এইচ এম জোবায়ের
রাজনীতি বলতেই চতুরতা, কুটিলতা বা ভিন্নমতের দমন-পীড়ন নয়। যে কোন উপায়ে ক্ষমতায় যাওয়া, ক্ষমতায় টিকে থাকা ও ক্ষমতাকে অন্যায়-অবৈধভাবে দীর্ঘায়িত করাও রাজনৈতিক দলের কাজ হতে পারে না। গণতন্ত্রের অন্তর্নিহিত শক্তির মধ্যে অনেকগুলো খুঁটি রয়েছে। পরমতসহিষ্ণুতা তার অন্যতম খুঁটি। ভিন্নমত বা পরমত সহ্য করার সৎসাহস ও ক্ষমতা যাদের আছে তারাই রাজনীতির ভাল ছাত্র হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। যারা নিজের অভিমতকে সবসময় চাপিয়ে দিতে চান এবং ভিন্নমত সহ্যের ব্যাপারে অসহিষ্ণু, রাজনীতি বিজ্ঞান তাদেরকে রাজনীতি করার অনুমতি দেয়নি। প্রশ্ন আসে- বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা তাহলে রাজনীতি করছেন কীভাবে? উত্তরে বলা যায়- তারা সত্যিকারের রাজনীতি করছেন না। যে রাজনীতি মানুষ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ বয়ে আনে না তাকে কখনই রাজনীতি বলা যায় না। যাদের রাজনীতি হিংসা-বিদ্বেষ ও ঘৃণায় ভরা তারা হলেন তথাকথিত রাজনীতিবিদ। যারা রাজনীতিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তারাও রাজনীতির পরিবর্তে পেটনীতি করছেন। তাদের রাজনীতি সংকীর্ণ ব্যক্তিস্বার্থে জিঞ্জিরাবদ্ধ। তারা মানুষ ও দেশের জন্য সুদূরপ্রসারী অর্থবহ কোন অবদান রাখতে পারেন না।
পরমতসহিষ্ণুতা বলতে অপরের মতের প্রতি সহিষ্ণুতা ও শ্রদ্ধাশীলতাকে বোঝায়। এর বিশেষণ পদ হলো- সহিষ্ণু। যার অর্থ ধৈর্যশীল, ক্ষমাশীল, সহনশীল ইত্যাদি। অর্থাৎ, দল হিসেবে এক দল অন্য দলের প্রতি এবং ব্যক্তি রাজনীতিবিদ একজন অন্যজনের প্রতি নমনীয় থাকবেন, শ্রদ্ধাশীল থাকবেন। রাজনীতিতে হামলা-মামলা, হয়রানির স্থান নেই। সবাই নিয়মতান্ত্রিক, গঠনতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক পদ্ধতিতে রাজনীতি করার অধিকার সংরক্ষণ করবেন। গণতান্ত্রিক পন্থায় ও সুনির্ধারিত রাজনৈতিক কর্মসূচীর মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখার অধিকার সকল রাজনৈতিক দলের থাকবে।
রাজনীতি বিজ্ঞানের পাশাপাশি দুনিয়ার সকল ধর্মগ্রন্থেও পরমতসহিষ্ণুতার কথা বলা হয়েছে। প্রথমে ইসলামের দিকে তাকাই। ইসলাম দুনিয়ার একমাত্র পূর্ণাঙ্গ ও কালজয়ী জীবন ব্যবস্থার নাম। যা শুরু থেকে আজ অবধি অবিকৃত অবস্থায় প্রতিজন মুসলমানের ঘরে সংরক্ষিত। কোটি মুসলমানের সিনাতেও রয়েছে আল কুরআনের সযতœ পরিচর্যা। সূরা ইউনুসের ৯৯ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন- “যদি তোমার রবের ইচ্ছে হতো (যে, যমীনে সবাই হবে মুমিন ও অনুগত) তাহলে সারা দুনিয়াবাসী ঈমান আনতো। তবে কি তুমি মুমিন হবার জন্য লোকদের ওপর জবরদস্তি করবে”? অত্র আয়াতের মাধ্যমে ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদের নীতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। ইসলাম মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি দিয়েছে। দীনের ব্যাপারে জোরজবরদস্তি করতে নিষেধ করা হয়েছে। রাসূল (সা.) কে শুধু ইসলামের অমীয় বাণী পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জোর করে ইসলামে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নবীগণকে (আ.) দেওয়া হয়নি।
বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম মূল বক্তব্য হলো- ‘অহিংসা’। ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ কথাটির মাধ্যমে পরমত, পরপথ ইত্যাদির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। সহিষ্ণু হওয়ার দীক্ষা বৌদ্ধধর্মেও রয়েছে। গৌতম বুদ্ধ সাধারণ মানুষের পক্ষে সহজে অনুসরণীয় ধর্মাচরণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তার ধর্মমতের বিভিন্ন দিকের মধ্যে- অষ্টাঙ্গিক মার্গ গুরুত্বপূর্ণ। তৃষার অবসান এবং আত্মার উন্নতি সাধনের জন্য বুদ্ধদেব ‘অষ্টাঙ্গিক মার্গের নির্দেশ দিয়েছেন, যথাঃ সৎ সংকল্প, সৎ বাক্য, সৎ কর্ম, সৎ চেষ্টা, সৎ স্মৃতি, সম্যক দৃষ্টি, সৎ জীবন ও সম্যক সমাধি। এছাড়া তিনি আরও কতগুলো নৈতিক উপদেশ দিয়েছেন, সেগুলো তার ধর্মের অঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। যেমন: হিংসা ত্যাগ করা, চুরি না করা, মিথ্যা না বলা, অর্থলিপ্সা ত্যাগ করা প্রভৃতি। বুদ্ধদেব বেদের অপৌরুষেয়তায় বিশ্বাস করতেন না, ব্রাহ্মণের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করতেন না এবং শ্রেণিভেদ মানতেন না। উপর্যুক্ত তিনটি ধর্মের আলোচনা থেকে স্পষ্টত বোঝা গেল যে, কোন ধর্মেই বাড়াবাড়ির কোন স্থান নাই।
অপরের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজের মতকে যুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস চালানোর সুযোগ আছে। তবে নিজের মতকে অপরের উপর চাপিয়ে দেওয়ার সুযোগ কোথাও নেই। নেই কোন ধর্মে, নেই কোন দেশের সংবিধানে। ধর্ম, দার্শনিক তত্ত্ব-সবখানেই ‘সহিষ্ণুতা’ মানবিক গুণাবলীর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম ও সামাজিক মূল্যবোধ নির্মাণের মূল ভিত্তি হিসেবে স্বীকার করা হয়। অন্যের কথা, বক্তব্য, মতামত, পরামর্শ ও জীবনাচার যতই বিরক্তিকর ও আপত্তিকর হোক না কেন, তা সহ্য করার মতো ধৈর্য যদি মানুষের মধ্যে না থাকে, তাহলে সমাজে নৈরাজ্য, উত্তেজনা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে বাধ্য। মত প্রকাশের স্বাধীনতা যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তাহলে আধিপত্যবাদ, একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সুতরাং রাজনীতির মাঠ বা দৈনন্দিন জীবন সকল ক্ষেত্রেই পরমতসহিষ্ণুতা এক অনন্য গুণ যা মানুষকে মানুষ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়। এর অনুপস্থিতি মানুষকে পশু বা তার থেকেও নিচে নামিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির দিকে তাকালে সহজেই তার সচিত্র প্রতিবেদন দেখতে পাওয়া যায়। এদেশের রাজনীতিবিদদের পেটভরা হিংসা; যেন হিংসার সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছেন তারা। সহিংসতা ও নৃশংসতার ভয়বহতা রাজনৈতিক অঙ্গনের নিত্য দিনের ট্রাজেডি সিরিজ। রাজনীতির এই বিকৃত চালচিত্র আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার জন্য চরম হুমকি। বাংলাদেশে বিরোধী দলের নেতা-কর্মী বলতেই শত মামলার ভারে ন্যুব্জ, আত্মগোপনকারী এবং আর্থিকভাবে চরম জুলুমের শিকার এক অসহায় ব্যক্তির ভিজ্যুয়াল স্ক্রিন আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠে। সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক সকল অধিকার থেকে যিনি বঞ্চিত। অনেকে নিজ দেশে প্রবাসী’র ন্যায় মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। অথচ বাংলাদেশের সংবিধান দেশের নাগরিকদের জন্য অবারিত স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। সংবিধানের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে- “….আমরা আরও অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষণমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে;”।
সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে রাষ্ট্র পরিচালনার অনেকগুলো মূলনীতি বিবৃত হয়েছে। তার মধ্যে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার অন্যতম। বলা হয়েছে, “প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকিবে, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নিশ্চিত হইবে এবং প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।” সরকার ও রাজনীতিবিদদের দ্বারা সংবিধানের এই মূলনীতি অহরহ লঙ্ঘন হচ্ছে। গণতন্ত্রের মূল চেতনা, মৌলিক মানবাধিকার, মানবসত্তার মর্যাদা ও মূল্যের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র থেকে অনেক আগেই নির্বাসনে গিয়েছে।
সংবিধানের তৃতীয় ভাগে মৌলিক অধিকারের বিস্তারিত বর্ণনা এসেছে। আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ধর্ম, প্রভৃতি কারণে বৈষম্য, সরকারী নিয়োগ লাভে সুযোগের সমতা, আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার অধিকার সংরক্ষণ, গ্রেপ্তার ও আটক, বিচার ও দন্ড সম্পর্কে রক্ষণ, চলাফেরার স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা এবং বাক-স্বাধীনতা, পেশা ও বৃত্তির স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার ইত্যাদি বিষয় সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। পবিত্র সংবিধানের এসব সার্বজনীন বক্তব্য এক শ্রেণির অসভ্য, বর্বর ও কুটিল রাজনীতিবিদ কর্তৃক অগ্রাহ্য হয়ে চলেছে। যারা ধরাকে সরা জ্ঞান করে মানুষকে মানুষ ঠাওর করেন না। রাষ্ট্রীয় বাহিনীর যাচ্ছেতা ব্যবহার, গু-া-মাস্তানদের পেশীশক্তি, অবৈধ অর্থের নির্লজ্জ প্রয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের বলয়ের কিছু মানুষের সাময়িক উন্নতি-অগ্রগতি হলেও সমাজের অধিকাংশ মানুষের জন্য রাজনীতিবিদরা আজকে এক ত্রাসের নাম। আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন মানুষরা রাজনীতিবিদদের থেকে দূরে থাকতে চান। সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে অপরাধের সকল দিক ও বিভাগে তারা এতটাই পারদর্শিতা অর্জন করেছেন যে, সাধারণ মানুষের পক্ষে সত্য-মিথ্যা, বৈধ-অবৈধ চিহ্নিতকরণই আজ কঠিন হয়ে পড়েছে। মাদক, দখল, খুন-ধর্ষণ, জুলুম-নির্যাতন এবং সকল ‘অবৈধ’র সাথে তাদের বেশীরভাগের উঠাবসা। সমাজের দিকে তাকালে মানুষের প্রতি মানুষের যে জুলুম চোখে পড়ে তার জন্য রাজনীতিবিদরাই দায়ী।
শিক্ষাঙ্গনে হত্যা-মারামারি এবং শিক্ষার কাঙ্খিত পরিবেশ না থাকার পেছনে রয়েছে রাজনীতিবিদদের হাত। