মাহমুদুল হাসান। পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী। সস্ত্রীক ফ্ল্যাট কিনতে এসেছেন রিহ্যাব চট্টগ্রাম আবাসন মেলায়। ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন স্টল দেখে অবশেষে স্বনামধন্য একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানে ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন। এ রকম অনেকে মেলায় ফ্ল্যাট ও প্লট বুকিং দিচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার থেকে নগরীর রেডিসন ব্লু হোটেলে শুরু হয়েছে রিহ্যাব (রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ) আয়োজিত চার দিনের আবাসন মেলা। শেষ হবে আগামীকাল।
রিহ্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, এ খাত ঘুরে দাঁড়ানোর প্রধান অন্তরায় রড সিমেন্টের বাজার। রড আর সিমেন্টের দামটা যদি সহনীয় পর্যায়ে করা যেত, তাহলে আবাসন খাতটি ঘুরে দাঁড়াত। নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে ফ্ল্যাট তৈরির খরচ বেড়েছে। তাই বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। এতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য ফ্ল্যাট কেনা কষ্টকর হয়ে উঠেছে।
ফ্ল্যাট ক্রেতা মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ছুটির দিন হওয়ায় আবাসন মেলায় লোক সমাগম বেশি। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার ফ্ল্যাট বা প্লটের দাম আগের চেয়ে বেশি মনে হচ্ছে।’
এবারের মেলায় চট্টগ্রামের ৪৮টি আবাসন প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালসসহ কয়েকটি লিংকেজ প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
রিহ্যাবের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মেলায় ৪০ লাখ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ চার কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাটও রয়েছে। তবে ফ্ল্যাটের অবস্থানভেদে দামের তারতম্য রয়েছে। এর মধ্যে খুলশী, নাসিরাবাদ হাউজিং, জামালখান সড়ক, পাথরঘাটা, মেহেদীবাগ, পাঁচলাইশ ও মিমি সুপার মার্কেটের বিপরীতে হিলভিউ আবাসিক এলাকায় প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম পড়ছে পাঁচ হাজার টাকা থেকে ১৪ হাজার টাকা পর্যন্ত।
অন্যদিকে কর্নেলহাট, হালিশহর, বাকলিয়া, মুরাদপুর, অক্সিজেন, চকবাজার ও রহমতগঞ্জ এলাকায় প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম পড়ছে তিন হাজার ৩০০ থেকে আট হাজার টাকা পর্যন্ত। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সহজে গৃহঋণ সুবিধা প্রদানের জন্য মেলায় স্টল বসিয়েছে। ঋণ সুবিধা পাওয়ায় এবারের মেলায় ছোট ও মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের প্রতি গ্রাহকের চাহিদা বেশি। রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোও ক্রেতাদের পছন্দানুসারে দুই ও তিন বেডের ৯০০ বর্গফুট থেকে এক হাজার ৪০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের পসরা সাজিয়েছে।
রিহ্যাব নেতারা জানান, দীর্ঘদিনের মন্দাভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে চট্টগ্রামের আবাসন খাত। চট্টগ্রামে আয়োজিত চার দিনব্যাপী রিহ্যাব মেলায় বুকিংয়ের অবস্থা দেখে আশায় বুক বাঁধছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। মেলায় ছোট ও মাঝারি আকারের ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি। ভালো লোকেশনের ফ্ল্যাটের দিকে নজর বেশি ক্রেতাদের। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও প্লট-ফ্ল্যাটের বিপরীতে ঋণ সহায়তা বা ‘প্রমোশনাল অফার’ নিয়ে হাজির হওয়ায় আবাসন খাতের চাকা আরও দ্রুত ঘুরছে।
রিহ্যাব সূত্র জানায়, ২০২২ সালে এ মেলায় ৩০০ কোটি টাকার প্লট-ফ্ল্যাট বুকিং হয়েছিল। এরপর ২০২১ সালে তা ৪০০ কোটির কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। এবারও বেশ ভালো বেচাকেনা চলছে। বেচাকেনা বাড়ায় আবাসন খাত একটি ভালো অবস্থানে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকা, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি ও প্রবৃদ্ধি বাড়াসহ নানা কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। যার সুফল পাচ্ছে আবসান খাতও। মেলার দ্বিতীয় দিনে (শুক্রবার) ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তারা বিভিন্ন স্টল ঘুরে পছন্দের ফ্ল্যাট ও প্লট বুকিং দিচ্ছেন।
তারেক চৌধুরী নামের এক ব্যাংকার মেলায় এসেছেন ফ্ল্যাট কিনতে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘শহরে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। জমি কিনে এই শহরে বাড়ি করার সক্ষমতা নেই। তাই সাধ্যের মধ্যে মাথা গোঁজার ঠাঁই হিসাবে একটি ফ্ল্যাটই বুকিং দিয়েছি।’
মেলায় দেখা যায়, অ্যাকর্ড হোল্ডিং লিমিটেড নিয়ে এসেছে আটটি প্রকল্প। এসব প্রকল্পের মধ্যে চন্দনপুরায় তিনটি, পাথরঘাটায় একটি আর বাকিগুলো নাসিরাবাদ ও কক্সবাজারে। এ প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র সেলস নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফ জানান, করোনার পর এবারের মেলায় লোক সমাগম বেশি হচ্ছে। মেলার দ্বিতীয় দিনেই লোকে-লোকারণ্য। অন্যান্য বছরের মতো এবারও মেলায় মাঝারি ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি। এ ছাড়া রেডিমেড দোকানের চাহিদাও বেশি।’
রিহ্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান আবদুল কৈয়ুম চৌধুরী বলেন, অন্যান্য বছরের মতো এবারও আবাসন মেলা জমে উঠেছে। মেলার আরও দু’দিন বাকি আছে। শেষ দিকে হয়তো আরও জমে উঠবে। আবাসন খাত আরও দ্রুত ঘুরে দাঁড়াত, যদি রড এবং সিমেন্টের দাম কমিয়ে আনা যেত। নির্মাণসাগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে এ খাতে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে।
সোর্স : যুগান্তর