩০০-৩৫০ টাকা এবং কই মাছ ৩৫০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গোশতের দাম শিগগিরই কমছে না। মূলত ব্রয়লারের বাজার সিন্ডিকেটের হাতে চলে যাওয়ায় দাম কমছে না। অন্যদিকে, মাছ ব্যবসায়ীরা বলছেন মাছের দাম নাগালের মধ্যেই আছে।
এছাড়া এক মাস আগেও খুচরা বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়। সেটি এখন বাজারে ক্রেতাপর্যায়ে প্রতি কেজি ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের পর এখন আবার বেড়েছে আদার দাম। ক্রেতাপর্যায়ে মানভেদে আদা বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়। এছাড়া দেশি রসুন (ছোট) প্রতি কেজি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা এবং আমদানি করা রসুন (বড়) প্রতি ১৬০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে দাম নিয়ে ক্রেতাপর্যায়ে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে জানা গেছে, সাধারণ মানের আদা ২৮০ থেকে ৩২০ টাকা বিক্রি হলেও চায়না আদা আরও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছে, বাজারে দেশি আদা থাকলেও আমদানি করা আদার সরবরাহ কম। তাই বাড়তি দাম। এই দাম আরও বেড়েছিল।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বৃহস্পতিবার বাজারে দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭৫ টাকায় এক সপ্তাহ আগে এর দাম ছিল ৮০ টাকা। এক মাসে আগে এই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকায়। ফলে এক মাসে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৮১ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এদিকে, রাজধানীর নিকেতন ও মহাখালী কাঁচা বাজারে ঘুরে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। প্রতি কেজি পটল ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৭০ টাকা, বেগুন ৮০, ঝিঙে ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, পেঁপে ৮০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, টমেটো কেজি ৮০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, শসা ৬০-৬৫ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়া (ফাঁলি) ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে, গাজর প্রতি কেজি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, কাঁচামরিচ প্রতি কেজি ২৫০ টাকা, লাউ প্রতি পিস ৮০-১০০ টাকা, জালি কুমড়ার পিস ৬০ টাকাএবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। শাক-সবজির এমন ঊর্ধ্বধমুখী প্রবণতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। রাজধানীর মহাখালী কাঁচাবাজারে বাজার করতে আসেন বেসরকারি চাকরিজীবী নিয়ামত। তিনি বলেন, মাছ কিনে এলাম শাক-সবজির বাজারে। ভাবলাম বেঁচে গেছি। এসে দেখি ৮০ টাকার নিচে কোনো সবজিই নেই। এটা অন্যায়। আমাদের কৃষিপ্রধান দেশ, কিন্তু এরপরও এত দাম সবজির! কী করে সম্ভব?
আরেক ক্রেতা বললেন একই কথা। সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। এটা সম্পূর্ণ কারসাজি। বাজার তো সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাজার ঘুরে দরদাম সম্পর্কে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে ৭০/৮০ টাকা কেজির নিচে কোনো সবজি নেই। বাজারে পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি, আর করলা ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের সবজিই যদি এত বাড়তি দামে বিক্রি হয়, তাহলে আমরা কীভাবে কিনব?
নিকেতন গেটের কাঁচাবাজারে এসেছিলেন সোলাইমান। একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন তিনি। বলেন, বাজারে এসে তো মাথা ঘুরাচ্ছে রীতিমতো। সবজির দাম দেখে আধা কেজি, আড়াইশ গ্রাম করে সবজি কেনা লাগছে। যেই সবজির দাম করছি সেটা ৮০ টাকা, কম দামে কোনো সবজি নেই বাজারে। এত দাম হলে আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ তো সবজিও কিনতে পারবো না।
হঠাৎ সবজির এমন বাড়তি দাম সম্পর্কে মহাখালী কাঁচা বাজারে বিক্রেতা বলেন, অতিরিক্ত গরমে সবজির সরবরাহ কম। অনেক ধরনের সবজির মৌসুম এখন শেষের দিকে। ফলে সেসব সবজির দাম বাড়তি। বৃষ্টি নেই বললেই চলে, অতিরিক্ত গরম, যে কারণে সবজি কম ফলছে। চাহিদার তুলনায় পণ্য ঢাকায় কম আসায় কারওয়ান বাজারসহ পাইকারি বাজারগুলোতেই সবজির দাম বাড়তি। যে কারণে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।
পেঁপের বাজার হঠাৎ করেই বেড়েছে, কারণ পেঁপের মৌসুম শেষের দিকে, গাছে এখন পেঁপে নেই। তাই প্রতি কেজি খুচরা বাজারে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম থাকায় করলার দাম বেড়ে ১০০ টাকা হয়েছে।