বৈশ্বিক মন্দার নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলা করে বাংলাদেশসহ এশিয়ার অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি এগোচ্ছে অর্থনীতি।
এতে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে। তবে বাংলাদেশসহ স্বল্প আয়ের অনেক দেশে মন্দার নেতিবাচক প্রভাব আরও দুই বছর থাকবে। এর প্রভাবে পণ্যমূল্য বাড়বে, বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে।
কর্মসংস্থানের গতি পুনরুদ্ধার হতে আরও সময় লাগবে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের নেতিবাচক প্রভাব আরও কিছু সময় মোকাবিলা করতে হবে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী যে মন্দার সৃষ্টি হয়েছিল চলতি বছর তা আরও বাড়বে বলে অক্টোবরে পূর্বাভাস দিয়েছিল আইএমএফ। এমনকি চলতি অর্থবছরের শুরুতেও বলা হয়েছিল এ মন্দার প্রকোপ আরও বাড়বে। তবে এখন আইএমএফ বলছে, মন্দার প্রভাব মোকাবিলা করে বিশ্ব অর্থনীতি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। এশিয়ার মধ্যে চীন ও ভারতের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিও দ্রুত ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। ফলে চলতি বছর যেভাবে মন্দার আঘাত আসার কথা সেভাবে আসবে না। তবে বিশ্বের কোনো কোনো দেশে খাদ্য সংকট প্রকট হবে। ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রার মান আরও কমবে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আর বেশি আগ্রাসী না হলে এবং এ যুদ্ধ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে ছড়িয়ে না পড়লে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশসহ এশিয়ার অর্থনীতি দ্রুত পুনরুদ্ধার হচ্ছে। এশিয়ার বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে চীন, ভারত দ্রুত এগোচ্ছে। সৌদি আরব, থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতে মন্দার বড় নেতিবাচক প্রভাব না পড়লেও এসব দেশের অর্থনীতি এগোচ্ছে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মন্দার কারণে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি কমে যাবে। এ হার ৬ শতাংশে সীমিত থাকতে পারে। আগামী অর্থবছরে তা সাড়ে ৬ শতাংশ হতে পারে। তবে আইএমএফ’র বাংলাদেশ বিষয়ক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ৫ শতাংশ।
বিশ্বব্যাংক এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে হতে পারে ৫ দশমিক ২ শতাংশ। তবে সরকার চলতি অর্থবছরে সাড়ে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
রেমিট্যান্স কমে যাওয়া ও আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণে এশিয়ার অনেক দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। তবে বাংলাদেশের রিজার্ভ কমে যাওয়ার পর এখন আবার সামান্য বাড়তে শুরু করেছে। তবে মার্চে রিজার্ভ আরও কমে যেতে পারে। এরপর থেকে বাড়বে। কেননা এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ পাবে বাংলাদেশ। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স বাড়াতে ও আমদানি কমাতে দেশটি বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে আমদানি কমে রিজার্ভের ওপর চাপের মাত্রা কমিয়েছে। একই সঙ্গে রেমিট্যান্স বেড়ে রিজার্ভ ধরে রাখতে সহায়তা করছে।
তবে আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, মন্দার নেতিবাচক প্রভাব আগামী দুই বছর বাংলাদেশসহ স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে থাকবে। কারণ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়িয়ে নিরাপদ মাত্রায় নিতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। এর আগে আমদানি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে না। ফলে দেশের ভেতরে পণ্যের সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে না। একই দামও স্থিতিশীল থাকবে না। এছাড়া ডলারের বিপরীতে টাকার মান যেভাবে কমেছে তার নেতিবাচক প্রভাবও অর্থনীতিতে দুই বছর থাকবে। এসব কারণে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী খাদ্যের সরবরাহ বেড়েছে। একই সঙ্গে কমেছে দাম। এতে খাদ্য আমদানি-রপ্তানিতে বাধা কিছুটা কাটবে। তবে চলতি বছরে খাদ্য উৎপাদন কম হওয়ার কারণে বৈশ্বিকভাবে অনেক দেশকে খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে হবে।
ইতোমধ্যে জ্বালানি তেলের দাম কমছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে চীনের অর্থনীতিতে। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস এবং ভিয়েতনাম তাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ভিত্তির দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সোর্স : যুগান্তর