গণতন্ত্র-গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নবীন আইনজীবীদের সর্বোচ্চ ত্যাগ ও কুরবানীর মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের উপদেষ্টা, সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সহকারি সম্পাদক ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
তিনি আজ লক্ষ্মীপুরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল লক্ষ্মীপুর জেলা শাখা আয়োজিত বাংলাদেশ বার কাউন্সিল কর্তৃক ২০২৩ সালে সনদপ্রাপ্ত অর্ধশত নবাগত আইনজীবীদের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। লক্ষ্মীপুর বারের সিনিয়র ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিজ্ঞ আইনজীবী ও ল’ইয়ার্স কাউন্সিল লক্ষ্মীপুর জেলার সভাপতি অধ্যাপক নজির আহামদ এডভোকেটের সভাপতিত্বে ও এডভোকেট মহসীন কবির মুরাদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার উপদেষ্টা এস ইউ এম রুহুল আমিন ভুঁইয়া।
আরো উপস্থিত ছিলেন লক্ষ্মীপুর বারের সাবেক সভাপতি এড. শাহাদাত হোসেন, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল লক্ষ্মীপুর জেলার সেক্রেটারী এডভোকেট মনির হুসাইন, এড. মহিউদ্দিন বাহার, এড. তৌহিদুর রহমান, এড. খোরশেদ আলম, এডভোকেট বেলাল উদ্দিন, এড. জাকির হোসেন মঞ্জু ও এড. মাহীর আসহাব প্রমূখ । এ সময় নবাগত অর্ধশত নবীন আইনজীবীসহ শতাধিক আইনজীবীদের মাঝে ক্রেস্ট ও ট্রাই বিতরণ করা হয়। প্রধান অতিথি সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ তাদের সাথে মধ্যাহ্নবোজে মিলিত হন।
ড. রেজাউল করিম বলেন, অপরাধ সভ্যতার অবদান। যখন সভ্যতা বিকশিত হয়নি তখন অপরাধও ছিলনা। কিন্তু যখন সভ্যতা বিকশিত হয়েছে তখন মানুষের বিভিন্ন কাজকে অপরাধ হিসাবে আখ্যা দিয়ে তা প্রতিবিধানের জন্য আইন ও আদালতের পথচলা শুরু হয়েছে। আর আইনের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আইন হলো একটি জাতি ও এর নাগরিকদেরকে পরিচালনা করার জন্য কিছু বিধি-বিধান ও নিয়ম-নীতির সমষ্টি । আইন বিদ্যায় সর্বজনবিদিত অভিধান Black’s Law Dictionary তে আছে, body of rules and principles governing the affairs of a community and enforced by a political authority; a legal system’(Black’s Law Dictionary, 11th ed. 2019) অর্থাৎ আইনব্যবস্থা হলো, কিছু বিধি-বিধান ও নিয়ম-নীতির সমষ্টি, যা একটি জাতি-গোষ্ঠীর যাবতীয় বিষয়কে পরিচালনা করে এবং যা পলিটিক্যাল অথরিটির দ্বারা কার্যকর করা হয়। তাই নবাগত আইনজীবীদের আইনের প্রতি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল থেকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। তিনি নবীন আইনজীবীদের কর্মজীবনে উত্তরোত্তর কল্যাণ ও সাফল্য কামনা করেন।
তিনি বলেন, আইনজীবীদের দায়িত্ব হলো সত্যের পক্ষে আইনী লড়াই। আইনজীবী হিসেবে আপনাদের প্রধান কাজই হলো আদালতের মাধ্যমে সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। শুধু অর্থ উপার্জন নয় বরং অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত এবং নিরাপরাধকে সুরক্ষা দান করাই হবে একজন হকপন্থী আইনজীবীর প্রধানতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। পবিত্র কালামে হাকীমে ইরশাদ হয়েছে, হে ইমানদারগণ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্য কথা বলো (সুরা আহযাব: ৭০) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, সত্য সমাগত, মিথ্যা বিতাড়িত। নিশ্চয়ই মিথ্যা অবশ্যই পতনশীল (সুরা শুরা: ৮১) তাই নবাগত আইনজীবীদের সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সাথে জনগণের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে।
তিনি আরো বলেন, একজন আইনজীবীর মূল দায়িত্ব হলো সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অবিচল থেকে অপরাধ ও অপরাধীর প্রতিবিধান এবং নিরাপরাধ মানুষকে অনাক্সিক্ষত শাস্তির হাত থেকে পরিত্রাণ দেয়া। এ প্রসঙ্গে Sir William Blackstone বলেছেন, ১০ জন অপরাধীও যদি বেঁচে যায় যাক, তবু একজন নিরাপরাধ ব্যক্তি যেন অন্যায়ভাবে সাজাভোগ না করে। মূলত, আইনজীবীদের কাজই হলো, সুবিচার প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখা। একজন আইনজীবী সমাজে সুবিচার প্রতিষ্ঠা ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য সবার কাছে নৈতিকভাবে দায়বদ্ধ। একই সাথে সত্য উদঘাটন ও মিথ্যা বর্জন, নিরপেক্ষতা, আইন সংশোধন ও দ্বন্দ্ব বিবাদ নিরসনে ভূমিকা, অভাবী ও মজলুমদের বিনামূল্যে আইনী সহায়তা ও জুলুম বন্ধে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করতে হবে।
তিনি নবীব আইনজীবীদের দেশাত্মবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহবান জানান।