একজন লেখক গত ২৯ জানুয়ারি নয়া দিগন্তে চারটি প্রধান সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন মুসলিম বিশ্বের। এগুলো হচ্ছে- ১. বিভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর বিরোধ, ২. অমুসলিম নাগরিকদের ক্ষোভ, ৩. নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়ন এবং ৪. ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতার সমস্যা।
লেখক সমস্যাগুলো তুলে ধরেছেন, সমাধান সম্পর্কে কিছু বলেননি। প্রথম সমস্যার আলোচনা করতে গিয়ে তিনি ‘মাজহাবি ঝগড়া’র কথা বলেছেন। তা ছাড়া তিনি শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের বিরোধের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি এ ক্ষেত্রে অনেক তথ্য দিয়েছেন। এ ব্যাপারে বিভিন্ন রাষ্ট্র ও ব্যক্তির কিছু নীতিরও সমালোচনা করেছেন। কিছু ক্ষেত্রে ইরান, কিছু ক্ষেত্রে সৌদি আরব, কিছু ক্ষেত্রে শিয়া গোষ্ঠী বা সুন্নি গোষ্ঠী এ জন্য দায়ী বলেছেন।
মুসলমানদের মাজহাবি বিরোধ এখন আগের তুলনায় কম বলে মনে হয়। সব সুন্নি মাজহাবই বাড়াবাড়ি ত্যাগ করেছে। সঙ্ঘাত খুব কমই হয়। তবে শিয়া-সুন্নি সঙ্ঘাত বেড়েছে। এ জন্য দায়ী বিভিন্ন গোষ্ঠীর কিছু নেতা। সাধারণ সুন্নি ও শিয়ারা এতে জড়িত নয়। ইতিহাসে এ অবস্থা সব সময় ছিল না। আব্বাসি, ওসমানি, মোগল আমলেও এসব সমস্যা প্রকট ছিল না। কারণ, সরকার তা হতে দিত না।
মাজহাবি বা সুন্নি-শিয়া বিরোধের নিষ্পত্তির জন্য বা সমাধানে মুসলিম রাষ্ট্র, সংগঠন ও চিন্তাবিদদের ভূমিকা নিতে হবে। এ জন্য একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কেন্দ্র বা ফোকাল পয়েন্ট হতে পারে ওআইসির ফিকাহ একাডেমি বা ইসলামি সলিডারিটি সংস্থা। তারা এ কাজে ইসলামি সংগঠনগুলো ও চিন্তাবিদদের ব্যবহার করতে পারেন।
এ প্রসঙ্গে এটা মেনে নিতে হবে যে, বিভিন্ন মাজহাবের ফিকাহর ক্ষেত্রে খুঁটিনাটি মতবিরোধ আছে, তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। প্রত্যেক মাজহাব সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে কুরআন ও সুন্নাহর ভিত্তিতেই তাদের বিস্তারিত মাসায়েল তৈরি করতে। তেমনিভাবে শিয়া ও সুন্নিদের মধ্যে আকিদার গৌণ বিষয়ে যে মতবিরোধ রয়েছে, তা নিয়ে বিতর্কে না যাওয়া উচিত। কেননা আল্লাহ, রাসূল সা:, আখেরাত, কুরআন, ফেরেশতা এবং নবীদের সম্পর্কে মৌল আকিদায় কোনো বিরোধ নেই। ওআইসি ফিকাহ একাডেমিও চারটি সুন্নি ও তিনটি শিয়া মাজহাবকে স্বীকৃতি দিয়েছে (ওআইসির ওয়েবসাইট দেখুন)।
অমুসলিম সংখ্যালঘুদের ক্ষোভ বেশি থাকার কথা নয়। তবে যদি থাকে তবে সেটি দূর করতে হবে। ইসলাম অমুসলিমদের সব মানবিক অধিকারে বিশ্বাসী। এ ব্যাপারে মদিনা সনদ, বিদায় হজের বাণী এবং ওআইসি মানবাধিকার দলিলে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, (ঙওঈ ফবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ যঁসধহ ৎরমযঃং লিখে এড়ড়মষব সার্চ দিলে এটি পাওয়া যাবে)।
নারীদের অবস্থার এখন অনেক উন্নতি হয়েছে। তাদের মানবাধিকার পুরুষের সমান। সব প্রধান ইসলামি দল ও সব প্রধান ইসলামি চিন্তাবিদ নারীদের অগ্রগতির জন্য কাজ করছেন। সামান্য যা সমস্যা আছে তা অচিরেই দূর হবে। (এ ব্যাপারে আব্দুল হালিম আবু শুক্কাহ লিখিত ‘রাসূলের যুগে নারী অধিকার’ বইটির চারটি খণ্ড পড়া যেতে পারে, বিআইআইটি প্রকাশিত, বাড়ি নম্বর-৪, রোড নম্বর-২, উত্তরা, সেক্টর-৯)। এসব সমস্যার ক্ষেত্রেও ওআইসি, চিন্তাবিদদের এবং মুসলিম সংগঠনের ভূমিকা থাকতে হবে।
এখন রইল ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতার বিষয়। মুসলিম চিন্তাবিদেরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ইসলামসম্মত বলে মেনে নিয়েছেন। সুতরাং ভিন্নমতের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। বর্তমানে সেকুলার দলও যেসব দেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম কিংবা সংবিধান ইসলামভিত্তিক, সেখানে কাজ করছে। কিছু সমস্যা হতে পারে। আশা করি, সেগুলোর সমাধানও হবে।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার