দেশের ৯২ শতাংশ রেমিট্যান্স আসে বিশ্বের ১৪টি দেশ থেকে। আর এ ১৪টি দেশ থেকেই কমে গেছে রেমিট্যান্স প্রবাহ। আর দুই-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্সের অবদান মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি দেশ থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়ায় সামগ্রিক প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
রেমিট্যান্স প্রবাহের এ পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, পরপর দুই বছর করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও হুন্ডি তৎপরতার কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে গেছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড শ্লথ হওয়ায় তাদের শ্রমিকের চাহিদা কমে যায়। যে হারে শ্রমিক ফিরে আসে ওই হারে যায়নি। আর এর প্রভাবেই সামগ্রিক রেমিট্যান্স প্রবাহের অবনতি হয়েছে। রেমিট্যান্স প্রবাহের এ অব্যাহত ধসের পরিণতি সম্পর্কে বিশ্লেষকরা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির স্থবিরতার আভাস দিয়েছেন। এটা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করছেন। ইতোমধ্যেই গ্রাহকরা চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারছেন না। পণ্য আমদানির জন্য ব্যাংকগুলোর দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অনেক উদ্যোক্তা। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শুধু সরকারি অতি প্রয়োজনীয় কেনাকাটায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। এর প্রভাবে কমে গেছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত বছরে ডিসেম্বর শেষে যেখানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৬ বিলিয়ন ডলার, সেখানে বর্তমানে রিজার্ভ কমে নেমেছে ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। আর আইএমএফের হিসাবে তা ২৪ বিলিয়নের ঘরে নেমে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, আশঙ্কার বিষয় হলো, মধ্যপ্রাচ্য থেকে অব্যাহতভাবে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে যাওয়া। কেননা মধ্যপ্রাচ্য থেকেই দেশের দুই-তৃতীয়াংশ রেমিট্যান্স আসে। এখান থেকে কমে যাওয়ার অর্থ হলো সামগ্রিকভাবেই কমে যাওয়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশভিত্তিক রেমিট্যান্স প্রবাহের চিত্র বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, আর মধ্যপ্রাচ্যের ছয় দেশ থেকে গত অক্টোবর-ডিসেম্বর তিন মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। গত তিন মাসে সোদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, ওমান, বাহরাইন ও কুয়েত থেকে রেমিট্যান্স এসেছে ২৪০ কোটি ৯১ লাখ ডলার, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে এসেছিল প্রায় ২৫৫ কোটি ডলার।
এর মধ্যে তিন মাসে সৌদি আরব থেকে কমেছে ৮.৯০ শতাংশ, আরব আমিরাত থেকে কমেছে ৩০.৩৪ শতাংশ, কাতার থেকে কেমেছে ১.৪০ শতাংশ, ওমান থেকে কেমেছে ১৫.৯১ শতাংশ, বাহরাইন থেকে কমেছে ১৫.৯৪ শতাংশ এবং কুয়েত থেকে কমেছে ১০.৮৫ শতাংশ। এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তিন থেকে রেমিট্যান্স কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। এর মধ্যে ইংল্যান্ড থেকে কমেছে ২০.৮৭ শতাংশ, জার্মানি থেকে কমেছে ৬.৪৮ শতাংশ এবং ইতালি থেকে কমেছে ২১.৯৭ শতাংশ।
এ দিকে এশিয়া-প্যাসিফিক দেশগুলোর মধ্যে চারটি দেশ থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসত। আলোচ্য তিন মাসে এ চার দেশ থেকেই রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। গত তিন মাসে এ চার দেশ থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৭ শতাংশ ঋণাত্মক হয়েছে। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়া থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ২৮.৭৭ শতাংশ, জাপান থেকে কমেছে ২৬.৬৪ শতাংশ, মালয়েশিয়া থেকে কেমেছে ৩২.৬৭ শতাংশ এবং সিঙ্গাপুর থেকে কমেছে ৪.৭৪ শতাংশ। অপর দিকে একক দেশ হিসেবে দেশের ২০ শতাংশ রেমিট্যান্স আসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। তিন মাসে এ যুক্তরাষ্ট্র থেকেও রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৩.২৯ শতাংশ।
সোর্স : নয়া দিগন্ত