আনোয়ার হোসেন। বছর দু’য়েক আগে বিয়ে করেছেন। তার স্ত্রী আমেনা বেগম আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। তাদের স্বপ্ন ছিল অনাগত সন্তানকে ঘিরে। ছিল প্রথম সন্তান আসার অপেক্ষা। কিন্তু আনোয়ার দেখে যেতে পারলেন না তার সন্তানের মুখ। আগুনের ঘটনায় নিভে যায় তার জীবনের প্রদীপ। তার স্ত্রী থাকেন গ্রামের বাড়ি ভোলাতে। দশ বছর ধরে তিনি গুলশানের একটি বাসায় বাবুর্চির কাজ করতেন। রোববার সন্ধ্যা নামার পরে হঠাৎ ওই ভবনটিতে ঘটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা।
বিজ্ঞাপন
বাড়তে থাকে আগুনের প্রকোপ। আগুন থেকে বাঁচতে ১২ তলা থেকে লাফ দেন তিনি। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রাত দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে এসে আনোয়ারের লাশ শনাক্ত করেন ছোটভাই জুলহাস। তিনি বলেন, গুলশানের ওই ভবনে এক্মি গ্রুপের পরিচালক ও আবাহনী ক্রিকেট একাডেমির পরিচালক ফাহিম সিনহার বাসায় বাবুর্চি হিসেবে কাজ করতেন আমার ভাই। ওই ভবনে অগ্নিকাণ্ডের সময় লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। পরে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। রাত আটটার সময় আমি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আগুন জ্বলছে। এ সময় তাকে না পেয়ে স্থানীয় কয়েকটি হাসপাতালে যাই। অনেক খোঁজাখুঁজির পর না পেয়ে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে তার খোঁজ মেলে। তখন সে আর বেঁচে ছিলো না। তখন আমার বাবা-মা’কে জানানো হয়। তিনি আরও বলেন, তাদের বাড়ি ভোলা জেলার দৌলতখান থানার দিদারুল্লা গ্রামে। পিতা মো. নূর ইসলাম। পাঁচভাই ও এক বোনের মধ্যে আনোয়ার ছিলেন তৃতীয়।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনের শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে আহত তিনজনের চিকিৎসা চলছে। তারা হলেন- শামা রহমান সিনহা (৩৮), মো. মুসা শিকদার (৩৩) ও মো. রওশন আলী (৩০)। রোববার রাত পৌনে ২টার দিকে তাদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনের সাততলার বেলকনি থেকে লাফিয়ে নিচের সুইমিংপুলে পড়েন ফাহিম সিনহার স্ত্রী শামা রহমান সিনহা।
মো. মুসা শিকদার ও মো. রওশন আলীকে নিয়ে আসা মো. আসাদ জানান, আহত দুইজনের মধ্যে মুসা শিকদার তাদের গাড়িচালক ও রওশন আলী পিয়নের কাজ করেন। অগ্নিকাণ্ডের সময় তারা বেলকনিতে ছিলেন। পরে সেখান থেকে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্নে ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসে।
ফাহিম সিনহার ব্যক্তিগত সহকারী মো. ইসমাইল হোসেন জানান, গুলশানে ওই ভবনটির ১২তলায় থাকেন ফাহিম, তার মা নাগিনা আফজাল সিনহা, স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে। স্বজনরা জানান, আগুন লাগার পর সায়মা তার ৩ সন্তান ও শাশুড়িকে লিফ্টে নিচে নামিয়ে দেন। লিফ্ট আবার ১২ তলায় উঠলে তিনি নামার চেষ্টা করেন। সে সময় বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ায় সপ্তম তলায় তিনি আটকা পড়েন। তখন লিফ্ট থেকে বের হয়ে ৭ তলার বেলকনির পাশে গিয়ে দাঁড়ান। আগুন বাড়তে থাকলে তিনি সেখান থেকে লাফ দিয়ে ভবনের সুইমিং পুলে পড়েন।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, গুলশানে অগ্নিকাণ্ডে আহতদের চিকিৎসায় ১৮ সদস্যর মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্নের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রায়হানা আওয়ালকে প্রধান করে আহতদের চিকিৎসার জন্য ১৮ সদস্যের বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এই বোর্ডে আমিও রয়েছি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরো সার্জারি, অর্থোপেডিক, জেনারেল সার্জারি ও থোরাসিক সার্জারির চিকিৎসকরাও রয়েছেন। তিনি বলেন, অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ সায়মা রহমান সিনহাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার ইনহালেশন বার্ন রয়েছে। শঙ্কামুক্ত বলা যাচ্ছে না। তবে অন্য দু’জন শঙ্কামুক্ত। তাদের মধ্যে একজনকে ছেড়ে দেয়া হবে।
সোর্স : মানবজমিন