সরকার পতন নিশ্চিত জেনেই যাকাতের মত ধর্মীয় আলোচনা সভা থেকে নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার ও জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন।
তিনি গতকাল মিরপুর-১ ক্যাপিটাল মার্কেট ‘ফোর সি রেস্টুরেন্টে’ মিরপুর থানা পশ্চিম জামায়াত আয়োজিত ‘ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা থেকে নেতাকর্মীসহ অর্ধশতাধিক ধর্মপ্রাণ ও সাধারণ মানুষকে সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করার প্রতিবাদে এবং গ্রেফতারকৃতদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতি আজ এসব কথা বলেন।
সেলিম উদ্দিন বলেন, রহমত, মাগফিরাত ও জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির বারতা নিয়ে আবারো আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে পবিত্র মাহে রমযান। এ মাসেই বেশি বেশি নেক আমল করার মধ্যেই রয়েছে জাগতিক কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি। আর ইসলামের পঞ্চ স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ হচ্ছে যাকাত। সঙ্গত কারণেই রমযান মাসে যাকাত আদায়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় সংগঠন প্রতি বছরই আলোচনা সভা, সেমিনার-সিম্পোজিয়াম আয়োজন করে থাকে। সে ধারাবাকিতায় গত ১১ মার্চ রাজধানীর মিরপুরের-১ এ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী উত্তরের মিরপুর পশ্চিম থানা ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে। আলোচনা চলাকালে দারুসসালাম থানা পুলিশ অতর্কিতভাবে সভাস্থল ঘিরে ফেলে এবং সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীসহ ধর্মপ্রাণ মানুষ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে গ্রেফতার ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা দিয়ে ১০ জনকে ১ দিনের পুলিশি রিমান্ডে এনেছে এবং বাকিদেরকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে । যা ধর্মীয় স্বাধীনতা, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন এবং সরকারের স্বৈরাচারি, বাকশালী ও ফ্যাসীবাদী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
তিনি আলোচনা সভা থেকে নিরীহ নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষকে গ্রেফতার-রিমান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেন।
তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানের প্রস্তাবনার তৃতীয় প্যারায় বলা হয়েছে, ‘আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা-যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে’। আওয়ামী লীগের অতিমাত্রায় ক্ষমতলিপ্সা ও আদর্শিক দেউলিয়াত্বের কারণেই আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন ও সাংবিধানিক অধিকারগুলো প্রায় ক্ষেত্রেই অধরাই রয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেশে একদলীয় বাকশালী শাসন কায়েম করেছিল। একই বছরে ১৬ই জুন রাষ্ট্রায়ত্ব ৪টি পত্রিকা বাদে সকল সংবাদপত্র নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ করে নিজেদের অগণতান্ত্রিক, বাকশালী ও ফ্যাসীবাদী চরিত্র জনগণের সামনে উম্মুক্ত করে দিয়েছিল। তাই দেশে ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই এই ফ্যাসীবাদী ও স্বৈরাচারি সরকারকে অবিলম্বে ক্ষমতা থেকে বিদায় করতে হবে। তিনি সরকার পতন ও নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের গণদাবি আদায়ের লক্ষ্যে দলমত নির্বিশেষে সকলকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান।
তিনি আরো বলেন, আমাদের সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে সুষ্পষ্টভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭-এ বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা বা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ-সাপেক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হইবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে’। অনুচ্ছেদ ৩৮-এ বলা হয়েছে, ‘জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি ও সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে’। কিন্তু অতীব পরিতাপের বিষয় যে, একটি ধর্মীয় আলোচনা সভা থেকে নিরাপধ নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে নির্মম ও নিষ্ঠুর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। যা গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের সাথে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
তিনি সরকারের জুলুম-নির্যাতন মোকাবেলায় দলমত নির্বিশেষে সকলকে রাজপথে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান। অন্যথায় আমাদের জাতিস্বত্তা হুমকীর মুখোমুখি হবে।