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধগতি, তেল-গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে তাদের কারসাজি জড়িত। মানবাধিকারের হরহামেশা লংঘনেও রাজনীতিবিদরা এককভাবে দায়ী। রাতের আঁধার বা দিনের আলো সবসময় রাজনীতিবিদরা একেকজন জাঁদরেল অভিনেতার ভূমিকায় অবতীর্ণ। তারা বক্তৃতায় যা বলেন, কাগজে যা লেখেন সবই মেকি। বাস্তবে তারা এক ভিন্ন চরিত্রের নাম। তাদের চরিত্রের সবচেয়ে নিচু দিকগুলোর একটি হচ্ছে- তারা পরমতের প্রতি সর্বদা অসহিষ্ণু। যদি বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতা থাকতো তবে সমাজ ও রাষ্ট্রের চেহারা ভিন্ন হয়ে যেতো। যখন দেখি, শুধু বিরোধী রাজনীতি করার কারণে একজন সর্বজন সম্মানী ব্যক্তিকে হয়রনি করা হচ্ছে, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হচ্ছে, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে তখন ব্যথা-বেদনা ও লজ্জায় মাথাটা নিচু হয়ে যায়। রাজনীতিবিদরা যদি একটু হৃদয় দিয়ে খেয়াল করতেন এবং যাকে জেলে পাঠানো হলো তার বাড়িতে নিজে গিয়ে বা কারো মাধ্যমে গোপনে খবর নিতেন যে, সে পরিবারটির ছোটছোট ছেলে-মেয়েরা বাবার জন্য কীভাবে কাঁদছো! বাচ্চাদের তিন বেলা আহার জুটছে কি-না! তাদের স্কুলে যাওয়া কি বন্ধ হয়ে গেছে? সেই ভদ্রলোকের স্ত্রী’র পর্দার অন্তরালের চোখের পানি যদি রাজনীতিবিদরা একটু বোঝার চেষ্টা করতেন তাহলে তারা কখনও এই ধরনের মানবতা বিরোধী কাজ করতে পারতেন না। তাদের বুকটা কেঁপে কেঁপে ঘর্মাক্ত হয়ে যেতো। তাই নিজের স্বার্থে, পরিবার ও সমাজের স্বার্থে আত্মঘাতী এসব কাজ বন্ধ হওয়া উচিত।
মনে রাখতে হবে, দুনিয়ার যেসব দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক নিরাপত্তা অধিক তারাও আমাদের মতই মানুষ। তাদের শাসক শ্রেণিও মানুষ। রাজনীতিবিদরাও মানুষ। সুতরাং তারা পারছে আমরা কেন পারছি না? বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখার সময় এসেছে। আমেরিকার কথাই ধরা যাক। যেখানে রাজনৈতিক সংঘাত-সংঘর্ষ বিরল। সামাজিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক কোন প্রয়োজনে নাগরিকদেরকে রাজনীতিবিদদের কাছে ধরনা দিতে যেতে হয় না। যেমন, জায়গা কেনা, বাড়ি কেনা, ব্যাংক থেকে লোন নেওয়া, চাকরি-বাকরি পাওয়া ইত্যাদি। দলীয় রাজনৈতিক পরিচয় কেউ কোথাও বলে বেড়ায় না। দোকানে, রাস্তা-ঘাটে, চা স্টল বা কফি হাউজে কে কোন দলের তা কোন আলোচ্য বিষয় হয় না। এ নিয়ে ঝগড়া বা মারামারির কোন প্রশ্নই উঠে না। কিংবা দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে কোন অন্যায়, অনৈতিক ফায়দা হাসিল বা সুবিধা আদায়ের কোন ধান্ধা কেউ করে না।
এ সবকিছুই রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে হয়। শুধু ফ্যাক্টর হয় সময়। সময়ের ব্যবধানে প্রয়োজনীয় সমাধান যার যার সোস্যাল ‘সিকিউরিটি নম্বর’ এবং ‘ক্রেডিট স্কোরে’র ভিত্তিতে হয়ে যায়। দলীয় সংকীর্ণ স্বার্থে ক্যাডার বাহিনী ও পুলিশের ব্যবহার নেই। উটকো ও পাতি নেতা, দালাল ইত্যাদির খপ্পরে পড়ে সর্বশান্ত হওয়ার সুযোগ আমেরিকার সমাজে নেই। নাই রাজনৈতিক কোন হেরেজম্যান্ট। সেখানে মানুষের প্রতি মানুষের সম্মানবোধ অনেক উপরে। রাজনীতিবিদ ও নাগরিকগণ অনেক বিনয়ী, ধৈর্যশীল। কেউই তাৎক্ষণিক রি-অ্যাক্ট করেন না। দলগত দ্বন্দ্ব নাই। সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সেখানে এতটাই প্রকট।
আমাদের রাজনীতিবিদরা যদি সত্যিকারার্থেই মানুষ ও দেশের কল্যাণে কাজ করতে চান তবে তাদেরকে অবশ্যই পরমতের প্রতি সহিষ্ণু হতে হবে। মানবতার প্রতি দায়িত্বশীল হতে হবে। উদারতা ও বিনয় হোক রাজনীতিবিদদের চরিত্রের অন্যতম প্রধান ভূষণ।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম