কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের আমলাতন্ত্রকে ঘিরে সংঘটিত একটি দুর্ঘটনা অনেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে টার্মিনেশন নোটিশ দেয়ার অপরাধে একজন সিনিয়ার কর্মকর্তা চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত হয়েছিলেন। এর আগে খবরটা সচিবালয়সহ সরকারি দফতরসমূহে ছড়িয়ে পড়লে সর্বত্র এক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয় এবং তার এতই অবনতি হয়েছিল যে, সরকারের একজন সিনিয়র মন্ত্রীকে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে এসে সিদ্ধান্তটি অস্বীকার করতে হয়েছে। বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের শক্তি এখান থেকেই অনুমান করা চলে।
উল্লেখ্য যে, আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক এটিএম শামসুল হকের নেতৃত্বে গঠিত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ২০০০ সালে পেশকৃত তার রিপোর্টে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও এজেন্সির প্রায় দেড় লক্ষাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাঁটাই-এর সুপারিশ করেছিল।
বিগত কয়েক দশক ধরেই সিভিল সার্ভিসের সংস্কার বিশ্বব্যাপী আলোচনার একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু হয়ে আসছে। কোনো কোনো দেশের প্রশাসনিক সংস্কার দুনিয়ার বিভিন্ন দেশের জনপ্রশাসন ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবও সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। বিগত শতাব্দীতে আমলাতন্ত্রের পরিসরও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশে^র সবচেয়ে পুরাতন আমলাতান্ত্রিক দেশ বৃটেনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সংখ্যা প্রায় ৭.৫ লাখে উন্নীত হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তিনটি পর্যায়ে ১৮০৮ সালে মোট কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১২৬ জন, ১৯৭০ সালে তা ১২ লাখে উন্নীত হয়। ভারতে ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে সরকারি কর্মচারীদের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৩৯.৪৫ লাখ ও ৪০.১২ লাখ।
উল্লেখ্য যে, বিশ^ায়ন, অর্থনৈতিক উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও আমলাতন্ত্রের আকার হ্রাসকরণের সরকারি প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও প্রায় সব দেশেই এর অবয়ব সম্প্রসারিত হতে দেখা যায়। ফলে বেতন-ভাতা ও ভ্রমণ ব্যয় বাবত প্রতিবছর সরকারি ব্যয়ও বৃদ্ধি পায়। সাধারণ মানুষ এদের কাছ থেকে কি সেবা পাচ্ছেন সেটা গৌণ ব্যাপার। এ ব্যাপারে প্রখ্যাত বৃটিশ রাজনীতিবিদ স্যার হামফ্রে এ্যাপের্লাবর একটি মন্তব্য (ইয়েছ মিনিস্টার অনুষ্ঠানে প্রদত্ত) স্মর্তব্য। তিনি বলেছিলেন, The civil service does not make profit or loss. Ergo we measure success by the size of our staff and budget “অর্থাৎ বেসরকারি প্রশাসন লাভও করে না, ক্ষতিও করে না। অতএব আমরা আমাদের কর্মচারীদের বহর ও বাজেটের আকার দিয়ে এর সাফল্য পরিমাপ করি।”
আগেই বলেছি, বিশে^র প্রাচীনতম আমলাতন্ত্র হচ্ছে বৃটিশ আমলাতন্ত্র যার কিছু অংশ ঔপনিবেশিক ঐতিহ্য হিসেবে বাংলাদেশসহ ভারত উপমহাদেশের দেশগুলোতে তারা রেখে গিয়েছে। ১৯৮৭ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর খোদ আমলাতান্ত্রিক বৃটেনেও জনপ্রশাসনে নতুন দিকনির্দেশনার সূচনা হয়। এর পরের বছরেই সরকার দেশের সিভিল সার্ভিসের বৃহদাংশ “বাস্তবায়ন এজেন্সিগুলোর’ ওপর ন্যস্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। স্থির হয় যে ক্ষুদ্র সমধর্মী নীতি নির্ধারণী বিভাগসমূহ তাদের কাজকর্ম তদারক করবে ।
উল্লেখ্য যে, বৃটেনের বাস্তবায়ন এজেন্সিগুলো হচ্ছে আমাদের দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সেবা প্রদানকারী তথা সার্ভিস ডেলিভারী অর্গানসমূহের ন্যায় প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এই দেশে সরকারি কর্মচারীদের শতকরা ৭৫ ভাগ বাস্তবায়ন এজেন্সিগুলোতে কাজ করেন। বৃটেনে জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রধান কর্মসূচি ছিল সরকারি কর্মচারীদের সংখ্যা হ্রাসকরণ। এর ফলে এ দেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংখ্যা ৭.৫ লাখ থেকে ৫.০ লাখে নেমে আসে। তিনটি লক্ষ্যকে সামনে রেখে একাজটি সম্পন্ন করা হয়; এগুলো হচ্ছে- বেসরকারীকরণ, চুক্তিভিত্তিক কাজ প্রদান অথবা বাস্তবায়ন, এজেন্সিগুলোর নিকট কাজকর্ম হস্তান্তরকরণ। আগেভাগে “বিকল্প পর্যালোচনাই” ছিল তাদের অগ্রাধিকারমূলক কৌশল। অর্থাৎ নতুন কোনো এজেন্সি সৃষ্টির পূর্বে বেসরকারিকরণ অথবা চুক্তিভিত্তিক কাজ প্রদানের বিষয়টিকে বৃটিশ সরকার প্রধান্য দিয়েছে। সরকারের দৃষ্টিতে কোনো বাস্তবায়ন এজেন্সিকে স্থায়ী কাঠামো হিসেবে বিবেচনা করা যাবে না, প্রয়োজনবোধে একে বেসরকারি হাতে ছেড়ে দেয়া যাবে। বস্তুত ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত বৃটেনে নয়টি বাস্তবায়ন এজেন্সিকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয় এবং এতে ৫২০০ কর্মচারী সরকারি মর্যাদা হারায়। ১৯৯১ সালে বিশে^র সবচেয়ে পুরাতন নিয়োগকারী সংস্থা সিভিল সার্ভিস কমিশনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয় এবং এর মাধ্যমে সরকারি নিয়োগকে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়। এই কমিশনের দায়িত্ব এখন রিক্রুটমেন্ট এন্ড এসেসমেন্ট সার্ভিসেস নামক একটি সংস্থার উপর ন্যস্ত করা হয়েছে এবং বিভাগ ও এজেন্সিসমূহ সরাসরি কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগের দায়িত্ব পালন করে।
নতুন ব্যবস্থায় হুইটলী প্রবর্তিত পদ্ধতির অবমূল্যায়ন করে নির্ধারিত সীমার মধ্যে চাকরির শর্তাবলী ও বেতন নির্ধারণের দায়িত্ব বিভাগ ও এজেন্সিগুলোকে অর্পণ করা হয়েছে। এখন বৃটেনে বেতন ও সুযোগ-সুবিধাকে কাজের সাথে সম্পৃক্ত করে দেয়া হয়েছে। এবং কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রত্যেকের জন্য কাজের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। লক্ষ্য অর্জন ও কার্য সম্পাদনের ভিত্তিতে কর্মচারীরা বেতন পান।
১৯৯৫ সালে গ্রেট বৃটেনে একটি নতুন সিনিয়র সার্ভিস ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। এই ব্যবস্থার অধীনে সিনিয়র কর্মকর্তাদের যেমন সচিব) চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হয়। এতে সচিবদের মর্যাদার প্রকৃতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে চুক্তিভিত্তিক হওয়াতে কার্য সম্পাদনের মান বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের শ্রমিক দল সরকারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছেÑ ক্রমবর্ধমান হারে সরকার পরিচালনায় “থিংক ট্যাংক” এর ব্যবহার। ব্লেয়ার উন্নয়নের একটি তৃতীয় ধারা সৃষ্টি করতে চেষ্টা করেছেন। এই ধারার অন্তর্নিহিত প্রশাসনিক, ব্যবস্থায় ঐক্যের একটি সুর ছিল। বৃটিশ জনপ্রশাসনে বর্তমানে যে সংস্কৃতিকে, উৎসাহ প্রদান করা হচ্ছে তা হচ্ছে কর্মপ্রচেষ্টা ও কর্মউদ্যোগ; নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে এর উপযোগী করার জন্য বিস্তারিত বিধি-বিধানও এক্ষেত্রে প্রণীত হয়েছে।
অনুরূপভাবে জনপ্রশাসনকে দক্ষ, স্বচ্ছ, ব্যয়সাশ্রয়ী ও জবাবদিহিমূলক করে গড়ে তোলার ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ লক্ষণীয়। ১৯৯৩ সালে মার্কিন সরকার প্রশাসনিক সংস্কারের লক্ষ্যে “Government Performance and Results Act” নামে একটি নতুন আইন পাস করেছে। এই আইনটি হচ্ছে আলগোর প্রণীত, ক্লিনটন প্রশাসনের National Performance Review প্রতিবেদনের ধারাবাহিকতা। কাজের লক্ষ্য নির্ধারণ ও তা পরিমাপের মাধ্যমে ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির ফলপ্রসূতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা এই আইনের প্রধান লক্ষ্য। কৌশলগত পরিকল্পনা, কাজকর্মের মূল্যায়ন ও পরিমাপের মাধ্যমে সেবার মান বৃদ্ধি ও জনগণের সন্তুষ্টি নিশ্চিতকরণের জন্য এই আইন ফেডারেল এজেন্সিগুলোকে কর্মসূচি প্রণয়ন ও তার ফলাফল অনুসরণ ও মূল্যায়নের দায়িত্ব অর্পণ করেছে। সরকারের উপর মানুষের আস্থা বৃদ্ধি ছাড়াও আইনটি বিভিন্ন উদ্দেশ্য সাধনে সরকারকে সাহায্য করছে।
ভারতবর্ষের আমলাতন্ত্র সম্পর্কে মিশ্র ধারণা বিদ্যমান রয়েছে। কেউ কেউ এর মধ্যে সমাধানের তুলনায় সমস্যাই বেশি দেখতে পান। একদিকে তাদের সংখ্যা অনেক বেশি, অন্যদিকে তারা বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাবত ট্যাক্সদাতাদের কাছ থেকে যে অর্থ গ্রহণ করেন প্রতিদানে তার সমপরিমাণ সেবা প্রদান করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তাদের কাজের পদ্ধতি জটিল, তারা অদক্ষ; তাদের দুর্নীতি এতই ব্যাপক যে, তা সার্বজনীনতা প্রতিষ্ঠার হুমকি সৃষ্টি করেছে। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত ভারতের পঞ্চম বেতন কমিশনের রিপোর্টে এহ অভিযোগশুলো করা হয়েছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, একটি বেতন কমিশনের কাজ শুধুু সরকারি কর্মচারীদের বেতন স্কেল প্রদানের সুপারিশ প্রদান করাই নয়, এই কমিশন প্রশাসনিক সংস্কারের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশও পেশ করে থাকে। আমলাতন্ত্রের অবয়ব হ্রাস করা ভারতীয় বেতন কমিশনের অন্যতম সুপারিশ ছিল।
কমিশনের রিপোর্র্ট ৩.৫ লাখ শূন্য পদকে সরাসরি বিলুপ্ত ঘোষণা করার জন্য সরকারকে পরামর্শ দেয়া হয়। দ্বিতীয়ত জুনিয়র কর্মচারীদের নতুন নিয়োগ স্থগিত এবং নির্বাহী কর্মকর্তাদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস করার সুপারিশ করা হয়। কমিশনের তৃতীয় সুপারিশ ছিল পর্যায়ক্রমে ১০ বছরের মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস করা। এ জন্য অদক্ষ ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক অবসর, স্বাভাবিক অবসর, সোনালি করমর্দন ও মৃত্যুজনিত কারণে শূন্যতার সৃষ্টি হলে সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগদান থেকে বিরত থাকার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জনকে কৌশল হিসেবে গ্রহণের জন্য কমিশনের রিপোর্টে সুপারিশ করা হয়েছে। ভারত সরকার এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে। তবে এক্ষেত্রে পাশাপাশি তারা জনপ্রিয়তা হারানোর ভয়েও ভীত বলে বিশেষজ্ঞমহল অনুমান করছেন।
ভারত, পাকিস্তান কিংবা বৃটিশ কলোনিভুক্ত সাবেক দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে আমলাতন্ত্র বা সিভিল সার্ভিসের প্রসার ও ব্যাপ্তি দ্রুত ও ব্যাপক। তাদের সেবার মানও অনেক নীচু। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুযায়ী আমাদের আমলাতন্ত্রের ভিত্তি হিসেবে পরিচিত ১ম শ্রেণির কর্মকর্তারাই হচ্ছেন সবচেয়ে বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত। অর্থাৎ দেশের মানুষ তাদের কাছ থেকে সেবার পরিবর্তে শোষণের হাতিয়ারই হন বেশি।
