সেলিম উদ্দিন বলেন, পিলখানা হত্যাযজ্ঞ বিশ্বের সকল নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতাকে হার মানিয়েছে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধেও এতো সংখ্যক সামরিক কর্মকর্তা শাহাদাত বরণ করেন নি। এই হত্যাকান্ডের মাধ্যমে দেশপ্রেমী সেনাকর্মকর্তাদের হত্যা করে দেশের সার্বভৌমত্ব, অখন্ডতা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও সীমান্তকে মারাত্মক হুমকীর মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। দেশ, জাতি ও দেশপ্রেমী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসাবেই ইতিহাসের এই রক্তাক্ত অধ্যায়ের অবতারণা করা হয়েছিল। তিনি পিলখানায় নিহতদের শাহাদাত কবুলিয়াত, শহীদ পরিবারের সদস্যদের ধৈর্যধারণ এবং দেশ-জাতির কল্যাণ কামনায় মহান আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করেন।
তিনি বলেন, পিলখানা ট্রাজেডি সভ্যতার ইতিহাসে নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকান্ড। মূলত, ঘটনা চলাকাকালে তড়িঘড়ি করে হত্যাকারীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে দেশপ্রেমী সেনা কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবার-পরিজনদের হত্যা ও নির্মম নির্যাতনের আরও সুযোগ দেয়া হয়েছিল। রাজধানীর উপকন্ঠে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যা ও নিধনযজ্ঞ চালালেও পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি হত্যাকান্ড নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্টগুলো আজও আলোর মুখ দেখেনি। তিনি ঘটনার নেপথ্যের মূল নায়কদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। অন্যথায় ব্যর্থতার জন্য সরকারকে একদিন জনগণের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
তিনি আরো বলেন, মূলত, পিলখানা ট্রাজেডির মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে দুর্বল ও রাষ্ট্রীয় সীমানাকে অরক্ষিত করা হয়েছে। সরকার গণমানুষের কল্যাণের পরিবর্তে নিজেদের আখের গোছাতেই ব্যস্ত রয়েছে। তারা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার পরিবর্তে নিজেরাই জননিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। তারা বিরোধী দলকে রাজপথে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে না দিয়ে সংবিধানের মারাত্মক লঙ্ঘন করছে। সরকারের উপর্যুপরি ব্যর্থতার কারণেই দেশ এখন দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এমনকি দুর্নীতিবাজরা দেশ থেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে ব্যাপক বিত্তবৈভব সৃষ্টি করেছে। সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতেই বিরোধী দলের ওপর জুলুম, নির্যাতন, হত্যা, সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী জুলুম-নির্যাতন চালিয়ে অতীতে কোন আদর্শকে নির্মূল করা যায়নি; আর কখনো যাবেও না। তিনি সরকারকে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে গণতান্ত্রিক ও ইতিবাচক রাজনীতিতে ফিরে আসার আহ্বান জানান। অন্যথায় সরকারের জন্য লজ্জাজনক পরিণতি অপেক্ষা করছে।
মহানগরী আমীর বলেন, সরকার নিজেদের ক্ষমতা অনৈতিকভাবে দীর্ঘায়িত করার জন্যই দেশের গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধ্বংস করতেই জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত কেয়ারটেকার সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে। দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনকে জনগণের ভোট চুরি ও অধিকার হরণের কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে। তারা আগামী দিনে আবারো ২০১৪ ও ২০১৮ সাল স্টাইলে ভোট চুরি ও নৈশ্যভোটের মাধ্যমে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চায়। কিন্তু সচেতন জনতা তাদের সে ষড়যন্ত্র কোন ভাবেই বাস্তবায়িত হতে দেবে না বরং নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারের দাবি আদায় করেই ছাড়বে ইনশাআল্লাহ। তিনি সরকারকে গণদাবি মানতে বাধ্য করতে দলমত নির্বিশেষ সকলকে রাজপথে নেমে আসার আহবান জানান। অন্যথায় জাতির ঘাড় থেকে ফ্যাসীবাদ, বাকশাল ও স্বৈরাচারের জগদ্দল পাথর নামানো সম্ভব হবে না।