রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি এবং আত্মশুদ্ধি-তাক্বওয়া অর্জনের মাস পবিত্র মাহে রমযানের শিক্ষাকে যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে আত্মগঠনসহ সকল অন্যায়, অসত্য ও জুলুমের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন। তিনি পবিত্র মাহে রমযান উপলক্ষে নগরবাসীকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে এক বাণীতে এসব কথা বলেন।
সেলিম উদ্দিন বলেন, নিঃসন্দেহে রমযান হলো সর্বোত্তম মাস। এ মাসে আল্লাহ তায়ালা মহাগ্রন্থ আল কুরআন নাযিল করেছেন। কালামে হাকীমে ঘোষিত হয়েছে, ‘রমজান মাস হলো সেই মাস, যে মাসে কুরআন নাযিল করা হয়েছে। যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ অনুসারীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশক; আর ন্যায়-অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাসটি পাবে, সে রোজা রাখবে….। (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত-১৮৫)। হাদিসে কুদসীতে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘বান্দার সব আমল তার নিজের জন্য; কিন্তু শুধু রোজা আমার জন্য। তাই আমি নিজ হাতেই এর প্রতিদান দেব।’
তিনি বলেন, পবিত্র মাহে রমযানকে কুরআনের মাসও বলা হয়। এ মাসে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার পেছনে উম্মতের জন্য ইঙ্গিত হলো, তারা যেন বেশি বেশি কুরআন অধ্যয়ন ও গবেষণা করে এবং বাস্তবজীবনে তার প্রতিফলন ঘটায়। জিবরাইল (আ.)-ও এ মাসে রাসূল (সা.)-এর সঙ্গে কুরআন চর্চা করতেন। যে বছর রাসূল (সা.)এর ওফাত হয়েছিল, সে বছর রমজানে তিনি জিবরাইল (আ.)-কে দু’বার পূর্ণ কুরআনুল কারিমের তেলাওয়াত শুনিয়েছেন। রমযান মাসে রাসূল (সা.)-এর দানশীলতা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বেড়ে যেত। তিনি যখন দান করতেন, তখন অনেক বেশি বেশি দান করতেন। যখন কাউকে সাহায্য করতেন, এমনভাবে করতেন, যেন সে আর দারিদ্রকে ভয় না পায়। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত এমাসে বেশি বেশি দান-খয়রাত করে আল্লাহ তায়ালার সন্ততি অর্জন করা। তাই আর্ত-মানবতার কল্যাণে সুদের বিপরীতে যাকাত ও কর্জে হাসানাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি গণমানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠায় ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদেরকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, পবিত্র মাহে রমযানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দ্রব্যমূল্য কমানো হলেও রমযান শুরুর আগেই আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর থাকলেও বাজার নিয়ন্ত্রণে এসব সংস্থা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। মূলত, সরকার সংশ্লিষ্টদের বাজার সিন্ডিকেটের সাথে অবৈধ সখ্যতার কারণেই বাজার এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তাই দেশের সাধারণ মানুষ যাতে যথাযথভাবে সিয়াম পালন করতে পারে এজন্য অনতিবিলম্বে সরকারকে বাজার নিয়ন্ত্রণে জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। একই সাথে মাহে রমযানের পবিত্রতা রক্ষায় দিনের বেলা হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ, গণমাধ্যমে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা পরিহার রোজার পরিবেশ যথাযথভাবে রক্ষা করতে হবে। তিনি পবিত্র মাহে রমযানে দ্রব্য মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা ও এই পবিত্র মাসের মর্যাদা রক্ষায় সরকারকে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহবান জানান।
মহানগরী আমীর বলেন, মূলত, এই মহিমান্বিত মাস দোয়া কবুল ও নাযাতের মাস। মানুষ যাতে তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি লাভ করতে পারে এজন্যই সিয়ামকে আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় করে দেয়া হয়েছে। কালামে পাকে বলা হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সূরা আল বাকারা, আয়ত-১৮৩)। তাই প্রত্যেক মুমিনের উচিত মাহে রমযানের হক যথাযথভাবে আদায় করে আত্মশুদ্ধি ও তাযকিয়া অর্জনের মাধ্যমে ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি অর্জন করা। তিনি এই মোবারক মাসকে স্বাগত জানান এবং এ উপলক্ষে নগরবাসীসহ দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।