১৯৭২ সালে, স্বাধীনতার অব্যবহিত পর আমাদের আমলাতন্ত্রের আকার ছিল ৪৫৪৪৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়ে গঠিত। ১৯৮২ সালে তা ৭৭৯০০০, ১৯৯২ সালে ৯৪৬৭৪৯ এবং ১৯৯৮ সালে ১০৪৫৪৪৭ জনে উন্নীত হয়। বর্তমানে আমাদের আমলাতন্ত্রের সদস্য সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ লাখ। সরকারি আধাসরকারি ও কর্পোরেশনগুলো ধরলে এ সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ হবে। আমাদের মোট, জাতীয় বাজেটের প্রায় ১৫% এদের পেছনে ব্যয় হয়। এরা কি কাজ করেন জনগণ তা জানেন না। তবে তাদের অধিকাংশ যে ঘুষ ছাড়া কাজ করেন না এবং ট্যাক্সদাতাদের জুলুম করেন এটা সর্বজনবিদিত। একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক এবং একে সেবামুখী ও অধিকতর কার্যকর ও ব্যয়সাশ্রয়ী করার জন্য সম্ভবত পাকিস্তান আমল থেকেই (যেমন কর্নেলিয়াস রিপোর্ট) প্রচেষ্টা চলে আসছিল। তারই ধারাবাহিকতায় জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন কিছু কাজ করেছে এবং জনবল যৌক্তিকীকরণের জন্য সুপারিশও পেশ করেছে। এই সুপারিশসমূহের অংশবিশেষ বিভিন্ন পত্রপত্রিকার পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। এই সুপারিশের সবগুলো যে মেনে নেয়ার মত তা নয়। তবে জনগণের দুর্দশা লাঘব এবং সরকারি সেবা তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছিয়ে দেয়ার ব্যবস্থাকে সহজ ও ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ হিসেবে আমলাতন্ত্রের কাঠামো পুনর্গঠন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে মনে হয়। এক্ষেত্রে বৃটেনের ব্লেয়ার সরকার সূচিত কৃতিত্বনির্ভর পদ্ধতির প্রচলন এবং সরকারি দফতরগুলোকে সংকোচন করে বাস্তবায়ন এজেন্সিগুলোকে শক্তিশালী করার পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। এতে বিপুলসংখ্যক লোককে চাকরিচ্যুত করার ফলে সৃষ্ট ঝুঁকি একদিকে এড়ানো যাবে, অন্যদিকে সেবার মানও বৃদ্ধি পেতে পারে। এটাই সকলের কাম্য হওয়া উচিত।
এখন আমলাতন্ত্রের বর্তমান হাল হাকিকত সম্পর্কে কিছু বলি। আমলাতন্ত্র এখন রাজনীতিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বাংলাদেশে আমলাতন্ত্রের রাজনীতিকীকরণের জন্য নি¤েœাক্ত ব্যবস্থাসমূহ গ্রহণ করা হয়:
১। রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ
২। রাজনৈতিক বিবেচনায় পদোন্নতি
৩। রাজনৈতিক বিবেচনায় বিরোধীদলীয় গণ্য করে কর্মচারী কর্মকর্তাদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ, পদায়ন ও পদোন্নতি থেকে তাদের বঞ্চিতকরণ। ওএসডিকরণ এবং পদচ্যুতি ও এর অন্তর্ভুক্ত। বলাবাহুল্য উপরোক্ত তিনটি ব্যবস্থার মধ্যে শুধু একটি ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদরা আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেন এবং তা হচ্ছে পদায়ন। নির্বাচিত সরকার সমমর্যাদা সম্পন্ন পদে যে কোনো কর্মকর্তা কর্মচারীদের পদায়ন করতে পারেন। বাকী তিনটি ক্ষেত্রে সরকার তার ইচ্ছামতো অথবা রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। এসব ক্ষেত্রে রাজনীতিকরণ সংবিধান পরিপন্থী এবং বেআইনি। কিন্তু তথাপিও এই বেআইনি কাজ সরকার করছে এবং এর ফলে আমলাতন্ত্রে অস্থিরতা বিরাজ করছে।
রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পদোন্নতি দিয়ে এমন অবস্থায় সৃষ্টি করা হয়েছে যে, এখন কর্মকর্তাদের বসার স্থানও নেই। পদোন্নতি দেয়ার জন্য কাজ ছাড়া অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করা হচ্ছে তাদের সন্তুষ্ট রেখে সরকার বার বার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য শুধু প্রমোশন নয়, তাদের বেতন ভাতাও পাঁচ গুণের বেশি বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমলারা এখন মানুষের খাদেম নয়, সরকারের সেবাদাসে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় আমূল সংস্কার প্রয়োজন।
সোর্স : দৈনিক সংগ্রাম